ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনকালীন সরকার ॥ টেকনোক্র্যাটদের বাদ দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৭ নভেম্বর ২০১৮

নির্বাচনকালীন সরকার ॥ টেকনোক্র্যাটদের বাদ দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নির্বাচনকালীন সরকার ছোট না হলেও টেকনোক্র্যাটরা বাদ পড়ছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দেয়ার সময় হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, নির্বাচনের সময় তফসিল ঘোষণার পর মন্ত্রিপরিষদে অনির্বাচিত কেউ থাকতে পারবেন না। সে হিসেবে টেকনোক্র্যাটদের বাদ দেবার ভেতর দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার। ইতোমধ্যে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার পদত্যাগ করেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি এই নির্দেশ দেন। পাশাপাশি মন্ত্রিসভার বাকি সদস্যরা বহাল থাকবেন। আর এই সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে বলেও প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে জানান। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মন্ত্রীদের সরকারী সুযোগ-সুবিধা না নেয়ার নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে সকলকে নির্বাচনী আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে প্রচার কাজ চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের একথা বলেন। এদিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, সরকারের যে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সম্পূর্ণ প্রস্তুত। মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক নিয়ে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা বলেন। এছাড়া মন্ত্রিসভা ‘বিআরটিসি আইন-২০১৮’ এবং জাতীয় ইক্ষু গবেসণা আইন নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের সর্বিক কর্মকা-ে অগ্রগতি বৈঠকে তুলে ধরা হয়। অগ্রগতি সন্তোষজনক বলে সভায় উল্লেখ করা হয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, মন্ত্রিসভার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি শেষে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের পদত্যাগ করতে নির্দেশ দিয়েছেন, অন্যরা স্বপদে বহাল থাকবেন। তাদের পদত্যাগ করতে হবে না। তিনি বলেন, জোটের বিষয়ে আমাদের দফায় দফায় বসতে হবে। এখন আমাদের ব্যস্ত থাকার কোন সুযোগ নেই। সংলাপ যখন শেষ হবে তখন প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রাখবেন। সংলাপের ফলের ভিত্তিতে ৮ তারিখ দুপুর ১২টায় গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৭ নবেম্বরের পর আওয়ামী লীগ আর কোন সংলাপে যাবে না বলেও জানান তিনি। উল্লেখ্য, বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট কোটায় চার মন্ত্রী ছিলেন। তারা হলেন- ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর মন্ত্রীদের সরকারী সুযোগ-সুবিধা না নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় মন্ত্রিসভার সদস্যদের এ নির্দেশ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন অনুযায়ী সবাই নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলবেন। সরকারী গাড়ি ব্যবহারসহ কোন ধরনের সরকারী সুযোগ-সুবিধা নেবেন না। আইন অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী প্রচারকালে সরকারী কোন সুযোগ-সুবিধা নিতে পারবেন না মন্ত্রী বা এমপিরা। বৈঠকে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার। তবে তফসিল ঘোষণার পর এ সরকারের কার্যপরিধি কমে যাবে। তিনি বলেন, গত নির্বাচনের আগে ছোট আকারে নির্বাচনকালীন সরকার করার কথা ভাবা হয়েছিল। কারণ, তখন সংসদে বিএনপি ছিল। তাদের নির্বাচনকালীন সরকারে আনার জন্য সে চিন্তা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, এবার তো সংসদে বিএনপি নেই। নির্বাচনকালীন সরকারে অনির্বাচিত কাউকে রাখা যাবে না। তাই এ সরকারকে আর ছোট করার কোন দরকার নেই। টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের পদত্যাগের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠন-সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্নের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রস্তুত। মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক নিয়ে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। বর্তমান মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ৩৩ মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী, দুই উপমন্ত্রী রয়েছেন। এর মধ্যে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী চারজন। তারা হলেন- ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী মতিউর রহমান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। বৈঠক বর্তমান সরকারের শেষ মন্ত্রিসভা বৈঠক কি না জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বলেন, আর যাই বলেন, এই সময়ে মন্ত্রিসভা বৈঠক বাধাগ্রস্ত হয় না, এটা চলতে থাকবে। কোন বাইন্ডিং (বাধা) নেই। টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী যারা পদত্যাগ করবেন সেই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে কত সময় লাগবে- এ বিষয়ে শফিউল আলম বলেন, মন্ত্রিসভা সংকুচিত করা হবে কি-না, এখন পর্যন্ত আমি সেটা জানি না। আমাকে অবহিত করা হয়নি। জানলে আপনাদের জানাব। আপনি যদি এক ঘণ্টা আগে নির্দেশ পান তাহলে সেই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে কতক্ষণ লাগবে- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, না, খুব বেশি সময় লাগে না। আমরা সামারি করে পাঠিয়ে দেব, রাষ্ট্রপতি হয়ে চলে আসবে। আমরা রেডি, এগুলোর ব্যাপারে। এদিক প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর মন্ত্রীদের পক্ষে আরপিও সংগ্রহের হিড়িক দেখা গেছে। কয়েক মন্ত্রীর দফতর থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে আরপিওর জন্য যোগাযোগ করে। কোন কোন মন্ত্রীর দফতর থেকে নির্বাচন কমিশনেও যোগাযোগ করে বলে জানা গেছে। তবে নির্বাচন কমিশন থেকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তফসিল ঘোষণার আগে তারা কোন কিছু সরবরাহ করতে রাজি নয়। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তারা নির্বাচনী আচরণবিধি প্রণয়ন করবে। এই আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×