ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিষিদ্ধ হোক

প্রকাশিত: ০৩:২৭, ৫ নভেম্বর ২০১৮

নিষিদ্ধ হোক

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তির আস্ফালন দেশবাসী কখনও মেনে নেয়নি। নিতে পারে না। কিন্তু সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখল করে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী এবং সাম্প্রদায়িক ও বাঙালীর চিহ্নিত শত্রুকে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করার মতো ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে। শুধু তাই নয়, সামরিক শাসকের উত্তরসূরিরা ক্ষমতায় এসে এই যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতার অংশীদার করেছে, তাদের গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানোর ব্যবস্থাও করেছে। এই দানব শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সংবিধানে বিশ্বাসী নয়। আর তা নয় বলেই রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য ধর্মব্যবসায়ী জামায়াতে ইসলামী যে আবেদন করেছে, তা গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ বিরোধী। নির্বাচন কমিশন কোন বিবেচনা ছাড়াই নিবন্ধন দেয়। রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেয়া নিবন্ধনের বৈধতা ‘চ্যালেঞ্জ’ করে ২০০৯ সালে রিট আবেদন করা হয়। বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের পক্ষে মহাসচিব এই রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুল জারি করে। এরপর ২০১৩ সালে হাইকোর্টের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে। আপীল বিভাগে জামায়াতের পক্ষ থেকে আপীল আবেদন করা হয়। তাই নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারেনি। পাঁচ বছর পর রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পর অবশেষে নিবন্ধন বাতিল করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে কমিশন। এর ফলে দলটি দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নিয়ে আর কোন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। জামায়াত গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুসারে শর্তপূরণ করেনি। অর্থাৎ তারা বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের আইন মানতে রাজি নয়। যেমন তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে না নিলেও স্বাধীন দেশে সব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছিল। জামায়াতে ইসলামীর সূচনা হয় উপমহাদেশের বিতর্কিত ধর্মীয় রাজনৈতিক আবুল আলা মওদুদীর নেতৃত্বে ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট। তখন নাম ছিল জামায়াতে ইসলামী হিন্দ। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মুসলিম পারিবারিক আইনের বিরোধিতা করায় ১৯৬৪ সালে দলটিকে নিষিদ্ধ করা হলেও পরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। এর আগে ১৯৫৯ সালে মওদুদীর সাম্প্রদায়িক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এমনকি মওদুদীর ফাঁসির দণ্ড হয়েছিল। জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে দেশজুড়ে গণহত্যা চালায়। রাজাকার, আলবদর, আলশামস নামে বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনী গঠন করে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট-অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপকর্ম চালায়। পাকিস্তানের সংহতি ও ইসলাম রক্ষার নামে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে। যা এখনও চালাচ্ছে। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার সাম্প্রদায়িক ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করায় তাদের রাজনৈতিক তৎপরতা বন্ধ থাকে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ক্ষমতা দখলকারী সামরিক শাসক জিয়া রাজাকারদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে জামায়াতসহ ধর্ম ব্যবসায়ী দলগুলোকে আবার প্রকাশ্য রাজনীতি করার সুযোগ দেয়। এরপর তারা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত হয়। তাদের নেতা যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম একাত্তরে পাকিস্তানে পালিয়ে যায়। নাগরিকত্বহীন তাকে দেশে ফিরিয়ে আনে জিয়া। পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধারের জন্য এই গোলামের তৎপরতা সর্বজনবিধিত। শেখ হাসিনার সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে। অনেকের দণ্ড ও সাজা হয়। একাত্তরের ভূমিকার জন্য জামায়াতকে ক্রিমিনাল দল হিসেবে আখ্যায়িত করে একটি রায়ে বলা হয়েছিল, দেশের কোন সংস্থার শীর্ষ পদে স্বাধীনতা বিরোধীদের থাকা উচিত নয়। একাত্তরে দেশ ও গণবিরোধী ভূমিকা এবং গণহত্যায় জড়িত থাকার পরও বিএনপি দলটিকে ক্ষমতায় অংশীদার করে এবং পরম আত্মীয় বলে অভিহিত করে। জামায়াতের রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার জন্য জনগণ দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে আসছে। কর্তৃপক্ষের উচিত শুধু নিবন্ধন বাতিল নয়, জামায়াতকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হোক। দেশ এবং জগণের স্বার্থে ও স্বাধীনতা রক্ষায় জামায়াতসহ সাম্প্রদায়িক সব দল নিষিদ্ধ প্রয়োজন।
×