ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুখোশের অন্তরালে কি চলছে

প্রকাশিত: ০৪:১১, ৭ নভেম্বর ২০১৮

মুখোশের অন্তরালে কি চলছে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে চলমান মৌসুমি রাজনীতিবিদদের গতি-প্রকৃতি অনেকটা নিম্নচাপের মতো কখনও ঘুমোট, কখনও উত্তাল হয়ে উঠছে। কিছু সংখ্যক আগাছা, পরগাছা, জনবিছিন্ন, দলছুট স্বঘোষিত, হেভিওয়েট ব্যক্তির তর্জন-গর্জন ক্রমেই নখদন্তহীন সিংহের ন্যায় নিষ্ফল হুঙ্কার দিয়ে যাচ্ছে। তাদের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইল ভূখ-ের ষোলো কোটি মানুষ যেন তাদেরই অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছে। গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়লদের গত কয়েক সপ্তাহের বক্তৃতা বিবৃতি ও সংবাদ সম্মেলনের ভাষ্য বিশ্লেষণ করলে, তাদের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা নিয়ে খুব সহজেই প্রশ্ন ওঠে। কথিত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনে শয়তানের সঙ্গে ঐক্যের ঘোষণাও জনগণকে তাদের মুখে শুনতে হয়েছে এবং ঘোষণা অনুযায়ী ইতোমধ্যে তাদের প্রত্যাশিত জোটের আত্মপ্রকাশও ঘটেছে। গত দশ বছরে গণতন্ত্রের পথে আন্দোলন করতে দশ ঘণ্টাও জনগণ যাদের রাজনীতির মাঠে দেখেনি, হঠাৎ করেই তারা অতি গণতন্ত্রী হয়ে উঠলেন। নেতার প্রতি আনুগত্যহীন, দলছুট এ চক্রান্তকারীদের আসলে কোন দলও নেই নেতাও নেই। তারা কেউ কারও নেতৃত্ব মানতে রাজি নয়। এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন স্বীকার করেছেন তাদের জোট কারও একক নেতৃত্বে চলে না; চলে সম্মিলিত সিদ্ধান্তে। ভাবতে অবাক লাগে তিনি কি এটা ও জানেন না যে, মাত্র তিন সদস্যের একটি পরিবারও কোন একজনের নেতৃত্বে চলে? নেতাবিহীন আন্দোলনের দৃষ্টান্ত গোটা দুনিয়া খুঁজে একটাও নেই। নেতাহীন কোন আন্দোলনের উদাহরণ পৃথিবীতে নেই। আসলে তাদের ওই জোট কোন নীতি, আদর্শকে সামনে রেখে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জোট নয়; নেতা ও নীতিহীন দলছুট ষড়যন্ত্রকারীদের একটা বড় ঐক্য। কাকতালীয়ভাবে এবার বাংলাদেশের রাজনীতির অতিথি পাখি এবং প্রকৃতির মৌসুমি পাখিদের জলকেলি প্রায় সমসাময়িক সময়ে শুরু হয়ে গেছে। যৎসামান্য ব্যবধান লক্ষ্য করলে; তা কেবল প্রকৃতির পাখিগুলো সুদূর সাইবেরিয়ান দ্বীপপুঞ্জ হতে আগমনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, পক্ষান্তরে স্বাগতিক বাংলাদেশের রাজনীতির অতিথি পাখিগুলোর জলকেলি ইতোমধ্যে দেশবাসী প্রত্যক্ষ করছে। আজ উত্তরায়, তো কাল বনানী, পরশু ধানম-ি, তো তার পরের দিন মতিঝিলে। ক্ষমতা গ্রহণের হাতছানি তাদের এতটাই বেসামাল করে তুলেছে, এ যেন রীতিমতো তর সইছে না। তো, সচেতন জনগণ যুগ যুগ ধরে তাদের এই সিজনাল জলকেলি দেখে অভ্যস্ত বিধায়, বিষয়টি নিয়ে বৈকালিক চায়ের আড্ডার উপাদেয় হিসেবেই গ্রহণ করছে। রাজনীতি সচেতন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ষড়যন্ত্রকারীদের গতিবিধি বিচার বিশ্লেষণ করছে, চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। গ্রামবাংলার হাট-বাজার পথের ধারের টং দোকান সর্বত্রই সাধারণের মন্তব্য হচ্ছে, সময় শেষে প্রকৃতির নিয়মে অতিথি পাখিগুলো যেমন, এ দেশের মানুষের মাঝে কিছু সুখ-স্মৃতি রেখে, ফিরে যাবে সাইবেরিয়ায়, তেমনি আন্দোলনের নামে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ছদ্মবেশী এ অতিথি রাজনীতিবিদরাও জ্বালাও-পোড়াও করে, বাসে পেট্রোলবোমা মেরে, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মেরে, ট্রেন লাইনচ্যুত করে, দেশ ও জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট করে, মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে, অসংখ্য মায়ের বুক খালি করে, বীভৎস অভিজ্ঞতা ও দুঃসহ স্মৃতি রেখে, পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য, হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। আলো জ্বালিয়ে জনগণ তাদের টিকিটিও খুঁজে পাবে না। দুর্ভাগা বাংলা মায়ের হতভাগ্য সন্তানদের নিয়ে এ জাতীয় রসিকতা বেইমান মীরজাফর আর মোশতাকেরা চির দিনই করে আসছে । জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, যুক্তফ্রন্ট, সাধারণ জনগণের কাছে এমনি সব দুর্বোধ্য নামের বাহার নিয়ে বিশ্বাস ঘাতকেরা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কৌশলে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করে চলেছে। যে জনগণের নামে তারা প্রেস ব্রিফিং করে, ঘোষণাপত্র পাঠ করে, বিবৃতি