ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

তারকাদের মধ্যেও সাজ সাজ রব

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৭ নভেম্বর ২০১৮

তারকাদের মধ্যেও সাজ সাজ রব

গৌতম পাণ্ডে ॥ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাজ সাজ রব দেশব্যাপী। নির্বাচনের হাওয়া বইছে সর্বত্র। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষের পাশাপাশি মিডিয়ার তারকাদের গায়েও লেগেছে এই হাওয়া। অনেকে নিজের নির্বাচনী এলাকায় ইতোমধ্যে প্রচারণাও শুরু করে দিয়েছেন। নির্বাচন করা একটি দেশের মানুষের নাগরিক অধিকার। সেই অধিকারের বলেই এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন দলের মনোনয়নে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন বেশ কয়েকজন তারকা। আগামী নির্বাচনে প্রার্থিতা ও নির্বাচনী কার্যকলাপে নিজেকে কোথায় দেখতে চান তা নিয়েই জনকণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেন কয়েকজন তারকা। আসাদুজ্জামান নূর ॥ জনপ্রিয় অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর আওয়ামী লীগের ব্যানারে নীলফামারী-২ থেকে এমপি হয়েছেন। বর্তমানে তিনি সংস্কৃতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নূর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও ছিলেন। দল ও নেত্রীকে ভালবেসে এবারের নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হতে চান। দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে চান এ অভিনেতা। ফারুক ॥ এক সময়ের সাড়া জাগানো চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। বাংলাদেশে সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র আন্দোলনের অগ্রপথিকের ভূমিকা পালন করে চলেছেন। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ-গাজীপুর মহানগর-সদর আংশিক) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। আসছে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি ৫৭টি বছর ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছি। নেত্রী যদি আমাকে উপযুক্ত মনে করে মনোনয়ন দেন তবে আমি নির্বাচন করব। দেশের জনগণকে আমার এখনও অনেক কিছু দেয়ার বাকি আছে। নির্বাচনে জয়ী হয়ে দেশ ও দশের জন্য কাজ করব। ইতোপূর্বে আমার এলাকায় অনেকে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েও শেষ পর্যন্ত তা রক্ষা করেননি। আমার এলাকায় বঙ্গবন্ধুর নামে একটি বাজার আছে। বাজারের অনেকাংশ নদীতে বিলুপ্ত। এটাকে বড় একটি বাজারে পরিণত করতে চাই। এ ছাড়া রাস্তা-ঘাট, ব্রিজসহ অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে। কবরী ॥ এক সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা সারাহ বেগম কবরী ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের হয়ে নারায়ণগঞ্জ ৪ আসন থেকে এমপি হয়েছিলেন। এবারও নির্বাচনে অংশ নিতে চান তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একজন সাধারণ নাগরিক, সাধারণ মানুষ, একজন অভিনেত্রী ও শিল্পী হিসেবে মানবতা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। দেশের জন্য লড়াই করতে পেরেছিলাম বলে আমি গর্ববোধ করি। তবে আমি যেহেতু একজন মুক্তিযোদ্ধা। যে সাহসের সঙ্গে লড়াকু সৈনিক হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছিলাম যুদ্ধক্ষেত্রে তার তুলনায় আমার বর্তমান লড়াই তো তেমন কিছু না। তাই এ লড়াইয়েও জয়ী হব সেই প্রত্যাশা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। এবারও আওয়ামী লীগ থেকে আমি মনোনয়ন চাইব। আমাদের নেত্রী যদি আমাকে আবারও সুযোগ দেন তবে আমি সেই সুযোগ কাজে লাগাব। কিন্তু নেত্রী আমাকে যদি মনোনয়ন না দেন তবে দলের পক্ষে কাজ করব। কারণ আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। মানুষের সেবা করাই আমাদের লক্ষ্য। তারানা হালিম ॥ এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী তারানা হালিম বর্তমানে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি। পাশাপাশি বর্তমানে তিনি তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৬ থেকে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের জন্য বহু আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। আসছে নির্বাচনে এই নাট্যাভিনেত্রী দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন। তিনি বলেন, আশা করছি নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন। তবে আমি আবারও মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই। মমতাজ ॥ আওয়ামী লীগের ব্যানারে মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মমতাজ। এর আগেও তিনি সংরক্ষিত মহিলা আসনে এমপি ছিলেন। এবারও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান তিনি। বর্তমানে এলাকাতে নির্বাচনী প্রচারণা নিয়েও ব্যস্ত রয়েছেন। তিনি বলেন, দল যদি মনোনয়ন দেয় এবারও এলাকার মানুষের সেবা করার জন্য নির্বাচনে অংশ নেব। তবে দল যে সিদ্ধান্ত নেবে আমি সেটা মেনে নিতে প্রস্তুত আছি। শাকিল খান ॥ ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ, পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় এক সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাকিল খান। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট-৩ আসনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছেন তিনি। নিজের এলাকায় ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণাও শুরু করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আমি। এক সময়ে ধারাবাহিকভাবে সিনেমায় অভিনয় করেছি। এখন অভিনয় না করলেও মিডিয়ার বাইরের কেউ আমি নই। এক সময়ে এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে প্রত্যেকের। মানুষের জন্য কিছু করে যেতে চাই। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যেতে চাই। আমার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, যেন নির্বাচনী কাজ চালিয়ে যাই। আশা করছি তিনি আমাকে মনোনয়ন দেবেন। আমার এলাকা উন্নয়নের ক্ষেত্রে খুবই অবহেলিত। আমি এর পরিবর্তন ঘটাতে চাই। ইতোমধ্যে শিক্ষিত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান, সুন্দরবন এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র, মোংলা নদীতে ব্রিজ, ভূমিহীনদের বসবাসের স্থান নির্ধারণসহ বেশ কিছু কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। সোহেল রানা ॥ এক সময়ের তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা চিত্রনায়ক সোহেল রানা (মাসুদ পারভেজ)। বর্তমানে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনি। তার রাজনৈতিক দর্শন হচ্ছে, দলের প্রধানের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হওয়া। সে হিসেবেই তিনি কাজ করেন। এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা আছে। তবে পার্টির প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তই হচ্ছে সবকিছু। তিনি আমাকে বলেছেন এবার নির্বাচনে আমাকে প্রার্থীর মনোনয়ন দেবেন। অরুণা বিশ্বাস ॥ জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা অরুণা বিশ্বাস। এখনও ছোট ও বড় পর্দায় নিরলস অভিনয় করে চলেছেন। আজীবন আওয়ামী লীগ সমর্থিত একজন কর্মী। তিনি যথারীতি নিজের নির্বাচনী এলাকা মানিকগঞ্জ-১ (দৌলতপুর-ঘিওর-শিবালয়) এ আসা-যাওয়া করেন। এবার আওয়ামী লীগ দলনেত্রীর কাছে মনোনয়ন চাইবেন বলেও জানিয়েছেন। যদি তাকে ছাড়া অন্য কাউকে মনোনয়ন দেয়া হয় তবে তিনি মনোনীতের পক্ষে নৌকা মার্কাকে জয়ী করতে কাজ করে যাবেন। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে এ অভিনেত্রী জনকণ্ঠকে বলেন, এলাকায় যখন যাই, তখন দেখি মানুষ আমাকে কতটা ভালবাসেন। মানুষের সেই ভালবাসার প্রতিদান দিতেই নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাই। তাদের সেবা করতে চাই। আমি দেখেছি সাধারণ মানুষ আমাকে চায়। আমার ইচ্ছা আমার এলাকায় গৃহহীন থাকবে না। সত্যিকার অর্থে নেত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন, মনে প্রাণে এলাকার উন্নয়নে কাজ করব। রোকেয়া প্রাচী ॥ অনেক আগে থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কয়েকটি অঙ্গ-সংগঠনের বিশেষ দায়িত্বও পালন করছেন তিনি। আগামী নির্বাচনে ফেনী-৩ (সোনাগাজী-দাগনভূঞা) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশ ও দশের সেবা করতে আমি প্রস্তুত। নেত্রীর সঙ্গে আছি। কোনো কারণে যদি আমাকে মনোনয়ন না দেয়া হয় তবে নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষে কাজ করে নৌকাকে জয়যুক্ত করব। এটিএম শামসুজ্জামান ॥ আওয়ামী লীগ সমর্থিত একজন কর্মী জনপ্রিয় অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তাকে নিয়মিত দেখা যায়। তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগ ও নেত্রী শেখ হাসিনাকে ভালবাসি। নির্বাচন করার আমার ইচ্ছা আছে। তবে নেত্রী যদি চান আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। আর না চাইলে আমি আওয়ামী লীগের পক্ষে আমার নির্বাচনী আসন থেকে যিনি মনোনীত হবেন তার পক্ষে কাজ করব। কেন নির্বাচনে অংশ নিতে চান এমন প্রশ্নের উত্তরে এ অভিনেতা বলেন, অভিনয় করে আমি মানুষের ভালবাসা অনেক পেয়েছি। এবার তাদের একেবারে পাশে থেকে কিছু দিতে চাই। তাদের সেবা করতে চাই। এ কারণেই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছি। শমী কায়সার ॥ এবার জাতীয় নির্বাচনে ফেনী-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী নাট্যাভিনেত্রী শমী কায়সার। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে নিজের ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে মানুষ হয়েছি। সেই আদর্শ বুকে নিয়েই আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি অনেক আগে থেকেই। এবার মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। সেজন্য আওয়ামী লীগের হয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বেবী নাজনীন ॥ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী বেবী নাজনীন। বর্তমানে দলটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহসম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। জন্মস্থান নীলফামারীর-৪ আসনের (সৈয়দপুর এবং কিশোরীগঞ্জ) তার নির্বাচনী এলাকা। কেন্দ্রীয় রাজানীতির পাশাপাশি কয়েক বছর আগেই এলাকায় জনসংযোগ শুরু করেন তিনি। নির্বাচনে অংশ নেয়া এবং মনোনয়ন পাওয়া প্রসঙ্গে বেবী নাজনীন বলেন, আপাতত নির্বাচন এবং মনোনয়ন নিয়ে ভাবছি না। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের মামলায় কারাগারে আছেন আমাদের চেয়ারপার্সন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বর্তমানে আমরা তার মুক্তির বাইরে অন্য কিছু চিন্তা করছি না। তবে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির থেকে যে নির্দেশনা আসবে সেই মোতাবেক কাজ করব। কনকচাঁপা ॥ জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা বিএনপির পক্ষে সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে দলের শীর্ষ মহল থেকে জানা গেছে। নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির বাইরে অন্য কিছু চিন্তা করছি না। দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হলে আমি নির্বাচনে অংশ নেব। মানুষের সেবা করতে চাই। তাই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। এর মধ্যে কনকচাঁপা নিজ এলাকা ছাড়াও মফস্বলের বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত আছেন। মনির খান ॥ বিএনপির প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত সঙ্গীতশিল্পী মনির খান। বর্তমানে তিনি দলটির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনিও অংশ নিতে আগ্রহী। নিজের নির্বাচনী এলাকা ঝিনাইদহ-৩ আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নিয়মিত নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির বাইরে অন্য কিছু চিন্তা করছি না। আমি নেত্রীর দেয়া দায়িত্বে বিশ্বাসী। এ ছাড়া আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী খালিদ, এসডি রুবেল, চিত্রনায়িকা শাবানারও অংশগ্রহণের কথা শোনা যাচ্ছে।
×