ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধান নির্বাচন কমিশনার

তফসিল পেছানোর সুযোগ নেই

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৭ নভেম্বর ২০১৮

তফসিল পেছানোর সুযোগ নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঐক্যফ্রন্ট দাবি করলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ পেছাবে না নির্বাচন কমিশন। তবে রাজনৈতিক গুলো দল সম্মত হলে ভোটের তারিখ দু’একদিন পেছানো যেতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। তিনি বলেন, সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচন পেছানোর সুযোগ নেই। ফলে তফসিলও পেছানোর উপায় নেই। ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তার বাইরে যাওয়া যাবে না। অবশ্য সব দল চাইলে সংবিধানের নির্ধারিত সময়ের মধ্য থেকে ভোটের সময়সূচী কয়েকদিন পেছানোর কথা কমিশন ভাবতে পারে। মঙ্গলবার সকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) ভবনে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার সংক্রান্ত প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। গত রবিবার কমিশনের বৈঠকে তফসিল ঘোষণার এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গতবারের মতো এবারও জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া টেলিভিশন ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই তফসিল ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নবগঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে তফসিলের ঘোষণার পিছিয়ে দিতে কমিশনে দুই দফা আবেদন জানানো হয়েছে। গত ৩ নবেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে পাঠনো ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে তফসিল ঘোষণা পিছিয়ে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এরপর গত সোমবার ঐক্যফ্রন্টের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধান কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে আবারও তফসিল ঘোষণা পিছিয়ে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। বৈঠক শেষে আ স ম আব্দুর রব সাংবাদিকদের বলেন, সংলাপের ফল না জেনে তফসিল ঘোষণা থেকে বিরত থাকার আহ্বান কমিশনকে জানানো হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী গত ৩১ অক্টোবর থেকে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। আগামী ২৮ জানুয়ারি মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা কমিশনের রয়েছে। ইতোমধ্যে কমিশন থেকে নির্বাচনে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বাকি রয়েছে তফসিল ঘোষণা যা আগামীকাল ঘোষণা করা হচ্ছে। তবে ঐক্যফ্রন্টের এই আহ্বানের প্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের কাছে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানান। বলেন, তফসিল পিছিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে কমিশন সংবিধানের বাইরে যেতে পারব না। এ কারণে তফসিল পেছানোর উপায় নেই। তবে একক কোন রাজনৈতিক নয়, দেশের সব রাজনৈতিক দল যদি বলে তাহলে নির্বাচন পেছানো যেতে পারে। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে তফসিল এবং ভোট পেছানোর সমস্যার কথার তুলে ধরেন। বলেন জানুয়ারি মাস ডিসটার্ব মাস হিসেবে চিহ্নিত। এই মাসেই টঙ্গিতে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। দুই দফায় এজতেমার কারণে ১৫ জানুয়ারি থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত কোন নির্বাচন পরিচালনা করা যাবে না। এজতেমার কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টঙ্গীতে নিয়ে আসতে হয়। এজতেমার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যস্ত থাকতে হয়। জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে স্কুলগুলো খোলা থাকে। স্কুলের শিক্ষকদেরও নির্বাচনের দায়িত্বে থাকতে হবে। এ কারণে ওই সময় নির্বাচন হলে পাঠ্যক্রমেও ব্যাঘাত ঘটবে। আবার জানুয়ারিতে শীত থাকে, কুয়াশা থাকে। চর অঞ্চলে নদীপথে যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্যই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত উল্লেখ করেন। বলেন, নির্বাচন পেছানোর বিষয়ে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা ৭ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের সংলাপের বিষযটি আমলে নিতে বলেছেন। আমরা সেটি নিয়েছি। এর বাইরে তফসিল পেছানোর সুযোগ নেই। এ সময় তিনি বিএনপির গঠনতন্ত্রের বিষয়েও বলেন, আমরা আদালতের নির্দেশনা পালন করব। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দলের পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে বলেন, রাজনৈতিক দলের এজেন্টদের তালিকা নিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হলে বিএনপিসহ অন্য দলের নেতাকর্মীরা চিহ্নিত হয়ে যাবে, গ্রেফতার হয়ে যাবে এটা ঠিক না। কেউ যদি প্রশিক্ষণ না নিতে চায়, তাহলে না নেবে। এটা তাদের ইচ্ছা। কোন দলের এ বিষয়ে সন্দেহ থাকলে প্রশিক্ষণের তাদের নেতাকর্মীদের পাঠাবে না। নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের বিনা কারণে মামলা দেয়া না হয়, সে নির্দেশনা ইসির তরফ থেকে দেয়া আছে বলে জানান নুরুল হুদা। এর আগে প্রশিক্ষণ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, ভোটারদের ভোটের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য ইভিএমের বিকল্প নেই। ব্যালট পেপারে নানা অসুবিধা রয়েছে। সেগুলো এড়িয়ে চলার জন্য ইভিএম চালু করা হবে। ইভিএমে কারচুপির কোন সুযোগ নেই। এটা নিয়ে আইনী জটিলতা ছিল। সেগুলো এখন আর নেই। ইভিএম ব্যবহারের আরপিও সংশোধনে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করেছেন। কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরীকে প্রধান করে ইভিএম কমিটি করা হয়েছে। কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রাথমিকভাবে শহর অঞ্চলে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। অনুষ্ঠানে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুকও বক্তৃতা করেন।
×