ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি নেতা তরিকুলের ইন্তেকাল

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৫ নভেম্বর ২০১৮

 বিএনপি নেতা তরিকুলের ইন্তেকাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা তরিকুল আর নেই। রবিবার বিকেলে রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি দীর্ঘদিন ক্যান্সার, কিডনি ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলে রেখে গেছেন। আজ বিকেলে যশোরে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হবে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুদ্দিন দিদার বলেছেন, আজ সোমবার সকাল ১০টায় বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে, সোয়া ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা শেষে তার মরদেহ যশোরে নেয়া হবে। বিকেল ৪টায় যশোর শহরে ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। তরিকুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। এ ছাড়া এ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে লাশ বাসায় আনার পর লাশ দেখতে পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা তার শান্তিনগরের বাসায় ছুটে যান। পরে লাশ হিমঘরে রাখা হয়। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়ার আগে তিনি দলটির সহ-সভাপতিসহ বিভিন্ন পদে ছিলেন। ১৯৭৩ সালে যশোর পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ও ১৯৭৮ সালে যশোর পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে যশোর সদর আসন থেকে এমপি নির্বাচিত ও ১৯৮১ সালে সড়ক ও রেলপথ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। যশোর সদর আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে চারবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া ছাড়াও তরিকুল ইসলাম চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তথ্যমন্ত্রী এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারে তিনি প্রথমে সমাজকল্যাণ এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ছিলেন। তরিকুল ইসলামের জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৬ নবেম্বর যশোরে। তার বাবা আবদুল আজিজ একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তরিকুল ইসলাম ছাত্র জীবনের বাম রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। স্বাধীনতার আগেই তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নেন। স্বাধীনতার পর প্রথমে ভাসানীর রাজনৈতিক অনুসারী ও পরে ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বিএনপিতে যোগ দেন। তরিকুল যশোর থেকে প্রকাশিত লোকসমাজ পত্রিকার প্রকাশক ছিলেন। তার ছোট ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম বর্তমানে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। অসুস্থতার কারণে তরিকুল ইসলাম কয়েক বছর ধরে দলীয় কার্যক্রমে অনিয়মিত হয়ে পড়েছিলেন। সর্বশেষ খালেদা জিয়া গ্রেফতারের আগে ফেব্রুয়ারি মাসে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে শেষবারের মতো তিনি অংশ নিয়েছিলেন। ১৩ অক্টোবর তরিকুল ইসলামকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ১৯৬১ সালে যশোর জেলা স্কুল থেকে এসএসসি, ১৯৬৩ সালে এমএম কলেজ থেকে আইএ, ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) ও ১৯৬৯ সালে এমএ ডিগ্রী অর্জন করেন তরিকুল ইসলাম। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে যশোর এমএম কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের জন্য রাজবন্দী হিসেবে যশোর ও রাজশাহীতে কারাভোগ করেন দীর্ঘ নয় মাস। ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণআন্দোলনে নেতৃত্বে দেয়ায় গ্রেফতার হন। এরপর দীর্ঘদিন তিনি রাজশাহী কারাগারে ছিলেন। ১৯৭০ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ভাসানী আহূত ফারাক্কা লং মার্চেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তরিকুল ইসলাম। যশোরে শোকের ছায়া ॥ স্টাফ রিপোর্টার যশোর অফিস থেকে জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুলের মৃত্যুর খবর শোনামাত্র দলের নেতাকর্মীরা তাঁর যশোর শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের বাড়িতে ভিড় করে। জেলাজুড়ে নামে শোকের ছায়া। যশোর উন্নয়নে অবদান ॥ তরিকুল ইসলামকে যশোরের উন্নয়নের রূপকার বলা হয়। যশোর কারিগরি প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল ও করোনারি কেয়ার ইউনিট, বিভাগীয় কাস্টমস অফিস, বেনাপোল স্থলবন্দরসহ অনেক অর্জনের কৃতিত্বের দাবিদার তিনি। সামাজিক কর্মকা- ॥ তরিকুল ইসলাম যশোর সরকারী সিটি কলেজ পরিচালনা পরিষদের নির্বাহী সদস্য, যশোর ইনস্টিটিউটের সহকারী সম্পাদক, যশোরের সর্ববৃহৎ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘জাগরণী চক্র’- এর সভাপতি, কিংশুক সঙ্গীত শিক্ষা কেন্দ্রের প্রধান উপদেষ্টা ও যশোর ক্লাবের নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে আধুনিকীকরণে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন।
×