ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দেশেই তৈরি হচ্ছে মোবাইল ফোনের সিম

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ৫ নভেম্বর ২০১৮

  দেশেই তৈরি হচ্ছে মোবাইল ফোনের সিম

ফিরোজ মান্না ॥ মোবাইল ফোনের সিম এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে। মোবাইল অপারেটররা এখন আর বিদেশ থেকে সিম আমদানি করে না। অপারেটররা বলছে, দেশে তৈরি সিম (সাবস্ক্রাইবার আইডেন্টিফিকেশন মডিউল) মানের দিক থেকেও ভাল। মোবাইল সিমের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, বাংলাদেশকে প্রযুক্তি খাতের আদর্শ গন্তব্য হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। দেশের তৈরি অনেক পণ্য এখন বিদেশে রফতানি হচ্ছে। ভবিষ্যতে মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব তৈরি দেশেই হবে। সরকার এসব পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের শুল্ক প্রায় শূন্যের কোঠায় নিয়ে এসেছে। সূত্র জানিয়েছে, দেশে সিল্কওয়ে, বাম্বল বি, ইস্ট কম পিস নামের প্রতিষ্ঠান মোবাইল সিম তৈরি করছে। আর মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো এসব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত সিম কিনে নিচ্ছে। মোবাইলের সিম কার্ডে একটি ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের চিপ রয়েছে। এতে রয়েছে আন্তর্জাতিক মোবাইল গ্রাহক পরিচয়। চিপে সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক শনাক্ত করে। সিমে স্বল্প পরিমাণ মেমরি (অল্প জায়গায়) রয়েছে। এই মেমরিতে ফোন নম্বরসহ আরও কিছু বিষয় সেভ করে রাখা হয়। সিমের ভেতরে অসংখ্য সেমিকন্ডাকটার, রেজিস্টার, ট্রানজিস্টর আছে। সিম সাধারণত সিলিকন দিয়ে তৈরি হয়। বাজারে এখন কম দামে মোবাইল সিম পাওয়া যায় তা দেশেই তৈরি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বিনামূল্যেও সিম পাওয়া যায়। মোবাইল সিম আমদানিতে শুল্ক না লাগায় মোবাইল ফোন অপারেটররা কম দামে সিম কিনে গ্রাহকের হাতে দিতে পারছে। এ ক্ষেত্রে অপারেটরদের সিম ট্যাক্স দিতে হচ্ছে না। গ্রাহকরা এতে লাভবান হচ্ছেন। জানা গেছে, তরুণ মেধাবীরা সিম উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। দেশে সিম তৈরির সঙ্গে যুক্তরা বিদেশী বিশেষজ্ঞ নিয়ে এসে উৎপাদন শুরু করেন। পরে ধীরে ধীরে তরুণ ডেভেলপাররা সিম তৈরির প্রক্রিয়া শিখে নিয়েছে। শুরুর দিকে বিদেশী বিশেষজ্ঞরা তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উপযুক্ত করে তোলে। সিম তৈরির বিষয়টি কারিগরি হওয়ায় কেউ কেউ বিদেশেও প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে সিম তৈরি করছেন। ইতোমধ্যে একাধিক প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতা মূলকভাবে সিম তৈরি করছে। ফলে আগে বেশিদামে বিক্রি হলেও এখন বেশ কমদামে সিম বিক্রি হচ্ছে। সিম তৈরির প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি না হলেও যারা তৈরি করছে বিশ্ব মানের সিমই তৈরি করছে। কয়েক বছর আগেও মোবাইল অপারেটররা বিদেশ থেকে সিম আমদানি করত। এখন আর তারা বিদেশ থেকে সিম আমদানি করে না। দেশে তৈরি সিম কিনে তারা গ্রাহকের কাছে বিক্রি করছে। শুরুতে দেশে তৈরি একটি সিম বিক্রি করা হয়েছে ৬৮ টাকায়। আর এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬ টাকায়। মোবাইল অপারেটররা জানিয়েছে, দেশে তৈরি সিম মানের দিক থেকে অনেক ভাল। দেশে তৈরি সিমে এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা দেখা দেয়নি। দেশ থেকে সিম কিনলে আমদানি শুল্ক লাগে না বলে সিমের পেছনে খরচ কমে গেছে। গ্রাহকরাও কমদামে সিম কিনতে পারছেন। সূত্র জানিয়েছে, দেশে অনেক মেধাবী তরুণ-তরুণী রয়েছে। তাদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে নানা প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তারা সফটওয়্যার থেকে শুরু করে প্রযুক্তি জগতের অনেক কিছুই তৈরি করছে। তাদের তৈরি অনেক পণ্য বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। বাংলাদেশকে প্রযুক্তি খাতের আদর্শ গন্তব্য হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব ইত্যাদি উৎপাদন-সংযোজনে ব্যবহৃত হয় এমন কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের বিদ্যমান শুল্ক প্রায় শূন্যের কোঠায় আনা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ বলেছে, বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে। দেশীয় হার্ডওয়্যার শিল্পের বিকাশ ও এই শিল্পে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হচ্ছে। দেশে এখন বিশ্বখ্যাত স্যামস্যাং কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স কারখানা স্থাপন করেছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনও তাদের মোবাইল সংযোজন কারখানার যাত্রা শুরু করেছে। এছাড়াও, দেশে মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ উৎপাদন ও সংযোজন কারখানা স্থাপনের জন্য কার্যক্রম শুরু করেছে সিম্ফোনি, আমরা টেকনোলজিস, এলজি ও হুয়াওয়ে। ফলে দেশীয় প্রযুক্তি পণ্যের বিশাল চাহিদা মেটাতে আর আমাদের আমদানি করতে হবে না। এখন সংযোজন ও উৎপাদন শুরু করেছি।
×