ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নিউইয়র্ক ফ্লাইটের আগে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে আসছে আইকাও টিম

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ৫ নভেম্বর ২০১৮

 নিউইয়র্ক ফ্লাইটের আগে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে আসছে আইকাও টিম

আজাদ সুলায়মান ॥ সিভিল এভিয়েশনের সর্বশেষ নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে আসছে আইকাও-এর অডিট টিম। এই টিম ঢাকায় অব্স্থান করে যে রিপোর্ট দেবে, তার ওপর অনেকটা নির্ভর করবে নিউইয়র্ক ফ্লাইটের ভবিষ্যত। ২৪ নবেম্বর শুরু হবে অডিট, চলবে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। চার সদস্যের টিম যেসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করবে, সেগুলোর হাল নাগাদ করতে ব্যস্ত সিভিল এভিয়েশন। এ জন্য সার্বিক তদারকি করছেন চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল নাইম হাসান, এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমান ও সদস্য নিরাপত্তা শাহ মোহাম্মদ এমদাদুল হক। তারা প্রতিটি কাজের চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। তাদের তত্ত্বাবধানে এভসেকের সদস্যরা দিনরাত ঘুম হারাম করে ডকুমেন্টেশন তৈরির কাজে ব্যস্ত। জানা গেছে, আইকাও টিম এবার দেশীয় বিমানবন্দর ও এয়ারলাইন্সগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার ত্রুটি-বিচ্যুতি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করবে। কোথাও কোন ঘাটতি বা ত্রুটি যাতে ধরা না পড়ে সে জন্য শতভাগ সতর্কতার সঙ্গে ডকুমেন্টেশন তৈরি করা হচ্ছে। বিশাল পরিধির এই কর্মযজ্ঞ চলছে চার মাস ধরে। শাহজালাল আন্তর্জার্তিক বিমানবন্দরের তিনতলায় এভসেক পরিচালক নুরে আলম সিদ্দিকী তৈরি করছেন নিরাপত্তার সব ভলিউমের ডকুমেন্টেশন। বিমানবন্দর ও এয়ারলাইন্স অপারেটরগুলো আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে চলছে কিনা, নাকি কোথাও কোন ঘাটতি আছে তা শনাক্ত করা হচ্ছে। নিরাপত্তার বিভিন্ন ধাপের মান কি রকম কিংবা কতটা ঝুঁকিতে রয়েছে সেটা স্বচক্ষে দেখবেন অডিট সদস্যরা। এবারের অডিটে ন্যাশনাল এভিয়েশন সিকিউরিটি ও এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি- এ দুটো ক্যাটাগরিতে পর্যবেক্ষণ করা হবে। ন্যাশনাল এভিয়েশনে দেশের সব বিমানবন্দরের জন্য বেসিক সিকিউরিটি বলতে যা বোঝায় তা ঠিকমতো মেনে চলা বা বিদ্যমান রয়েছে কিনা তা যাচাই করা হবে। একইভাবে এয়ারপোর্ট সিকিউরিট ক্যাটাগরিতে দেখা হবে, কোন বিমানবন্দরে বিশেষায়িত ব্যবস্থা রয়েছে কিনা। জানা গেছে, আগামী ২৪ নবেম্বর আইকাও চার সদস্যের যে টিম ঢাকায় আসছেন তারা হচ্ছেন-কারেন্ট জুদাহ, রবি কান্নাহ, জয়কান্তা ও স্মিথ। টানা দশদিন তারা ঢাকায় অবস্থান করে অডিট করবেন। এসাইনমেন্ট অনুযায়ী তাদের মোকাবেলা করার জন্য সিভিল এভিয়েশন সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে। এ জন্য এভসেকের এ অডিটের প্রাক প্রস্তুতি হিসেবে আইকাও সদর দফতরে ৪৮১টি নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তর (কুয়ারি) আইকাও সদর দফতর মন্ট্রিয়লে পাঠানো হয়েছে গত সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে। যে চারজন আইকাও পর্যবেক্ষক বা অডিটর ঢাকায় আসবেন, তারা ইতোমধ্যেই এসব প্রশ্নের উত্তর স্টাডি করছেন। ঢাকায় আসার পর সেই আলোকেই তারা অনুসন্ধান করবেন এবং বাস্তবে তার কতটুকু প্রতিফলন ঘটেছে তা যাচাই করা হবে। এ অডিটের তাৎপর্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, এটা খুবই চ্যালেঞ্জের। আমরা হয়ত এবারের অডিটে উতরে যাব, তারপর সেটা ধরে রাখাটা হবে বেশ চ্যালেঞ্জিং। কেননা, আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি স্থায়ীভাবে নিশ্চিত করতে গেলে আমাদের আরও অবকাঠামোগত ও অন্যান্য ক্ষেত্রে উন্নতি করতে হবে। এ অডিট উত্তীর্ণ হবার জন্য ইতোমধ্যে ডকুমেন্টেশন তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। চারমাস ধরে শাহজালাল বিমানবন্দরে উইং কমান্ডার নূরে আলম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে একদল তরুণ মেধাবী এভসেক কর্মকর্তাকে দিবারাত্রি ডুকমেন্ট তৈরির কাজে ব্যস্ত দেখা যায়। ছুটির দিনেও তাদের কাজ করতে হচ্ছে। এরই মধ্যে এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি প্রোগ্রামের ওপর সাড়ে পাঁচ শ’ ভলিউম তৈরি করা হয়েছে। বিমানবন্দরের স্বাভাবিক অপারেশনাল কাজের পাশাপাশি তাদের এই বিশাল কর্মযজ্ঞে ডুবে থাকতে হচ্ছে। কথা বলা বা খাবারদাবারের মতো সময়ও বের করতে পারছেন না তারা। আর বিমানবন্দরে তাদের জন্য নেই খাবারের কোন সুব্যবস্থা। এমন কঠিন পরিস্থিতির মাঝে অক্লান্ত পরিশ্রমে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সদস্য এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমান কিছুটা বিব্রতবোধ করে বলেন, এভসেক সদস্যরা এভাবে কাজ করে অভ্যস্ত। দেশের স্বার্থে এতটুকু সেক্রিফাইস না করলে কেমনে হবে। এখন আমাদের লক্ষ্য একটাই- যে করেই হোক এবারের অডিট ওভারকাম করা। আসন্ন অডিটের চ্যালেঞ্জিং দিক সম্পর্কে জানতে চাইলে বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, আমরা কোনটাকেই খাটো করে দেখছি না। প্রতিটি এনেক্সেই ভাল করতে হবে। বিশেষ করে এয়ারপোর্ট এক্সেস কন্ট্রোল, হোল লাগেজ, ক্যাবিন লাগেজ, কার্গো প্রসেসিং, প্যারামিটার সিকিউরিটিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে শতভাগ সফলতা অর্জনের লক্ষ্য পূরণের প্রস্তুতি চলছে। অডিট টিম এসব প্রতি পয়েন্টে সরজমিনে যাবে, তারা দেখবে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে। বিন্দুুমাত্র ত্রুটি-বিচ্যুতি বা ঘাটতি যাতে চোখে না পড়ে সেভাবেই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এমনকি একটি ফ্লাইট আকাশে বিপজ্জনক অবস্থায় পড়লে কিংবা জরুরী অবতরণের পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের কি ধরনের ফ্যাসিলিটিজ রয়েছে, তাও প্রত্যক্ষ করবেন তারা। উল্লেখ্য, এর আগে গত দু’বছরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ঘাটতি পূরণে ব্যাপক সংস্কার আনা হয়েছে। বিশেষ করে যেই কার্গোর নিরাপত্তায় প্রশ্ন তুলে যুক্তরাজ্য ঢাকা থেকে সরাসরি কার্গো রফতানিরও ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল- সেখানে আজ বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। বেবিচক সদস্য এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কার্গো হাউসে স্থাপন করা হয়েছে ইডিএস,ইটিডি, ডুয়েল মুড স্ক্যানার ও ডগ স্কোয়াডসহ প্রয়োজনীয় সব ইকুইপমেন্ট। এখনকার বর্তমান নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অভিভূত দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকরাও। আসন্ন অডিটের ফল ইতিবাচক হবার পর নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালু করতে আর কি কি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে জানতে চাইলে পরিচালক (এফএসআর) উইং কমান্ডার চৌধুরী জিয়াউল কবির বলেন, সামনে আইকাও থেকে যেই টিম আসছে সেটা সিকিউরিটি অডিট। এ রিপোর্ট ভাল হলে অবশ্যই আমাদের জন্য ভাল। তারপর আসবে এফএএ থেকে সেফটি অডিট টিম। একটা প্রি-অডিট অপরটা অডিট। আমরা সেই প্রস্তুতিও করে রেখেছি। চাইলে আজকেও এফএএ টিম এসে দেখতে পারে। কিন্তু এফএএ সারা বিশ্বের অডিট কাজে এত বেশি ব্যস্ত থাকে যে, তাদের সিডিউল পাওয়াই দুষ্কর।
×