ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খেলোয়াড় ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পাচ্ছেন সাকিব তামিম মাশরাফি

১৪১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পাচ্ছে সেরা করদাতার সম্মাননা

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ৫ নভেম্বর ২০১৮

১৪১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পাচ্ছে সেরা করদাতার সম্মাননা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ এ বছর সেরা করদাতা হয়েছেন জাতীয় দলের তিন ক্রিকেটার। তারা হলেন কর অঞ্চল-৭ এর সাকিব আল হাসান। কর অঞ্চল-১-এর তামিম ইকবাল ও মাশরাফি বিন মুর্তজা। জাতীয় ট্যাক্সকার্ড নীতিমালা, ২০১০ (সংশোধিত) অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকসহ সেরা করদাতা মোট ১৪১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা উল্লেখ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে। এই প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য উঠে এসেছে। অন্যবারের মতো এবারও সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পর্যায়ে সর্বোচ্চ করদাতা, দীর্ঘ সময় ধরে কর দিচ্ছেন এমন করদাতা, সর্বোচ্চ করদাতা নারী ও তরুণ করদাতার তালিকা প্রকাশ করেছে এনবিআর। ব্যক্তি পর্যায়ে ট্যাক্সকার্ড দিতে ‘বিশেষ শ্রেণী’ এবং ‘আয়ের উৎস বা পেশা’ নামের দুটি শ্রেণী করা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। বিশেষ শ্রেণীর মধ্যে রয়েছে সিনিয়র সিটিজেন, গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, নারী এবং ৪০ বছরের কম বয়সী তরুণ। অন্যদিকে আয়ের উৎস বা পেশার মধ্যে ১৩ ক্যাটাগরির মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ী, বেতনভোগী, চিকিৎসক, সাংবাদিক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, স্থপতি, হিসাববিদ, নতুন করদাতা, খেলোয়াড়, অভিনেতা-অভিনেত্রী, শিল্পী (গায়ক-গায়িকা) এবং অন্যান্য। আর কোম্পানি পর্যায়ে করা হয়েছে ১৪টি শ্রেণী। এ বছরে অভিনেতা-অভিনেত্রী ক্যাটাগরিতে সেরা করদাতা হয়েছেন মাহফুজ আহমেদ, এম এ জলিল অনন্ত এবং এস এ আবুল হায়াত। শিল্পী শ্রেণীতে রয়েছেন রুনা লায়লা, তাহসান রহমান খান ও এসডি রুবেল। এবার অবশ্য নতুন করে কোন পরিবারকেই কর বাহাদুর পরিবারের স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে না। আলাদা শ্রেণী করে তিন বছর আগে থেকে সেরা করদাতাদের ট্যাক্স কার্ড দিয়ে আসছে এনবিআর। সেরা করদাতা হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এবারও ১৪১টি ট্যাক্সকার্ড দেবে এনবিআর। এর মধ্যে ব্যক্তি রয়েছেন ৭৬ জন, বাকিগুলো প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কোম্পানি পর্যায়ে ট্যাক্সকার্ড পাচ্ছে ৫৪টি কোম্পানি। কোম্পানিগুলোকে ট্যাক্সকার্ড দেয়া হবে ১৪টি ক্যাটাগরিতে। এগুলো হচ্ছে ব্যাংকিং, অব্যাংকিং আর্থিক, টেলিযোগাযোগ, প্রকৌশল, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক, জ্বালানি, পাটশিল্প, স্পিনিং ও টেক্সটাইল, ওষুধ ও রসায়ন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া, আবাসন, তৈরি পোশাক, চামড়াশিল্প ও অন্যান্য। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যান্য করদাতা পর্যায়ে চারটি ক্যাটাগরিতে দেয়া হবে আরও ১১টি ট্যাক্সকার্ড। ক্যাটাগরিগুলো হচ্ছে ফার্ম, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, ব্যক্তিসংঘ ও অন্যান্য। যোগ্য করদাতা হিসেবে সবাইকে এই মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে ট্যাক্সকার্ড ও সম্মাননা দেবে সরকার। নীতিমালা অনুযায়ী, ট্যাক্স কার্ডধারীদের সরকার বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান এবং সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ জানাবে। যে কোন ভ্রমণে সড়ক, বিমান বা জলপথে টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা অগ্রাধিকার পাবেন। স্ত্রী-স্বামী, নির্ভরশীল পুত্র-কন্যা নিজেদের চিকিৎসার জন্য সরকারী হাসপাতালে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কেবিন সুবিধাও পাবেন তারা। এ ছাড়া বিমানবন্দরে সিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার এবং তারকা হোটেলসহ সব আবাসিক হোটেলে বুকিং পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা অগ্রাধিকার পাবেন। ট্যাক্সকার্ড দেয়ার পর থেকে এর মেয়াদ থাকবে এক বছর। সাংবাদিক শ্রেণীতে এ বছর সেরা করদাতা প্রথম আলো সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমান এবং ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম। করদাতার দিক থেকে সেরা পাঁচ সাংবাদিকের অন্যরা হচ্ছেন চ্যানেল আইয়ের পরিচালক (বার্তা) শাইখ সিরাজ, চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদীর সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল মালেক এবং বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম। সিনিয়র সিটিজেন শ্রেণীতে ট্যাক্সকার্ড পাবেন স্যামুয়েল এস চৌধুরী, তপন চৌধুরী ও রাজশাহীর অনিতা চৌধুরী এবং গোলাম দস্তগীর গাজী ও খন্দকার বদরুল হাসান। তাদের মধ্যে সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) করদাতা। স্যামুয়েল এস চৌধুরী ও অনিতা চৌধুরী রাজশাহী কর অঞ্চল এবং খন্দকার বদরুল হাসান ঢাকা কর অঞ্চল-৩-এর করদাতা। গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শ্রেণীতে ট্যাক্সকার্ড পাবেন ঢাকার চারটি কর অঞ্চলের লে. জেনারেল আবু সালেহ মোঃ নাসিম (অব.), মোঃ নাসির উদ্দিন মৃধা, এস এম আবদুল ওয়াহাব, মোঃ ইদ্রিস আলী মিয়া এবং মোঃ আতাউর রউফ। নারী শ্রেণীতে ঢাকার কর অঞ্চল-৩-এর রুবাইয়াত ফারজানা হোসেন, কর অঞ্চল-৬ এর মাহমুদা আলী শিকদার ও কর অঞ্চল-৯ এর পারভীন হাসান এবং রাজশাহী কর অঞ্চলের রতœা পাত্র ও রংপুর কর অঞ্চলের নিশাত ফারজানা চৌধুরী ট্যাক্সকার্ড পাবেন। তরুণ শ্রেণীতে রয়েছেন এলটিইউর করদাতা নাফিস সিকদার, ঢাকার কর অঞ্চল-৪ এর গাজী গোলাম মতুর্জা, কর অঞ্চল-৩ এর মোঃ হাসান, কর অঞ্চল-১০ এর জুলফিকার হোসেন মাসুদ রানা এবং চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-৪ এর মোঃ আমজাদ খান। প্রতিবন্ধী শ্রেণীতে ঢাকার কেউ ট্যাক্সকার্ড পাননি। পাচ্ছেন চট্টগ্রামের সুকর্ণ ঘোষ, সিলেটের মোঃ মামুনুর রশিদ ও খুলনার কাজী আখতার হোসেন। ব্যবসায়ী শ্রেণীতে রয়েছেন ঢাকার কর অঞ্চল-২ এর মোঃ কাউছ মিয়া, কর অঞ্চল-১২ এর আব্দুল কাদির মোল্লা, কর অঞ্চল-১৫ এর কামরুল আশরাফ খান এমপি, এলটিইউর সৈয়দ আবুল হোসেন এবং কর অঞ্চল-১০ এর মোঃ নুরুজ্জামান খান। চিকিৎসক শ্রেণীর সেরা পাঁচ করদাতাই কর অঞ্চল-১০ এর। তারা হলেন এ কে এম ফজলুল হক, প্রাণ গোপাল দত্ত, জাহাঙ্গীর কবির, এনএএম মোমেনুজ্জামান ও মোঃ নুরুল ইসলাম। আইনজীবী শ্রেণীর সবাই কর অঞ্চল-৮ এর। তালিকায় রয়েছেন মাহবুবে আলম, শেখ ফজলে নূর তাপস, আহসানুল করিম, কাজী মুহাম্মদ তানজীবুল আলম ও নিহাদ কবির। স্থপতি শ্রেণীতে এবার তিন জন ট্যাক্সকার্ড পাবেন। তারা হলেন ফয়েজ উল্লাহ, হাসান সামস উদ্দীন ও ইকবাল হাবিব। প্রকৌশলী শ্রেণীতে ঢাকার কেউ ট্যাক্সকার্ড পাচ্ছেন না। পাচ্ছেন চট্টগ্রামের মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, রাজশাহীর মোঃ হাফিজুর রহমান ও বগুড়ার মোহাম্মদ হামিদুল হক। হিসাবরক্ষক শ্রেণীতে কার্ড পাচ্ছেন ঢাকার মোঃ মোক্তার হোসেন, এম বি এম লুৎফুল হাদী ও বিমলেন্দু চক্রবর্তী। নতুন করদাতা শ্রেণীতে সাত জনের মধ্যে ঢাকার মিয়া মনিকা রফিকুলোভনা, তাফিজুল ইসলাম পিয়াল ও সাইফুল ইসলাম, সিলেটের রানা মালিক, মোসাম্মাৎ সেলিনা আক্তার ও রাসেল রায় এবং রাজশাহীর মোছাঃ ছিয়াতুন নেছা। অন্যান্য এলটিইউর করদাতা শ্রেণীতে পাচ্ছেন সদর উদ্দিন খান, আবু মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন খান ও নজরুল ইসলাম মজুমদার। ব্যাংকিং প্রাতিষ্ঠানিক করদাতার শ্রেণীতে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, এইচএসবিসি, সাউথইস্ট ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক। অব্যাংকিং আর্থিক খাত শ্রেণীতে রয়েছে আইডিএলসি ফাইন্যান্স, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড এবং উত্তরা ফাইন্যান্স এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট। খাদ্য ও আনুষঙ্গিক প্রাতিষ্ঠানিক করদাতার এই শ্রেণীতে রয়েছে নেসলে বাংলাদেশ, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও ট্রান্সকম বেভারেজেস। প্রকৌশল শ্রেণীতে বিএসআরএম স্টিলস, পিএইচপি কোল্ড রোলিং মিলস এবং পিএইচপি নফ কন্টিনিউয়াস গ্যালভানাইজিং মিলস কার্ড পাচ্ছে। তৈরি পোশাক শ্রেণীতে কার্ড পাচ্ছে রিফাত গার্মেন্টস, জিএমএস কম্পোজিট, দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার, ফোর এইচ ফ্যাশন, কেডিএস গার্মেন্টস ও এ্যাপেক্স লেনজারি। এ ছাড়া টেলিযোগাযোগে গ্রামীণফোন; জ্বালানিতে তিতাস গ্যাস, সিলেট গ্যাস ও শেভরন বাংলাদেশ; পাটশিল্পে জনতা জুট, সুপার জুট ও আইয়ান জুট; আবাসনে স্পেসজিরো, বে ডেভেলপমেন্টস ও স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স; চামড়াশিল্পে বাটা সু, এ্যাপেক্স ফুটওয়্যার ও লালমাই ফুটওয়্যার; অন্যান্য শ্রেণীতে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, মেটলাইফ, লাফার্জ হোলসিম ও নিটল মোটরস; অন্যান্য করদাতার ফার্ম পর্যায়ে ওয়ালটন মাইক্রোটেক কর্পোরেশন, এস এন কর্পোরেশন, ওয়ালটন প্লাজা ও এএসবিএস কার্ড পাচ্ছে।
×