ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গণভবনে জোট শরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা

আসন বণ্টনের দায়িত্ব শেখ হাসিনার ওপর ছেড়ে দিল ১৪ দল

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ৫ নভেম্বর ২০১৮

আসন বণ্টনের দায়িত্ব শেখ হাসিনার ওপর ছেড়ে দিল ১৪ দল

সংসদ রিপোর্টার ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা। রবিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটের অন্যান্য শরিকদের বৈঠক শেষে ১৪ দলের মুখপাত্র, আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম এ কথা জানান। আগামী নির্বাচনে ১৪ দল শরিকদের কোন দল কত আসন চায় এ বিষয় নিয়ে বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত হয়েছে জানতে চাইলে মোহাম্মদ নাসিম সাংবাদিকদের বলেন, ১৪ দলের শরিকরা আসন বণ্টনের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি বিজয়ের সম্ভাবনা বিবেচনা করে প্রার্থীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে ১৪ দল পূর্ণ সমর্থন করে বলে জানান তিনি। নির্বাচন প্রসঙ্গে নাসিম বলেন, ১৪ দল সংবিধানের অধীনের একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। নির্বাচন সংবিধানের অধীনে নির্বাচন হতে হবে, সংবিধানের বাইরে যাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নেবে ১৪ দল। আমরা বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দল নির্বাচন এবং যে কোন চক্রান্ত সব ক্ষেত্রে ১৪ দল ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যে প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার মতো তাকেই মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনে যাব। সংবিধানের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচন আমাদের দাবি। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন করব তো বিজয়ী হওয়ার জন্য। যে বিজয়ী হওয়ার মতো তাকেই মনোনয়ন দেবেন শেখ হাসিনা। ১৪ দলের শরিক দলগুলোও সার্বিক বিষয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর অর্পণ করেছেন। আলোচনা শেষে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম সাংবাদিকদের বলেন, ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। ১৪ দল জোটগতভাবে নির্বাচন করবে। অসাম্প্রদায়িক শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ১৪ দল গঠন হয়েছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন ১৪ দলের নেতারা। তিনি বলেন, দেশে একটি অশুভ চক্র এখনও সক্রিয়। একদিকে সংলাপ, আরেক দিকে আন্দোলনের কথা যারা বলছে তারা মূলত নির্বাচন ভন্ডুলের চক্রান্ত করছে। তবে যে কোন অশুভ চক্রান্ত রুখে দেবে ১৪ দল। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সংবিধানের বাইরে এক চুলও ছাড় দেয়া হবে না। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি জোটের শরিক দলগুলো আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর অর্পণ করেছেন। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা সবাই গ্রহণ করবেন। ১৪ দলের একটাই দাবি, ক্ষমতায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১৪ দলের বৈঠকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ১৪ দলের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান এবং পানি সম্পদ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, কাজী জাফর উল্যাহ, আবদুল মতিন খসরু, রমেশ চন্দ্র সেন, জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল, শরীফ নূরুল আম্বিয়া, জাসদের শিরীন আখতার, গণতন্ত্রী পার্টির আরশ আলী, সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহাদাত হোসেন, গণতন্ত্রী পার্টির এসকে শিকদার, বাসদের রেজাউর রশীদ খান, ন্যাপের আমেনা আহমেদ, ইসমাইল হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, অসীত বরণ রায়, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ডাঃ দীপু মনি, আবদুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আইন বিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রমুখ। আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে- প্রধানমন্ত্রী ॥ ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে রবিবার রাতে গণভবনে ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক নেতাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে। আমরা টানা দুই মেয়াদে দেশের সর্বত্র ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি দেখে দেশের জনগণ আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দেবে, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস। দেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে। আর বিএনপি-জামায়াতরা এলে দেশ আবারও পিছিয়ে যাবে, সন্ত্রাস-খুন-দুর্নীতিতে দেশ ছেয়ে যাবে, দেশে আবারও জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটবে। নিশ্চয় দেশবাসী সেটি আর চাইবে না। তাই সরকারের গত ১০ বছরের উন্নয়ন-সাফল্য মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা টানা ৯ বছর ১০ মাস ক্ষমতায় আছি। দেশের এমন কোন জায়গায় নেই যেখানে আমরা উন্নয়ন করিনি। দেশ আজ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবে। আর এই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হলে দেশবাসী আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে দেশসেবার সুযোগ দেবে। কেননা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের উন্নয়ন হয়, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে। আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। জনগণ সকল ক্ষমতার মালিক। জনগণ যাকে ভোট দেবে সে-ই ক্ষমতায় আসবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছরেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা তাকে সময় দেয়নি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশ আবারও পিছিয়ে যায়। দীর্ঘ ২১টি বছর কার্যত দেশের কোন উন্নয়ন হয়নি, দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা থেমেই গিয়েছিল। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে জনগণ গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। দখলকারীরা অবৈধভাবে জনগণের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র নস্যাত করেছে। স্বাধীনতার যে স্বপ্ন ছিল সে স্বপ্ন তারা ধূলিসাত করেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই দেশের উন্নয়ন শুরু হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পাঁচ বছরের দুঃশাসনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এরা ক্ষমতায় এসে আবারও দেশকে সবদিক থেকে পিছিয়ে দেয়। দেশকে দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন করে। তাই বিএনপি-জামায়াত জোট আবার এলে দেশে আবারও দুর্নীতি, দুঃশাসন, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটবে। দেশের মানুষ এখন শান্তি চায়। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ-দুঃশাসন পুনরায় ফিরে আসুক দেশের মানুষ তা অবশ্যই চাইবে না। বিএনপির আমলে মানিলন্ডারিং, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ সৃষ্টি করে দেশের জনগণকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে রাখা হয়েছিল। জনগণ সেই অবস্থা আর দেখতে চায় না। আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে প্রায় ৬ হাজারের মতো বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন হয়েছে। বিএনপি সব নির্বাচনে অংশ নিয়ে অনেক জায়গায় জিতেছে। তাই আগামী নির্বাচনও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে। তাই সরকারের গত ১০ বছরের উন্নয়ন-সফলতা ভোটারদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে ১৪ দলের নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী।
×