ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৮ নবেম্বর তফসিল ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৫ নভেম্বর ২০১৮

 ৮ নবেম্বর তফসিল ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ৮ নবেম্বর বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হচ্ছে। ওইদিন বিকেলে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এই তফসিল ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। রবিবার সন্ধ্যায় কমিশনের বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার শাহাদত হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তবে কবে নাগাদ জাতীয় নির্বাচনের পরিকল্পনা ইসির রয়েছে এ বিষয়ে কিছু না বললেও তিনি জানান, ৪৫ দিনের কাছাকাছি সময় হাতে রেখে নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করা হতে পারে। এই হিসেবে ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের যে কোন দিন একদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানা গেছে। এর আগের তফসিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে রবিবার সন্ধ্যায় ৬টায় নির্বাচন কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, অপর চার কমিশনার ছাড়াও কমিশন সচিব উপস্থিত ছিলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা এর আগে গত ১ নবেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের জানান ৪ নবেম্বর তফসিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সে অনুযায়ী রবিবার সন্ধ্যায় কমিশনের বৈঠকে তফসিলের বিষয়ে এই সিদ্ধান্তের কথা কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হলো। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার শাহাদত হোসেন চৌধুরী বলেন, ৪ নবেম্বরেই তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা ইসির ছিল। সব কিছু বিচার-বিবেচনা করে ৮ তারিখে তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জানা গেছে আগামী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারী দলের সঙ্গে সংলাপ চলছে। সংলাপের প্রথম দিন গত ১ নবেম্বর সরকার ড. কামালের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ করে। এরপর গত শুক্রবার বি চৌধুরীর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। আজ জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপ বসবে সরকার। এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন ৭ নবেম্বরের পর আর কোন দলের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে না। গত ১ নবেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নির্বাচন বিষয়ে সাক্ষাত শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন চলমান সংলাপের প্রতি কমিশনের দৃষ্টি রয়েছে। এর প্রতি তাদের শ্রদ্ধাও রয়েছে। তবে সংলাপ তফসিল ঘোষণার বিষয়ে কোন প্রভাব ফেলবে না। ইসি সূত্রে জানা গেছে সংলাপের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই ইসির পক্ষ থেকে ৪ নবেম্বরের পরিবর্তে ৮ নবেম্বর তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তফসিল ও ভোটগ্রহণের মধ্যে কত দিন ব্যবধান হবে এমন প্রশ্নের জবাবে শাহাদত হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, একটা স্ট্যান্ডার্ড সময় অনুযায়ী ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। এটা ৪৫ দিনের কাছাকাছি সময় হতে পারে। সংসদ নির্বাচনে সেনাবহিনী মোতায়েনের কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। সংসদ নির্বাচনে সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। তবে কতগুলো আসনে হবে তা সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বিধিমালার চূড়ান্ত অনুমোদন ইসির ॥ এদিকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার এবং অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমাদানের বিধান রেখেও বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। আরপিওর চূড়ান্ত অনুমোদরে পরই বিধিমালাও চূড়ান্ত করার এই উদ্যোগ নেয় ইসি। রবিবার কমিশনের বৈঠকে বিধিমালা সংশোধনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া। ইসির অনুমোদন দেয়ার পর এখন তা ভেটিংয়োর জন্য আইন মন্ত্রণালওয়ে পাঠানো হবে। আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং শেষে সংশোধিত এই বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করবে ইসি। গেটেজ প্রকাশের পরই জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সব পথই উন্মুক্ত হবে। নির্বাচন কমিশনার শাহাদত হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, এবারের নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা