ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিচারপতি সিকান্দার আলী স্মৃতি বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী

কেউ এখন আর ক্ষমতা বা রাজনৈতিক পরিচয়ে শাস্তি এড়াতে পারে না

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৬ নভেম্বর ২০১৮

কেউ এখন আর ক্ষমতা বা রাজনৈতিক পরিচয়ে শাস্তি এড়াতে পারে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কেউ আইনের উর্ধে নয়। অপরাধ করে কেউ এখন শাস্তি এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ক্ষমতা বা রাজনৈতিক পরিচয়ে কোন অপরাধী আর বিচার এড়াতে পারে না। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর খন্দকার মোস্তাক একটি ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট জিয়া ক্ষমতা গ্রহণের পর এই অর্ডিন্যান্সকে শুধু আইনেই পরিণত করেননি, তিনি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ও দেন। খুনীদের রক্ষা করে, জামায়াত ও রাজাকারদের আইনগত বৈধতা দিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি (জিয়াউর রহমান) বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচার প্রার্থীদের আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিলেন। সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচারপতি সিকান্দার আলী স্মৃতি বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে ‘আইনের শাসন এবং বাংলাদেশ প্রসঙ্গ’ শিরোনামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিচারপতি সিকান্দার আলী মেমোরিয়াল ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, অধ্যাপক ড. নাইমা আক্তার ও বিচারপতি সিকান্দার আলী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ডের দাতা সারওয়ার সুলতানা বক্তৃৃতা করেন। আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার ফলে এখন এই নীতি ও আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, কেউ আইনের উর্ধে নয় এবং অপরাধ করে কেউ শাস্তি এড়াতে পারে না। ক্ষমতা বা রাজনৈতিক পরিচয়ে কোন অপরাধী এখন আর বিচার এড়াতে পারে না। প্রত্যেক অপরাধীই তাদের স্ব-স্ব অপকর্মের জন্য দায়ী। সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। উপস্থাপনায় তিনি আইনের শাসনের ইতিহাস, বাংলাদেশে আইনের শাসনের মূলনীতি লঙ্ঘন এবং আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। উপস্থাপনায় তিনি বলেন, আইনের শাসন সংবিধানের অন্যতম মূল ভিত্তি হলেও বাংলাদেশের ইতিহাসে এর ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আইনের শাসনের নীতির সবচেয়ে বড় লঙ্ঘন ঘটেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকা-ের পর। কারণ এই হত্যাকা-ের পর খন্দকার মোস্তাক একটি ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিচারে পথ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এই অর্ডিন্যান্স ছিল বাংলাদেশের একটি কালো আইন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণের পর এই অর্ডিন্যান্সকে শুধু আইনেই পরিণত করেননি, তিনি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। খুনীদের রক্ষা করেছিলেন, জামায়াতে ইসলামী এবং রাজাকারদের আইনগত বৈধতা দিয়েছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি (জিয়াউর রহমান) বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচার প্রার্থীদের আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিলেন। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তারা ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচারকার্য শুরু করে। পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার গঠন করলে সুপ্রীমকোর্টে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারের আপীল শুনানি বন্ধ হয়ে যায়। এ বিষয়ে কয়েকজন বিচারপতি আপীল শুনতে বিব্রত বোধ করেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত আইনের শাসনের নীতি প্রতিষ্ঠার বদলে জোর যার মুল্লুক তার নীতি পুনর্প্রতিষ্ঠিত হয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠন করলে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আপীল শুনানি গতি পায় এবং এ মামলার রায় কার্যকর করা হয়। পাশাপাশি জেলহত্যা মামলা, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার করা হয়। দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়। শেখ হাসিনার সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে শুধু বড় বড় মামলার বিচার করছে না অন্যান্য মামলাগুলোরও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। জানমালের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সুন্দর নীতি ও আইন প্রণয়ন করছে। অনুষ্ঠান শেষে চলমান রাজনৈতিক সংলাপ নিয়ে আইনমন্ত্রীর মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি চলমান আলাপ-আলোচনার একটি পার্ট, আমাদের দলনেতা হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের যে অবস্থান তা তিনিই সংলাপ উপস্থাপন করবেন। এ বিষয়ে আমি কোন ব্যাখ্যা দেব না।
×