ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধ ৪০ বাংলাদেশীকে ফেরত পাঠাচ্ছে জার্মানি

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৪ নভেম্বর ২০১৮

অবৈধ ৪০ বাংলাদেশীকে ফেরত পাঠাচ্ছে জার্মানি

ফিরোজ মান্না ॥ বাংলাদেশের অবৈধ অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে জার্মানি। আগামী ২৯ নবেম্বর অবৈধ ৪০ জন বাংলাদেশীকে জার্মানির বিশেষ বিমানে ঢাকায় পাঠানো হবে। অবৈধ বাংলাদেশীদের ফেরানো সংক্রান্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তির আওতায় তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের নাগরিকরা সাগর পথসহ নানাভাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গিয়েছে। ২০১৫ সালের দিকে বেশির ভাগ অভিবাসী ইউরোপে প্রবেশ করে। তাদের ফেরত পাঠানোর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করে চলছে। সূত্র জানিয়েছে, জার্মানিতে বৈধ হওয়ার চেষ্টায় দীর্ঘ আইনী লড়াইয়ে হেরে যাওয়া ৪০ বাংলাদেশী স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার সুযোগ নেননি। ফলে জার্মান সরকার তাদের অনেকটা জোর করেই দেশে পৌঁছে দিচ্ছে। বিশেষ বিমানটিতে জার্মান পুলিশের কর্মকর্তা, চিকিৎসক এবং দোভাষী থাকবেন। বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে ৪০ অবৈধ অভিবাসীকে তাদের হস্তান্তর করেই ফিরতি ফ্লাইটে জার্মান পুলিশের কর্মকর্তা, চিকিৎসক এবং দোভাষীরা ঢাকা ছেড়ে যাবেন। স্বেচ্ছায় ফিরতে রাজি না হওয়া ওই অবৈধ বাংলাদেশীরা ইইউর সঙ্গে সই হওয়া চুক্তির আওতায় কোন সুবিধা পাবেন না। প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিউর (এসওপিতে) বৈধতার আইনী লড়াইয়ে হেরে যাওয়া বাংলাদেশীরা স্বেচ্ছায় দেশে ফিরলে পুনর্বাসনের আওতায় মোটা অঙ্কের অর্থ পাওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। আইওএম’র মাধ্যমে অনেকেই এ সুবিধা পেয়েছেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, জার্মানিতে বৈধভাবে কর্মী নিয়োগ হয় না। যারা দেশটিতে গেছেন তারা দালাল চক্রের মাধ্যমে গেছেন। আবার কেউ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ থেকে সাগর পথে জার্মানিতে গিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় তেমন কিছুই বলতে পারবে না। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী যেটা জানা গেছে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ৮০ হাজারের মতো অবৈধ বাংলাদেশী রয়েছে। এই অবৈধ অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠাতে দীর্ঘদিন ধরেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাজ করে যাচ্ছে। বহু অভিবাসী রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছে। তাদের বিষয়ে এখনও কোন ফয়সালা হয়নি। যারা আদালত থেকে বৈধতা পাচ্ছেন তারাই শুধু থেকে যাবেন। বাকিদের পর্যায়ক্রমে দেশে ফেরত পাঠানো হবে। জার্মানিতে ৬ শ’র ওপরে বাংলাদেশী রয়েছেন। অবৈধ বাংলাদেশীরা দেশটিতে নানা পথে গিয়েছেন। ২০১৫ সাল থেকে আলোচনা শুরু হয়েছে অবৈধ অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠানোর। ইউরোপের অন্যান্য দেশে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী রয়েছে। জার্মানিতেই সবচেয়ে কম বাংলাদেশী রয়েছে। তবে জার্মান সরকার অর্ধেকের বেশি অভিবাসীকে নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই করেছে। এরই মধ্যে তাদের ট্রাভেল ডকুমেন্টও ইস্যু করেছে বার্লিনের বাংলাদেশ দূতাবাস। সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের নবেম্বরে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যে এসওপি বা চুক্তি সই হওয়ার পর থেকে দুই ধাপে গত ডিসেম্বরে ৩৬ জন এবং এপ্রিলে ৩১ জনকে দেশে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। তৃতীয় দফায় আরও ৪০ জন ফিরবেন। ৪০ জন দেশে ফেরার পরও আরও এক শ’ জনকে দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করবে দেশটির কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে ওই এক শ’ জনের তালিকা তৈরি করেছে ইমিগ্রেশন বিভাগ। তবে এই এক শ’ জনের মধ্যে অনেকেই আবার স্বেচ্ছায় দেশে ফিরছেন। মানবপাচার ও অভিবাসন নিয়ে কাজ করে এমন কয়েকটি সংগঠন বলেছে, বেশির ভাগ মানবপাচার হয় মালয়েশিয়া, ভারত, পাকিস্তানসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে। এক শ্রেণীর দালালের মাধমে তারা বেশি বেতনের চাকির লোভে বিদেশ যাচ্ছে। এতে বৈধ শ্রমবাজারের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এখানে থেকে উত্তরণ না ঘটাতে পারলে দেশের বহু মানুষ নিঃস্ব সর্বস্বান্ত হয়ে পড়বে। সরকার মানবপাচার প্রতিরোধ আইন করলেও তার প্রয়োগ হচ্ছে না বলেই চলে। ‘ন্যাশনাল লেভেল শেয়ারিং ফর এডাপশন অব কমপ্রিহেনসিভ ল’ এগেইনস্ট ট্রাফিকিং ও রিফিউজি এ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) জানিয়েছে, অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে না পারলে বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজার হারাতে হতে পারে। সমুদ্রপথে টেকনাফ থেকে মালেশিয়ায় অনিয়মিত অভিবাসন দেশের সার্বিক অভিবাসনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ভারত ও পাকিস্তানে বেশিরভাগ পাচার হচ্ছে নারী। এদের জীবন সবচেয়ে দুর্বিষহ। পাচারকারীরা সংশ্লিষ্ট দেশের দালালদের কাছে তাদের বিক্রি করে দেয়। দালালদের হাতে পড়ার পর তাদের জায়গা হয় যৌন পল্লীতে। অথবা অন্য কোন স্থানে আটকে রেখে তাদের ওপর চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন। এখন শুরু হয়েছে লিবিয়াতে পাচার। লোভ দেখানো হচ্ছে-লিবিয়া থেকে সাগর পথে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চাকরির। লোভে পড়ে মানুষ দালালদের ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা তুলে দিয়ে অনিশ্চিত জীবনে চলে যাচ্ছে। কেউ হয় তো লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে। তবে বেশির ভাগই ঠাঁই হয় বিভিন্ন দেশের জেলখানায়। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের এক ঘোষণায় জার্মান সরকার সব অনিবন্ধিত অভিবাসীকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে উদ্যোগী হয়। যারা বৈধতা পাওয়ার আইনী লড়াইয়ের শেষ ধাপ অতিক্রম করেছেন ওই অবৈধদের ফেরাতে জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ায় এবং চাপ তৈরি করে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অবৈধ অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত নেয়ার জন্য চুক্তি না করলে ইউরোপ ভ্রমণে ওই সব দেশের অন্যদের ভিসা কঠোর করার হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়েছে।
×