ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ৬ নভেম্বর ২০১৮

অবশেষে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

১৫ নবেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন। প্রথমে ২ হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গা ফেরতের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া শুরু হবে। পররাষ্ট্র সচিব মোঃ শহিদুল হক মিডিয়াকে এই তথ্য জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে প্রত্যাবাসনের জন্য অপেক্ষায় থাকা রোহিঙ্গাদের তালিকা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থাকে (ইউএনএইচসিআর) দেয়া হয়েছে। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেসব বিষয় ইউএনএইচসিআরকে ব্রিফও করা হয়েছে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় গত ফেব্রুয়ারিতে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রথম তালিকায় ১ হাজার ৬৭৩টি পরিবারের ৮ হাজার ২ জন রোহিঙ্গার নাম পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ। বিলম্বে হলেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়া জরুরী। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি সংহতি এবং রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের তাগিদ জানিয়ে আসছে বিশ্ব সম্প্রদায়। বাংলাদেশও আশ্রয়-সেবা দিয়ে মানবিক দায়িত্ব পালন করে আসছে। প্রত্যাবাসন ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করতে জাতিসংঘসহ বিশ্ববাসীর সহযোগিতা চেয়ে আসছে বাংলাদেশ। এমনকি মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ের আলোচনাও চালিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মিয়ানমার সরকারের গড়িমসি, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতিতে বিলম্ব এবং রাখাইনে ফিরে যাওয়ার পর সেখানে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ। অবশেষে সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত হওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত হয়। রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কিভাবে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে তা চূড়ান্ত করতে সম্প্রতি একটি চুক্তিতে সই করেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পর স্বাক্ষরিত ‘ফিজিক্যাল এ্যারেঞ্জমেন্ট’ অনুযায়ী দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট সংখ্যক রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। চুক্তি অনুযায়ী পরিচয় যাচাই ও ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিটি পরিবারকে একটি ইউনিট হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এক ফরমেই থাকবে পুরো পরিবারের ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব। সমঝোতা অনুযায়ী বাংলাদেশ পাঁচটি ট্রানজিট শিবির নির্মাণ করবে। অন্যদিকে মিয়ানমার তার সীমানায় রোহিঙ্গাদের গ্রহণের জন্য দুটি অস্থায়ী অভ্যর্থনা শিবির বানাবে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। তারপরও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সংশয়গ্রস্ত সচেতন মহল। কারণ, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য গত বছরের ২৩ নবেম্বর মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তিও স্বাক্ষর হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী গত ২২ জানুয়ারি থেকে রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এবার চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার তারিখ নির্ধারণ করেছে। এখানেই আশার আলো দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশকে এখন কূটনৈতিকভাবে আরও কৌশলী হতে হবে। আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রেখে এই কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলতে হবে। রাখাইনে যাওয়ার পর তাদের বাসস্থান, নাগরিকত্বসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে রাখতে হবে।
×