প্রদান করে, প্রশ্ন হলো, জনগণ কি আদৌ তাদের সে অধিকার দিয়েছে? কিংবা তারা কি কখনও জনগণের পক্ষে গঠনমূলক দাবি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেছেন? দেশের জনসংখ্যার কত শতাংশ তাদের দলের নাম জানে, নেতা হিসেবে বিবৃতি দাতাদের চেনে কিংবা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করতে তাদের দেখেছে? তাহলে এত লম্ফঝম্ফ কিসের এবং কি উদ্দেশ্যে নিবার্চন এলেই ক্ষমতার স্বাদ পেতে রাজনীতির মাঠে তারা ব্যাস্ত হয়ে উঠে, দেশবাসী তা জানতে চায়। বর্তমান সরকার জনগণের কাছে যে অঙ্গীকার করে ক্ষমতায় এসেছিল, জনগণের চাহিদার চেয়েও অধিক এ সরকার দেশকে দিয়েছে। দেশবাসী সানন্দচিত্তে তা স্বীকারও করছে। প্রশ্ন হলো, যারা আজ সরকার বিরোধী ঐক্য গড়ে তুলে সরকার পতনের আন্দোলনে নেমেছে, দেশবাসী জানতে চায় তাদের কাছে কি এমন জাদুর বাক্স রয়েছে যা ক্ষমতায় এলে খুলে দিলে বর্তমান অবস্থার চেয়েও জনগণ সুখে থাকবে? তামাম দুনিয়া জননেত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্র পরিচালনা ও উন্নয়ন পরিকল্পনাকে ক্যারিশমাটিক নেত্রীত্বের স্বীকৃতি দিয়েছে। রাজধানী হতে মফস্বলের প্রতিটি কোনায় কোনায় এ সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে, প্রান্তিক মানুষেরা আজ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে, একসময়ের অভাবী মানুষের পকেটে আজ নগদ অর্থ আছে, আছে ক্রয় ক্ষমতা, অর্থ উপার্জনের নতুন নতুন অসংখ্য কর্মক্ষেত্রও তৈরি হয়েছে। দেশব্যাপী হাজার হাজার কোটি টাকার অসংখ্য মেঘা প্রকল্প যেভাবে শুরু হয়েছে, অবাক বিস্ময়ে তাক লাগানো এ উন্নয়ন প্রক ঘোটা পৃথিবী প্রত্যক্ষ করেছেন। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ অভ্যর্থনাসহ ভূয়সী প্রংশসা করছে। তারা বর্তমান সরকারকে পুনরায় ক্ষমতায় দেখার আশাবাদ ব্যক্ত করছে। প্রধানমন্ত্রীর ভীষণ আত্মবিশ্বাসী, দেশের জনগণ পুনরায় তাকে দেশ সেবার সুযোগ দেবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমাদের বাংলাদেশের কিছু সাইন বোর্ড-প্যাডসর্বস্ব, স্বঘোষিত রাজনৈতিক নেতা এবং এক শ্রেণীর আতেল, বুদ্ধিজীবীরা এ উন্নয়ন কর্মকা- চোখে দেখতে পায় না। আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অংশীদারিত্বে শেখ হাসিনাকে হত্যা করে তারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে থমকে দিতে চায়। এটাই তাদের আসল উদ্দেশ্য। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে গঠনমূলক গণতান্ত্রিক প্রতিপক্ষ অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নামে যে জোট গঠিত হয়েছে, এটা রাষ্ট্রের অবাধ্য, উচ্চশিক্ষিত, দুর্ত প্রকৃতির কুসন্তানদের এবং রাজনৈতিক বখাটেদের ষড়যন্ত্রের জোট। এ জোটের সঙ্গে দেশের সাধারণ মানুষের কোন সম্পর্ক নেই। সরকারের উচিত দ্রুত তাদের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের শিকরের সন্ধান করা। দেশের জনগণের উচিত এ চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। ’৭৫-এ যারা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল; ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে যারা শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার জঘন্যতম কাজটি করে ২৪ জন নিরীহ মানুষকে খুন করেছিল! খুনের সংজ্ঞায় তারা এক হলেও, ব্যক্তি ও খুনের লক্ষ্য ভিন্ন। ’৭৫-এর খুনীরা ছিল ’৭১-এর পরাজিত শক্তি; কিন্তু বার বার যারা শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চায় তাদের শিকর পাকিস্তান তো বটেই, সঙ্গে রয়েছে দেশীয় রাজনীতিতে ক্ষমতার লোভে অন্ধ রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্তকারী গোষ্ঠী। কিছু সংখ্যক বাদ দিলে, বাকি সকল খুনী আর সমর্থক আজ একমঞ্চে। লক্ষ্য তাদের একটাই, শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দেয়া। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে আজ স্বগৌরবে উদ্ভাসিত বাংলাদেশ। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, মঙ্গা, বেকারত্ব, আমাদের অতীত ইতিহাসÑ এটাই মেনে নিতে পারছে না অনেকে। তাই লক্ষ্য একটাই, শেখ হাসিনাকে হত্যা করে রাষ্ট্রকে পিছিয়ে দেয়া। আর এ লক্ষ্যকে সামনে নিয়েই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নামে চলছে রাষ্ট্রবিরোধী গভীর ষড়যন্ত্র। উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে কুচক্রান্তকারীরা যে কোন কিছু করে বসতে পারে বলে দেশবাসী মনে করে। অতএব, জাতি সাবধান! লেখক : রাজনৈতিক কর্মী
×