ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্মরণীয় টেস্টে দুঃস্মৃতির মুখে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৫ নভেম্বর ২০১৮

 স্মরণীয় টেস্টে দুঃস্মৃতির মুখে বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ দেশের মাটিতে কোন স্টেডিয়ামে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলতে নেমেই বাংলাদেশের এমন হার। এবারও কী সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অভিষেক টেস্টে এরই পথেই হাঁটছে বাংলাদেশ? জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয়দিনই এমন বেহাল বাংলাদেশ তাতেই প্রশ্ন উঠছে। স্মরণীয় টেস্টে দুঃস্মৃতির মুখে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় প্রথম ইনিংসেই ১৪০ রানে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ে শেষ পর্যন্ত প্রথম ইনিংসে ২৮২ রান করতে পেরেছে। সেখানে বাংলাদেশ ১৪৩ রানেই গুটিয়ে যায়। প্রথমদিন ৫ উইকেট হারিয়ে ২৩৬ রান করেছিল জিম্বাবুইয়ে। দ্বিতীয়দিন তাইজুল ইসলামের (৬/১০৮) অসাধারণ বোলিংয়ে বাকি ৫ উইকেটে ৪৬ রান যোগ করতে পারে সফরকারীরা। এমন ধসের মধ্যেও পিটার মুর অপরাজিত ৬৩ রান করেন। যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল জিম্বাবুইয়ে তাতে ৩০০ রানের নিচে থামিয়ে রাখা গেছে। দ্বিতীয়দিন সকালের সেশনেই জিম্বাবুইয়েকে গুটিয়ে দেয়া গেছে। দুর্দান্ত বোলিং হয়েছে। মনে হয়েছিল সকালের সেশনটা বাংলাদেশ নিজেদের করে নিয়েছে, এবার ব্যাটিংয়ে ঝলক দেখা যাবে। দিনটি ভালই যাবে। কিন্তু এমনই বেহাল দশা হলো ব্যাটসম্যানদের, তাতে যেন লজ্জা মেলার পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেল। দেখতে দেখতে ১৪৩ রানে অলআউট হয়ে গেল বাংলাদেশ। দুই পেসার জার্ভিস ও চাতারা মিলে শুরুতেই ইনিংসের বারোটা বাজিয়ে দিলেন। শেষে গিয়ে সিকান্দার রাজা স্পিন জাদু দেখিয়ে বাংলাদেশকে গুটিয়েই দিলেন। লিটন, ইমরুল, মুমিনুল, শান্ত, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক, মিরাজদের মতো ব্যাটসম্যানরা কিছুই করতে পারলেন না। প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে আরিফুল হক (৪১*) নিজেকে যা একটু মেলে ধরেন। বাকিরা জিম্বাবুইয়ে বোলারদের সামনে অসহায় হয়ে ধরা দিলেন। তাতে করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রন পুরোপুরি জিম্বাবুইয়ের হাতে চলে যায়। জিম্বাবুইয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে ১ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করতে দিন শেষ হয়। আজ ১ রান করা হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও ব্রায়ান চারি তৃতীয়দিনে খেলতে নামবেন। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা যে ব্যাটিং দেখিয়েছেন তাতে সামনে বিপদই ধেয়ে আসছে। যদি জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানরা দ্বিতীয় ইনিংসেও ঝলক দেখান ও প্রথম ইনিংসের মতো ব্যাটিং করে ফেলেন, তাহলে ম্যাচ থেকে বাংলাদেশের ফল বের করে নেয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। উল্টো জিম্বাবুইয়ের দিকে রেজাল্ট ধেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা জোরালো হয়ে উঠবে। এখন যে কোনভাবেই হোক জিম্বাবুইয়ের দ্বিতীয় ইনিংস দ্রুত শেষ করে দিতে হবে। না হলেই বিপদ আসবে। ম্যাচের রেজাল্ট হবে। তা বোঝাই যাচ্ছে। সেই রেজাল্ট জিম্বাবুইয়েকে দ্রুত এখন অলআউট করে দিতে পারলে বাংলাদেশের দিকেও আসতে পারে। এর বিপরীত হলেই বাংলাদেশের হারের সম্ভাবনা জেগে যাবে। সেই সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন এখনই উঠছে। বাংলাদেশ অবশ্য দেশের মাটিতে কোন স্টেডিয়ামের অভিষেক টেস্ট হলেই হেরেছে। দেশের অষ্টম টেস্ট ভেন্যু হিসেবে অভিষেক হলো সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের। এর আগে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম, ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম, মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম ও খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম টেস্ট আঙ্গিনায় পা রেখেছে। প্রতিটি স্টেডিয়ামেই বাংলাদেশ যখন প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলতে নেমেছে, তখনই হেরেছে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ২০০০ সালের ১০ নবেম্বর ভারতের বিপক্ষে নিজেদের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে ৯ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে ২০০১ সালের ১৫ নবেম্বর জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে খেলতে নেমে ৮ উইকেটে হারে। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ২০০৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলতে নেমে ৮ উইকেটে হার হয়। বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে একটি টেস্টই হয়। ২০০৬ সালের ৮ মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলতে নেমে ১০ উইকেটে হারে। ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে ২০০৬ সালের ৯ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নেমে ৩ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ২০০৭ সালের ২৫ মে ভারতের বিপক্ষে খেলতে নেমে ইনিংস ও ২৩৯ রানে হারে। খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামেও একই হাল হয়। এই স্টেডিয়ামে প্রথমবারের মতো খেলতে নেমে ২০১২ সালের ২১ নবেম্বর শুরু হওয়া টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ১০ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামেও প্রথমবারের মতো খেলতে নেমে বিপত্তিতে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। প্রতিটি স্টেডিয়ামেই যখন বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো খেলে তখন টেস্টে জিতবেই বাংলাদেশ, এমন পরিস্থিতি ছিল না। এখন দেশের মাটিতে জিম্বাবুইয়ের মতো দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতবে, সেই আশা করাই যায়। কিন্তু সিলেট টেস্টের দুইদিনেই বাংলাদেশের বিপদ দেখা যাচ্ছে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে দেশের মাটিতে দলীয় সর্বনিম্ন স্কোর করল এবার বাংলাদেশ। এর আগে কখনই জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে দেশের মাটিতে ২০০ রানের নিচে করেনি। এবার হলো। এ বছর এ ইনিংসটি নিয়ে পাঁচ টেস্টে ৯টি ইনিংস খেলেছে বাংলাদেশ। সাতটি ইনিংসের একটিতেও ২০০ রান করতে পারেনি। কী বেহাল দশা। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে এখনও ম্যাচের ফয়সালা হয়নি। তবে যে সাতটি ইনিংসে ২০০ রানের নিচে করেছে বাংলাদেশ প্রতিটিতেই হেরেছে। এবার জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষেও সেই শঙ্কাই হচ্ছে। দুই দলের দ্বিতীয় ইনিংসের ওপরই এখন সব নির্ভর করছে। তবে স্মরণীয় টেস্টে দুঃস্মৃতির মুখেই পড়ে গেছে বাংলাদেশ।
×