স্টাফ রিপোর্টার ॥ কালীপূজা উপলক্ষে সম্রাট আকবরের প্রধান সেনাপতি মানসিংহের স্মৃতি বিজরিত রাজারবাগের গঙ্গাসাগর দীঘিতটের বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির প্রাঙ্গণে ‘ত্রিনয়নী বরদেশ্বরী নাট্যোৎসব’ শুরু হচ্ছে আজ। ‘মর্মমূলে অন্বেষণ ভবিষ্যতের শিহরণ’ সেøাগানে তিন দিনের এ উৎসবে মোট ৫টি নাটক ও একটি যাত্রা পালা মঞ্চস্থ হবে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হবে নাটক। উৎসবের উদ্বোধনী দিন আজ মঙ্গলবার নারায়ণ চন্দ্র দাসের রচনা, চিত্তরঞ্জন দাসের সম্পাদনা ও নির্দেশনায় ‘ঢাকার অসুখ ডাক্তার চাই’ এবং শব্দ নাট্যচর্চার ‘চম্পাবতী’ নাটক মঞ্চায়ন হবে। স্বামীর জন্য স্ত্রী কিভাবে নিজেকে আত্মাহুতি দিতে পারে তা নিয়েই তৈরি হয়েছে নাটক ‘চম্পাবতী’। আগামীকাল ৭ নবেম্বর পদাতিক নাট্য সংসদ মঞ্চায়ন করবে সায়িক সিদ্দিকী রচিত ও নির্দেশিত নাটক ‘গুঞ্জন বিবির পালা’। নারীর কল্যাণে যে রাজ্যের কল্যাণ তা নিয়েই ‘গুঞ্জন বিবির পালা’। একই দিনে থিয়েটার আর্ট ইউনিট মঞ্চায়ন করবে ‘আমিনা সুন্দরী’। জলে ভাসা পদ্মের ন্যায় নারী জীবনের ভাসমান জীবন কাহিনী নিয়ে নির্মিত হয়েছে নাটক ‘আমিনা সুন্দরী’। উৎসব সমাপনী দিন ৮ নবেম্বর মঞ্চায়িত হবে সাধনা প্রযোজিত সায়মন জাকারিয়া রচিত এবং নাজনীন হাসান চুমকী নির্দেশিত নাটক ‘সীতার অগ্নি পরিক্ষা’। একই দিন জোৎ¯œা বিশ্বাস অভিনীত এবং নির্দেশিত যাত্রাপালা ‘মহিয়সী কৈকেয়ী’ মঞ্চস্থ হবে। উৎসব আহ্বায়ক চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার এই নাট্যোৎসবের অন্যতম লক্ষ্য। এ বছর এই নাট্যোৎসবের একটা বিশেষ দিক আছে। আমেরিকার শিকাগোতে আয়োজিত বিশ্বধর্ম সম্মেলনে স্বামী বিবেকানন্দ যে কালজয়ী বক্তৃতা দিয়ে বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিলেন এবং মানব সেবার যে উদাত্ত আহ্বান তিনি করেছিলেন, সেই বক্তৃতার ১২৫ বছর পূর্তি এ বছর। শিকাগো, ক্যালিফোর্নিয়া প্রভৃতি প্রদেশে ধারাবাহিক বক্তৃতা প্রদানে তার একটা বিশেষ কথা ছিল আর তা হলো নারীর যতরূপ তার মধ্যে মাতৃত্ব রূপটিই প্রাচ্যবাসীর কাছে সর্বাধিক প্রিয়। ফলে নারীর বহুমাত্রিক রূপের চিত্রায়ন এবং তার মধ্যে শ্রেষ্ঠতম রূপটিকে চিনে নেয়ার কথা বিবেচনা করে এবার আমরা পাঁচ দিনব্যাপী নাট্যোৎসবে ছয়টি নাটক মঞ্চায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আর এখন কালীপূজায় আয়োজিত নাট্যোৎসবে নাটক বিবেচনার ক্ষেত্রে ঐতিহ্যের অন্বেষণকে প্রাধান্য দিয়েছি। মন্দির প্রাঙ্গনে বিশাল দীঘি লাইটিং করা হচ্ছে। দীঘির প্রান্ত ছুঁয়ে লোকজমেলা বসবে। নাগরদোলা, সার্কাসসহ বিভিন্ন শিশুদের বিনোদনমূলক আয়োজন থাকবে। মিষ্টি-ম-া তৈরি থেকে বিক্রি পুরো প্রক্রিয়া ক্রেতা-দর্শকদের সামনে হবে। বেত-বাঁশের কারুমেলা থাকবে অর্থাৎ ম-প প্রদক্ষিণের পাশাপাশি অনুরাগী ভক্ত-দর্শক মেলা দীঘি ঘুরে নির্মল আনন্দ পাবে। সঠিক নিরাপত্তা, শৃঙ্খলভাবে চলাচল উপযোগী রাস্তা, সর্বক্ষণিক স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতায় আগত দর্শকরা আনন্দ পাবেন বলে বিশ্বাস করি। চিত্তরঞ্জন দাস আরও বলেন, শারদীয় দুর্গাৎসবের কিংবা কালীপূজায় উৎসবে কুমোর থেকে ভাস্কর, মুচি থেকে মন্ত্রপুরোহিত, পাচক থেকে পথচলতি পথিক তথা সকল শ্রেণীর মানুষের কিছু না কিছু কর্মসংস্থান হয়। ফলে নাট্যকর্মীদেরও হবে সেটাই স্বাভাবিক।
উপরন্তু জ্ঞান ও বিনোদনের সমস্ত নিয়ে যে নাটকের যাত্রা সে তো সকলের কাছে আদৃত ফলে এই শারদীয় নাট্যোৎসবের আয়োজন। কৃতজ্ঞতা লিজেন্ড অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদারের প্রতি যার উপস্থিতি আমাদের অনুপ্রেরণা। এবার উৎসবে আমরা একটি ঘোষণাও দিয়েছি। আমাদের এলাকায় অবস্থিত অভয় বিনোদনী উচ্চ বিদ্যালয়ে কৃতী শিক্ষার্থীদের জন্য এই মহীয়সী অভিনেত্রীর নামে একটি এ্যাওয়ার্ড প্রদানের ঘোষণা দিয়েছি। স্কুলের শিক্ষকদের বিবেচনায় যেসব ছাত্র-ছাত্রী কৃতিত্বের সঙ্গে ক্লাসে উত্তীর্ণ হবে তাদের ‘ফেরদৌসী মজুমদার এ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হবে। এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তরা সারাবছর পড়া-লেখা, বই-খাতাসহ সব খরচবাবদ নগদ অর্থ মূল্য পাবে। এটা আগামী বছর থেকে কার্যকর হবে।