ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সারাদেশে তিন শত সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করতে হবে ॥ হাবিব

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ৫ নভেম্বর ২০১৮

 সারাদেশে তিন শত সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করতে হবে ॥ হাবিব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের অন্যতম মেধাবী নির্মাতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব। তিনি একজন স্বপ্নবাজ নির্মাতা। একাধারে একজন সাংস্কৃতিক কর্মী, নাট্য নির্মাতা, চলচ্চিত্র পরিচালক এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রপথিক। আশির দশকের শুরুতে ‘প্রেক্ষাপট’ নাট্যদল নিয়ে যাত্রা শুরু করেন হাবিবুল ইসলাম হাবিব। পরিচালনা করেন বহুল আলোচিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক মঞ্চনাটক ‘ইদানীং তিনি ভদ্রলোক’, ‘খাঁটি মীরজাফরের বাচ্চা’, ‘ব্যারিকেড চারিদিক’, ‘সারাদিন পর’, ‘উল্টারাত পাল্টাদিন’ প্রভৃতি ইত্যাদি। এর মধ্যে ‘ইদানীং তিনি ভদ্রলোক’ খুবই জনপ্রিয় একটি নাটক। তিনি শুধু মঞ্চে থেমে থাকেননি। আশির দশকে দেশকে নিয়ে বানিয়েছিলেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘বখাটে’ ও ‘বিজয় নব্বই’। যুক্ত ছিলেন গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনের সঙ্গে। পাশাপাশি প্যাকেজ নাটকের আন্দোলন, সম্মিলিত জোট গঠনের আন্দোলন, শর্ট ফিল্ম মুভমেন্টসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। বাংলাদেশে এ্যাকশন থ্রিলার ড্রামার রূপকার তিনি। তার হাতে নির্মিত হয় পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে নাটক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে থিম সং ও টিভি ফিলার। চলচ্চিত্র, মঞ্চ ও টিভিতে তার সান্নিধ্যে এসে অনেকেই সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। সম্প্রতি নতুন একটি কাজ নিয়ে আবারও সরব হয়েছেন গুণী এই নির্মাতা। আগামী ১৪ ডিসেম্বর মুক্তি পেতে পাচ্ছে তার প্রযোজনা ও পরিচালনায় চলচ্চিত্র ‘রাত্রির যাত্রী’। চলচ্চিত্রের উন্নয়ের জন্য দেশের তিন শত সংসদীয় আসনে সংসদ সদস্যদের উদ্যোগে তিন শত সিনেপ্লেক্স দাবি করেছেন তিনি। ডিজিটাল বাংলাদেশের চিন্তাধারাকে আরও প্রসারিত হলে সত্যিকারের মানসিকতা থেকে এ প্রস্তাবকে যতদ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ ততটাই টেকসই অবস্থানে পৌঁছাবে বলে মনে করছেন এই নির্মাতা। এ প্রসঙ্গে হাবিবুল ইসলাম হাবিব বলেন, চলচ্চিত্র শিল্প এখন বড় ধরনের সঙ্কটের মুখে আছে। বিশেষ করে প্রদর্শন ক্ষেত্র ক্রমশই সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। রাজশাহীর সর্বশেষ সিনেমা হলটিও ভেঙ্গে ফেলার নোটিস লাগানো হয়েছে। যদিও সব মহলের চাপে সিনেমা হল মালিক বলেছেন, সেখানে একটি সিনেপ্লেক্সও হবে। এটা কি শুধুই আশ্বাস নাকি সত্যিই তার বক্তব্য বাস্তবায়ন হবে, তা নিয়ে প্রযোজক পরিবেশকরা সন্দিহান। দেশের আরও কয়েকটি জেলায় সিনেমা হল নেই বললেই চলে। এক সময় দেশে ছিল এক হাজার ৩০০ সিনেমা হল। এখন সেটা নেমে এসেছে সাড়ে তিন শ’তে। সমস্যা হচ্ছে প্রদর্শন ক্ষেত্র যতই সঙ্কুচিত হয়ে আসছে, চলচ্চিত্রের নির্মাণ ব্যয় ততই বেড়ে যাচ্ছে। শিল্পীরা পারিশ্রমিক বাড়িয়ে দিয়েছেন। শাকিব খানকে নিয়ে চলচ্চিত্র বানাতে গেলে নির্মাণ ব্যয় হয়ে যায় দেড় থেকে দুই কোটি টাকা। কিন্তু সেই টাকা উঠে আসার মতো প্রদর্শনী ক্ষেত্র নেই। এমনটা চলতে থাকলে এদেশে আর চলচ্চিত্র বলে কিছু থাকবে না। সিনেমা হলে দর্শক কমে গেছে একথা সত্যি। এছাড়া সামাজিক পরিস্থিতিতেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় ইংরেজী মিডিয়াম স্কুলের ছড়াছড়ি। চলচ্চিত্রের প্রতি তাদের একটা উন্নাসিকতা রয়েছে। তাদের পিতামাতারাও ব্যস্ত থাকে কাজ নিয়ে। এছাড়া ছুটিতে লোকজন গ্রামের বাড়িতে চলে যায় আত্মীয়-পরিজনের কাছে। তারা সে সময় চলচ্চিত্র দেখা নিয়ে তেমন একটা আগ্রহী হয় না। তার মতে, তিন শ’ সংসদীয় আসনে যদি সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করা যায়, তাহলে নতুনভাবে দর্শকের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব এই অঙ্গনটাকে। তিনি বলেন, সিনেপ্লেক্সগুলো হবে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত। সেখানে ফুড কর্নার, জিমনেসিয়াম ও শিশুদের জন্য আলাদা খেলার পার্ক সুবিধা। সময়ের সঙ্গে দর্শক রুচিরও পরিবর্তন ঘটেছ। তাই মাকড়সাজাল আর ছাড়পোকা বোঝাই হলে গিয়ে চলচ্চিত্র উপভোগ করতে চান না। সে কারণেই দর্শক এখন পরিবেশ খোঁজে। আর সিনেপ্লেক্সগুলো সরকারী খরচে তৈরি করলেও সেগুলো পরিচালনা করবে বেসরকারী কোন সংস্থা। কারণ আমাদের দেশে সরকারী সংস্থাগুলো ষড়যন্ত্র করে লোকসান দেখানো হয়। আর এগুলোর নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সংস্থার হাতে থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
×