ও ইভিএম ব্যবহারের জন্য বিধিমালাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এর আগে ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ রেখে আরপিও সংশোধন অনুমোদন দেয় নির্বাচন কমিশন। কমিশনের অনুমোদনের পর তা আইন মন্ত্রণালয়ে পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনা শেষে তা বৈঠকে তোলা হয়। মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে অনুমোদন পাওয়ার পরই গত বুধবার রাষ্ট্রপতি আরপিও সংশোধনের অধ্যাদেশ জারি করেন। ফলে নির্বাচনী আইন আরপিওতে ইভিএম ব্যবহারের আইনী ভিত্তি পর পরই বিধিমালা চূড়ান্তকরণের উদ্যোগ নেয় ইসি। রবিবারের বৈঠকে তার অনুমোদন দেয়া হয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম চালুর আট বছর পর এবারই প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এবারের নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য দ্বৈবচয়ণের ভিত্তিতে আসন বাছাই করে সেব আসনের কিছু কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে ইভিএম বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ইভিএম মেলার আয়োজন করে ইসি। কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর ঢাকায় ইভিএম মেলার আয়োজনের প্রস্তুতিও রয়েছে। মেলায় জনসাধারণে ইভিএম ব্যবহারের করে ভোটদানের পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত করা হবে। এছাড়াও ইভিএম ব্যবহারের সচেতনতা গড়ে তুলতে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণও চলছে। ২০১০ সালের জুন মাসে স্বল্প পরিসরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে ইভিএম চালু হয়। ২০১৫ সালে এসে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখা হয়। পরে নতুন ইভিএম তৈরি করে ইসি। ২০১৬ সালে রংপুর সিটি নির্বাচনে তা চালু হয়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করে ভোট নেয়া হয়। এবার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ যন্ত্র ব্যবহারের পথ করতে আইন সংশোধনের পর বিধিমালাও চূড়ান্ত হলো রবিবার। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইভিএম বিধিমালা ২০১৮ এ রিটার্নিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার, ভোট গণনা, ফল একীভূতকরণসহ নানা বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে- ইভিএমে আঙ্গুলের ছাপ, ভোটার নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা স্মার্ট পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ভোটারকে শনাক্ত করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট কেন্দ্রের ভোটকক্ষে একজন করে ভোটার ভেরিফিকেশন করবেন পোলিং অফিসার। ডেটাবেজে ভোটার বৈধ হিসেবে শনাক্ত হলেই ভেরিফিকেশনের সঙ্গে যুক্ত প্রজেক্টের মাধ্যমে তা পোলিং এজেন্টের কাছে দৃশ্যমান হবে। মেশিনটিতে কুইক রেসপন্স কোডসহ আরও কিছু তথ্য সংবলিত টোকেন মুদ্রণ করে ভোটারকে দেয়া হয়। ভোটার টোকেন নিয়ে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে এলে ভোটিং মেশিনের কুই রেসপন্স কোড স্ক্যানারের মাধ্যমে শনাক্ত করে গোপন কক্ষে থাকা তিনটি পদের জন্য ব্যালট ইউনিটে ব্যালট ইস্যু করা হয়। ভোটার পছন্দের প্রার্থী ও প্রতীক দেখে বাম দিকের বোতামে চাপ দিয়ে সিলেক্ট করেন এবং ওই ব্যালট ইউনিটের সবুজ রঙের ‘নিশ্চিত বাটন’ চেপে তার ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া করবেন। নির্বাচন কমিশন বলছে, আইনি ভিত্তি পাওয়ার পর স্বল্প পরিসরে এ প্রযুক্তি ব্যবহার হবে। আগামী নির্বাচনে কয়টি কেন্দ্রে তা ব্যবহার করা হবে তা কমিশন চূড়ান্ত করবে। দ্বৈবচয়ণ পদ্ধতিতে এসব কেন্দ্র বাছাই করা হবে বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন সিইসি। গত স্থানীয় নির্বাচনে ব্যবহারের পর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের কথা ইসির পক্ষ থেকে অনেক আগেই বলা হচ্ছিল। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন ছিল আরপিও সংশোধন অনুমোদন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ রেখে আরপিও সংশোধন অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আইন মন্ত্রণালয়ে পর্যালোচনা শেষে গত ২৯ অক্টোবার মন্ত্রিসভা আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করে। রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি মাধ্যমে এটির চূড়ান্ত অনুমোদ পায়। আরপিও সংশোধনের পরই নির্বাচনের ইভিএম ব্যবহারের বিধান রেখে বিধিমালা সংশোধনের চূড়ান্ত অনুমোদ দিল ইসি। ইসির অনুমোদনের পর এটি আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের শেষে গেজেট জারি করা হবে। গেজেট জারি হলে ইভিএম ব্যবহারের সব পথ উন্মুক্ত হবে।
×