ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অসম্ভব-সম্ভবের দোলাচলে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৬ নভেম্বর ২০১৮

অসম্ভব-সম্ভবের দোলাচলে বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ কথায় আছে, ক্রিকেটে সব কিছুই সম্ভব। নাটকীয় অনেক কিছুই ঘটে। কিন্তু বাংলাদেশের সামনে ৩২১ রানের টার্গেট দেয়ার পর এখনও জিততে ২৯৫ রান লাগবে, সেটিতেই অসম্ভবের গন্ধ মিলছে! বাংলাদেশ দল যে কখনোই ৩০০ বা তারবেশি রানের টার্গেটের ম্যাচ জিততে পারেনি। ২১৫ রানের বেশি টার্গেটেই কখনও জেতেনি বাংলাদেশ। বেহাল প্রথম ইনিংসের পর বাংলাদেশের জেতার সম্ভাবনায় অসম্ভবের শঙ্কাই জাগছে। এখন একটাই পথ। বড় ইনিংস, বড় জুটিই বাংলাদেশকে রক্ষা করতে পারে। দিতে পারে ইতিহাস গড়ে জেতার সুখ। বোলাররা নিজেদের কাজ করেছেন। এবার ব্যাটসম্যানদের পালা। লিটন দাস (১৪*) ও ইমরুল কায়েস (১২*) আজ আবার চতুর্থদিনে ব্যাটিংয়ে নামবেন। তৃতীয় দিনে বাংলাদেশ বিনা উইকেটে ২৬ রান করতেই আলো স্বল্পতার কারণে দিনের খেলা শেষ হয়। তাতে বাংলাদেশের জিততে আরও ২৯৫ রান লাগবে। জিম্বাবুইয়ের লাগবে বাংলাদেশের হাতে থাকা ১০ উইকেট। যেহেতু ম্যাচের আরও দু’দিন বাকি আছে। ম্যাচের ফল হবে নিশ্চিত। সেই ফল কোনদিকে যায় সেদিকেই এখন সবার লক্ষ্য। তবে বাংলাদেশ কোচ স্টিভ রোডস আশাবাদী। তিনি বলেছেন, ‘উইকেটে কিন্তু সব বল বাঁক নিচ্ছে না। এখনও ব্যাটিং সহায়ক উইকেট মনে হয়েছে। তাছাড়া ইমরুল-লিটনের অপরাজিত থাকা আমাদের জন্য স্বস্তির। তারা যখন ড্রেসিংরুমে ফেরে তখন সবাই উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। কঠিন হলেও আমি খুবই আত্মবিশ্বাসী ম্যাচ জেতার ব্যাপারে।’ পথ অনেক কঠিন। তবে সেই পথ পাড়ি দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। জিম্বাবুইয়ে প্রথম ইনিংসেই আসলে বেশি রান করে ফেলেছে। ২৮২ রান করেছে। এরপর যখন বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ১৪৩ রানে অলআউট হয়ে গেল, জিম্বাবুইয়ের আশা আরও জাগল। বাংলাদেশ পড়ল বিপাকে। অথচ দলটি দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮১ রানের বেশি করতে পারল না। বাংলাদেশের সামনে তাতেই ৩২১ রানের টার্গেট। দ্বিতীয় দিন ১ রান করে দিন শেষ করে জিম্বাবুইয়ে। তৃতীয়দিন আরও ১৮০ রান যোগ করে। একজন ব্যাটসম্যানও হাফসেঞ্চুরি করতে পারেননি। হ্যামিল্টন মাসাকাদজা সর্বোচ্চ ৪৮ রান করেন। বাংলাদেশ স্পিনাররা দুর্বার বোলিং করেন। তাইজুল ইসলাম তো এ ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করে নেন। দুই ইনিংস মিলিয়ে প্রথমবারের মতো এক টেস্টে ১০ উইকেট বা তার বেশি উইকেট শিকার করেন তাইজুল। তার সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজ ৩টি ও নাজমুল ইসলাম অপু ২টি উইকেট তুলে নেন। বাংলাদেশ স্পিনাররাই জিম্বাবুইয়ের দ্বিতীয় ইনিংসের ১০ উইকেট নেন। তৃতীয় উইকেটে মাসাকাদজা ও উইলিয়ামসের জুটি ৫৪ রান না করতে পারলে টার্গেট আরও কমত। এখন সবকিছুই ব্যাটসম্যানদের উপর নির্ভর করছে। টার্গেটে খেলতে নেমে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ তিনবারই জিততে পেরেছিল। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১৫ রানের টার্গেট নিয়ে জিতে বাংলাদেশ। সেটি বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ টার্গেট অতিক্রম করার রেকর্ড। এর উপরে টার্গেট পড়েছে, বাংলাদেশ জিতেছে; এমন ঘটনা নেই। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসেই এমন ঘটনা বেশি নয়। ৩০০ রান বা তার বেশি রানের টার্গেট পড়া ম্যাচ হয়েছে ৬৬০টি। এরমধ্যে ৩০টি জয় তো খুব কমই। বাংলাদেশের কোন ম্যাচ সেই তালিকায় নেই। শুধু তাই নয়, চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশ তিন শ’ রানের বেশি করতেই পেরেছে তিনবার। সেই ম্যাচগুলোর টার্গেট আরও বড় ছিল। তাতে হারও হয়েছে। তিন শ’ রান বা তার বেশি রানের টার্গেটে এখন পর্যন্ত ২০টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। জয় নেই একটিতেও। ড্র আছে দুটি। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ২০০৫ সালে ৩৭৪ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ৫ উইকেটে ২৮৫ রান করে ম্যাচ ড্র করে বাংলাদেশ। ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪৬৭ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ৩ উইকেটে ২৭১ রান করে ড্র করে বাংলাদেশ। এই দুই ড্র করা ম্যাচই এখন বাংলাদেশের প্রেরণা। ড্র করা ম্যাচগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটিতে আবার এক ইনিংসে ইমরুল কায়েস ও আরেক ইনিংসে মুমিনুল হক সেঞ্চুরি করেছিলেন। এ দুই ব্যাটসম্যান এবারও আছেন। দুইজনের সঙ্গে ব্যাটিংয়ে লিটন, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, শান্ত, আরিফুল, মিরাজ রয়েছেন। আশা করতেই পারে বাংলাদেশ। একটি-দুটি বড় ইনিংস, একটি-দুটি বড় জুটিই ম্যাচ জেতাতে পারে বাংলাদেশকে। অসম্ভব নয়। সম্ভব। শুধু প্রথম ইনিংসের মতো ধস না নামলেই হয়। অসম্ভব-সম্ভবের দোলাচলে থাকা বাংলাদেশকে এখন ব্যাটসম্যানরা সম্ভাবনার দোয়ারে নিয়ে যেতে পারলেই হয়।
×