ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কসবায় দুটি কূপ খনন করে গ্যাস পায়নি বাপেক্স

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ৫ নভেম্বর ২০১৮

  ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কসবায় দুটি কূপ খনন করে গ্যাস পায়নি বাপেক্স

রশিদ মামুন ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সালদা-৪ এবং কসবা-১ কূপে বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য গ্যাস পায়নি বাংলদেশ তেল গ্যাস অনুসন্ধান উত্তোলন কোম্পানি বাপেক্স। ভারত দীর্ঘদিন ধরেই সালদার পাশে রুখিয়া এবং কসবার পাশে কোনবান থেকে গ্যাস তুলছে। একই ভূকাঠামো হওয়ায় বাংলাদেশ অংশে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দেয়া উচিত বলে মনে করা হলেও তা করা হয়নি। জানতে চাইলে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) একেএম রুহুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দুটি কূপেই গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। কিন্তু তা বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য নয়। সালদা-৪ কূপটির তিনটি জোন পরীক্ষা করে পানির আধিক্য পাওয়া গেছে। গ্যাসক্ষেত্রটির ভূ-কাঠামো সালদা নদীর তলদেশ দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন অবস্থায় বিস্তৃত। ভারত অনেক আগে থেকে এখানে গ্যাস তুলছে। গ্যাস ক্ষেত্রটি উৎপাদনের শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারত এর আগে এখান থেকে যে গ্যাস তুলছিল এখন তাও কমে এসেছে। ১৯৯৬ সালে সালদা নদী ক্ষেত্রটি আবিষ্কারের পর ২৮ মার্চ ১৯৯৮ সাল থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু করে বাপেক্স। এর আগে সালদাতে তিনটি কূপ খনন করা হয়। সেখানের একটি কূপ থেকে এখন প্রতিদিন চার দশমিক দুই মিলিয়ন ঘনফুট করে গ্যাস তোলা হচ্ছে। অন্যদিকে ভারত রুখিয়া গ্যাস ক্ষেত্র থেকে ৫০টি কূপ থেকে গ্যাস তুলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একই ভূকাঠামো হওয়ায় যে দেশ কূপ করবে গ্যাস সে দিকে চলে যাবে। এটা ভারতের অন্যায় নয়। এটি আমাদের সমস্যা। আমরা সময়মতো কূপ খনন করতে পারিনি। বাপেক্স সূত্র বলছে, সালদা-৪ এ ২ হাজার ৮১৫ মিটার পর্যন্ত খনন করা হয়। এখানে তিনটি জোনে ড্রিল স্টেম টেস্ট বা ডিএসটি করা হয়। জোন তিনটি হচ্ছে ২ হাজার ১৪ থেকে ২ হাজার ৩৫০ মিটার, দুই হাজার ৫৯৮ থেকে দুই হাজার ৬০৪ মিটার এবং দুই হাজার ৬১১ মিটার থেকে ২ হাজার ৬২৫ মিটার। এই তিন জোনের একটিতেও উত্তোলনযোগ্য গ্যাস নেই। ১৯৯৬ সালে সালদা গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কারের পর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সালদা এবং কসবায় ব্যাপকভাবে অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া শুরু করতে চাওয়া হলেও তা পারেনি বাপেক্স। তেল গ্যাস অনুসন্ধানে কার্যত ২০১০ সাল পর্যন্ত সরকারগুলো বিনিয়োগে অনাগ্রহী ছিল। এর পরবর্তী সময়ে যেখানে বেশি গ্যাস পাওয়া যাবে সেই দিকে মনোযোগ ছিল বেশি। এ জন্য অপেক্ষাকৃত কম গ্যাস মিলবে এমন খনিতে যাওয়ার বিষয়ে অনাগ্রহ দেখানো হয়েছে। ভারতের ওই গ্যাস ক্ষেত্রের নাম রুখিয়া। ভারত ৮০এর দশক থেকে সেখানে গ্যাস তুলছে। এখন ভারতের ওই অংশে ৫০টি কূপ খনন করা হয়েছে। এখন রুখিয়া থেকে প্রতিদিন ১১ মিলিয়ন ঘনফুট করে গ্যাস তোলা হচ্ছে। জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক হোসেন মনসুর বলেন, তৃতীয়মাত্রার ভূকম্পন জরিপের যে ফলাফল তাতেই দেখা গেছে সালদাতে কূপ খনন করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে না। এরপরও সেখানে কূপ খনন করা হয়েছে। এর বাইরেও অন্য জায়গাতে সম্ভাবনা থাকলেও তা করা হয়নি। তিনি বলেন, একই ভূকাঠামোয় ভারত অনেক আগে থেকে গ্যাস তুলছে। সালদা-১ থেকে সালদা-৪ দূরত্ব দেড় কিলোমিটার। আরপিএস যে মজুদ নির্ধারণ করে দিয়েছিল সেখানে দেখা যায় সালদার মোট মজুদের মধ্যে ২৬৫ বিসিএফ। এরমধ্যে ৯১ বিসিএফ উত্তোলন হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই কসবা-১ কূপেও গ্যাস পায়নি বাপেক্স। কূপটির ২ হাজার ৪৬২ থেকে দুই হাজার ৪৮০ এবং দুই হাজার ৫২৭ থেকে ২ হাজার ৫৩৮ মিটার গভীরতায় ডিএসটি করা হয়। কূপের মুখ ৬ ঘন্টা বন্ধ রাখলে দুই হাজার ৫০০ পিএসআই চাপ তৈরী হচ্ছে। কিন্তু মুখ খুলে দিলে আধাঘন্টার মধ্যে চাপ নেমে যাচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ পিএসআইতে। এত কম চাপে গ্যাস তোলা সম্ভব নয় বলে বাপেক্স সূত্র জানিয়েছে। কসবার পাশে কোনাবান থেকেও গ্যাস তুলছে ভারত। একই ভূগঠন থেকে কোনাবান থেকে গ্যাস তোলা হচ্ছে। এখন প্রতিদিন ভারত কোনাবান থেকে ৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস তুলছে। গ্যাস ক্ষেত্রটিতে টাইট স্যান্ডের কারণে গ্যাস উপরে আসছে না বলে মনে করেন ভূতাত্ত্বিক অধ্যাপক বদরুল ইমাম। ফ্রাকিং প্রযুক্তিতে এখান থেকে গ্যাস উত্তোলন সম্ভব। কসবা এবং সালদার বিষয়ে এই ভূতাত্ত্বিক বলেন, যেহেতু একই ভূকাঠামো তাই যারা বেশি কূপ খনন করবে গ্যাস সেদিকে চলে যাবে। আমরা বেশি কূপ করতে পারলে গ্যাস আমাদের দিতে আসতো। এখনও আরো কূপ খনন করে গ্যাস রয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। ফ্রাকিং প্রযুক্তি সম্পর্কে বাপেক্স এর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যয়বহুল এই প্রযুক্তি আমাদের কাছে নেই। কোন কোন দেশ হয়তো ব্যবহার করছে কিন্তু ফ্রাকিং করা হলেওই বা কতটুকু সুফল পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত নই আমরা।
×