ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যশোর শহর অংশে ভৈরব নদ খননে সংশয়

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ৬ নভেম্বর ২০১৮

যশোর শহর অংশে ভৈরব নদ খননে সংশয়

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ এক বছরের বেশি সময় অপেক্ষার পর চলতি বছরের মার্চ থেকে যশোরের কনেজপুর থেকে কাক্সিক্ষত ভৈরব নদ খনন শুরু হলেও লক্ষ্য অর্জিত হচ্ছে না। খনন কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে যশোরাঞ্চলের গণমানুষের প্রাণের দাবি পূরণ হওয়ার আশা সঞ্চার হলেও শহরের অংশ খনন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। নদ সীমানায় ১শ’ ১৮ অবৈধ স্থাপনা বহাল থাকায় খনন কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। যে কারণে শহরের অংশে ৪ কিলোমিটার বাদ রেখেই খনন এগুচ্ছে। ইতোমধ্যে ফতেপুর ঘোড়াগাছি অংশের ১৩ কিলোমিটারের ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী জুন ২০১৯’র মধ্যে বেশিরভাগ কাজ সম্পন্ন করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেশি করে এসক্যাভেটর নামানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। এছাড়া কনেজপুর থেকে চৌগাছার তাহেরপুর অংশের ৫০ কিলোমিটারের জন্য দ্রুত টেন্ডার আহ্বান করা হচ্ছে। ভৈরব নদের পারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আইনগত বাধা না থাকলেও অজ্ঞাত কারণে জেলা প্রশাসন কালক্ষেপণ করছে বলে দাবি পাউবোর। আর উচ্ছেদে কালক্ষেপণ হওয়ায় শেষমেশ শহরের অংশ খনন কবে হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে জানিয়েছেন পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গণমানুষের দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত ‘ভৈরব নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন’ প্রকল্পে ভৈরব নদ পুনঃখননে ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে নদী খননের কাজ শুরুর টার্গেট হাতে নেয়া হয়। খনন কাজ ১ জুলাই ২০১৭ থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারি জটিলতার কারণে অনেক সময় পার হয়ে যায়। জটিলতা কাটিয়ে কার্যাদেশ দিয়ে চলতি বছরের মার্চে পাউবো প্রস্তুতি নেয়। কাজ শুরুর টার্গেট ছিল শহর অংশে প্রথম। কিন্তু ভৈরবের দু’পারের ১শ’ ১৮টি কাঁচা-পাকা অবৈধ স্থাপনা বহাল থাকায় প্রথম কোদাল পড়ার মাধ্যমে খনন শুরু হয় শহরতলির কনেজপুর থেকে। সামনে শহরের অংশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের চ্যালেঞ্জ থেকেই যায়। ওসব অবৈধ স্থাপনার ছবি তুলে এবং অবৈধ দখলদারদের নাম, ঠিকানা ও অবস্থান জেলা প্রশাসকের দফতরে দেয়া হলেও ৬ মাসেও উচ্ছেদ ত্বরান্বিত হয়নি। যশোর শহর অংশের ভৈরব নদের পারে অর্ধশত বিল্ডিং, ডজনখানেক বাণিজ্যক প্রতিষ্ঠান, গোডাউন ও বাড়ি রয়েছে। নদের সীমানার ১শ’ ১৮টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ সিদ্ধান্তে মাথায় বাজপড়া দখলদাররা ঢাকায় দৌড়ঝাঁপ করেন। কেউ কেউ সেটেলমেন্টে, আবার অনেকে জেলা প্রশাসনেও দৌড়ঝাঁপ করেন। আবার অবৈধ দখলদারদের কেউ কেউ ঢাকামুখী দেনদবার জোরদার করেন। দীর্ঘদিন দখলে রেখে কোটি কোটি টাকার সুবিধা ভোগ কার্যক্রম হঠাৎ করে নস্যাৎ হয়ে যাবে এটা মানতেই পারেন না অবৈধ দখলদারদের একাংশ। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, ১৯২৬ সালের রেকর্ডের আলোকে নদ সীমানার ১শ’ ১৮ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হলে শহরের অংশ খনন সম্ভব হবে না। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ১১৮ অবৈধ স্থাপনার বিপরীতে উচ্চ আদালতে ১১টি এবং যশোরের আদালতে ৯টি মামলা চলমান রয়েছে। তবে আদালত থেকে কোন নির্দেশনা আসেনি। আর ৭০ টি স্থাপনার ব্যাপারে কোন মামলা নেই। কাজেই এই ৭০ স্থাপনা ভেঙ্গে দেয়াতে কোন বাধা নেই। এছাড়া ২০ জন আদালতে মামলা করলেও নির্দেশনা না থাকায় মামলা থাকা ওই ২০টি স্থাপনা উচ্ছেদে কোন বাধা থাকার কথা নয়। এরপরও জেলা প্রশাসন স্থাপনাগুলো উচ্ছেদে গড়িমসি করছে। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী জানিয়েছেন, ভৈরব পুনঃখনন এগিয়ে চললেও সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়ায়। ফতেপুর ঘোড়াগাাছি অংশের ১৩ কিলোমিটারের কাজ প্রায় শেষের পথে। অন্য অংশের কাজ দ্রুত শেষ করতে ঠিকাদারদের কমপক্ষে ১৫টি এসক্যাভেটর নামাতে বলা হয়েছে। জুন ২০১৯-এর মধ্যে ২৩ কিলোমিটারের কাজ শেষ করা হবে। এছাড়া অবশিষ্ট ৫০ কিলোমিটারের কাজ কনেজপুর থেকে তাহেরপুর পর্যন্ত টেন্ডার আহ্বান করা হবে। শহরের ৪ কিলোমিটার অংশে শুধু বাধা দু’পারের ১শ’ ১৮ অবৈধ স্থাপনা। তিনি আশা করেছিলেন দু’পারের ১শ’ ১৮ অবৈধ স্থাপনা জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ ত্বরান্বিত করবে। কিন্তু কার্যত তা হচ্ছে না। তিনি আরও জানান, উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করতে গত বছর ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছিল, ওই টাকা ফেরত গেছে। আবারও নতুন করে ৪ লাখ টাকা এসেছে উচ্ছেদ ইস্যুতে। স্থাপনা উচ্ছেদ না হলে বহু কাক্সিক্ষত ভৈরব নদের শহরের অংশ খনন সম্ভব হবে না। আর শহরের অংশ খনন না হলে এই পুনঃখনন কার্যত কোন কাজেই আসবে না।
×