ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় পার্টির সংলাপ কাল ॥ কী চাইবেন এরশাদ?

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৪ নভেম্বর ২০১৮

জাতীয় পার্টির সংলাপ কাল ॥ কী চাইবেন এরশাদ?

রাজন ভট্টাচার্য ॥ গণফোরামের ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সংলাপ শেষ হয়েছে। সংলাপ নিয়ে অসন্তুষ্টির কথা ইতোমধ্যে উঠে এসেছে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মুখ থেকে। যুক্তফ্রন্ট নেতারা বলছেন, তারা সংলাপ নিয়ে আশাবাদী। নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথাও তারা ঘোষণা দিয়েছেন। সেইসঙ্গে বিকল্পধারা আগামী নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে সংসদে এমপি দেখতে চাওয়ার কথাও সংলাপে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেছে। এবার সংলাপের পালা বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে। পাঁচ নবেম্বর সন্ধ্যায় গণভবনে দলটিকে সংলাপের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেখানে জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের নেতৃত্বে গঠিত সম্মিলিত জাতীয় জোট (ইউএনএ) প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। আজ ১৪ দলের শরিক নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংলাপে বসার কথা আছে। সাত নবেম্বরের মধ্যে সংলাপ শেষ করতে চায় সরকার। সংলাপে কি চাইবেন এরশাদ। এ নিয়ে রাজনীতির মাঠে আগ্রহ বেশ। চলছে নানা আলোচনা। গুঞ্জন। নাকি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মতো সরকারের সঙ্গে জাপার সংলাপও খুব একটা আশা জাগাবে না। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের একাধিক সদস্য সাংগঠনিক সম্পাদক সহ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একেবারেই ভিন্ন ধারার দাবি দাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপ করবে জাপা। যেখানে ঐক্যফ্রন্ট ও যুক্তফ্রন্টের মতো তেমন কোন দাবি দাওয়া থাকবে না। উল্লেখ্য, ঐক্যফ্রন্ট ও যুক্তফ্রন্ট উভয় পক্ষ থেকে সংলাপে সাত দফা দাবি দাওয়া তুলে ধরা হয়। এরমধ্যে ঐক্যফ্রন্টের তিন দাবির সঙ্গে উভয়পক্ষ অনেকটা কাছাকাছি এসেছে। বাকি চার দাবির বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়েছে, সাংবিধানিক ও আদালতের ইস্যুতে সরকারের করণীয় কিছু নেই। যুক্তফ্রন্টের বেশিরভাগ দাবি সরকার মেনে নিয়েছে বলে ফ্রন্ট নেতারাই দাবি করেছেন। বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, আমাদের উত্থাপিত সাত দফার সবক’টি যৌক্তিক বলেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আশাকরি আমাদের দাবি দাওয়া বাস্তবায়ন হবে। আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ার কথাও জানান তিনি। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতারা জানিয়েছেন, তারা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। অন্য কোন দল নির্বাচনে অংশ না নিলেও জাতীয় পার্টি দেশে কোন সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হতে দেবে না। তাই দলের প্রার্থী তালিকা তৈরি করা হয়েছে ৩০০ আসনে। গঠন করা হয়েছে পার্লামেন্টারি বোর্ডও। ইতোমধ্যে দল প্রধান এরশাদ বিএনপি না এলে একক নির্বাচন করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, তবে রাজনৈতিক বাস্তবতায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে। এর আগে এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করে আগামী নির্বাচনে ৮০টি আসন ও ১০জন মন্ত্রী চেয়েছেন। নির্বাচনকালীন সরকারে জাপা থেকে তিনজনকে মন্ত্রী করার তালিকা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর হাতে। পাশাপাশি জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ১০০ আসনের প্রার্থী তালিকাও ক্ষমতাসীন দলের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। জাপা সূত্রে জানা গেছে, সংলাপে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মূলত আসন ভাগাভাগি নিয়ে দর কষাকষি করবেন এরশাদ। তবে নির্দিষ্ট করে আসন চাইবেন না তিনি। কত আসন জাতীয় পার্টিকে দেয়া উচিত তা প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনার ওপর ছেড়ে দেয়া হবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর পক্ষ থেকে সন্তোষজনক আসন দেয়ার ঘোষণা এলে জাপা তা মেনে নেবে। সেইসঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগের পাশে থেকে নির্বাচন করারও প্রতিশ্রুতি দেবেন এরশাদ। বিএনপি নির্বাচনে এলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট গঠনের মধ্য দিয়ে আসন ভাগাভাগি করে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় জাপা। আর বিএনপি না এলেও সমঝোতার ভিত্তিতে আসন ভাগাভাগি করে শক্তিশালী বিরোধী দল গঠনের ইচ্ছার কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন এরশাদ। মূল বিষয় হলো- বিএনপি নির্বাচনে আসুক আর না আসুক জাতীয় পার্টি শক্তিশালী বিরোধী দলে গিয়ে রাজনীতিতে টিকে থাকতে চায়। আওয়ামী লীগ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ফের ক্ষমতায় এলে জাপার পক্ষ থেকে ২০ জনের বেশি মন্ত্রী চাওয়া হতে পারে। দল প্রধান হিসেবে এরশাদকে সম্মানজনক পদ দেয়ারও দাবি জানানো হবে সংলাপে। সূত্রে জানা গেছে, চলমান রাজনীতি, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা, এরশাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মামলা প্রত্যাহারসহ জাতীয় পার্টিকে সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা দেয়ার দাবি জানানো হবে। বিনিময়ে আওয়ামী লীগের পাশে থাকবে জাতীয় পার্টি। ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে জাতীয় পার্টির কোন আপত্তি না থাকার কথাও সংলাপে তুলে ধরা হবে। সাংবিধান কোন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে অন্য দলগুলোর মতো জাপা প্রস্তাব দেবে না। জাপা নেতারা বলছেন, বর্তমানে দেশের রাজনীতিতে তৃতীয় বৃহত্তর রাজনৈতিক দল এরশাদের জাপা। তাই বিএনপি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে আওয়ামী লীগ জনপ্রিয়তার দিক থেকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি যদি সমর্থন দেয় তাহলে রাজনীতির মাঠে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী অবস্থান হয় আওয়ামী লীগের। এসব বিবেচনায় নিয়েই আওয়ামী লীগের সঙ্গে দেনা পাওনায় সোচ্চার থাকবেন জাপা নেতারা। তারা বলছেন, উভয় পক্ষ নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করে সংলাপে ছাড় দিলে ঐক্য অটুট থাকবে। শনিবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী দাওয়াত দিয়েছেন। আমরা দাওয়াতে অংশ নেব। আলোচনা করব, বলব কতটি আসন দেবেন। আমার মনে হয় তিনি কথা রাখবেন। আর যদি না রাখেন তাহলে সেভাবে ব্যবস্থা নেব। এরশাদ বলেন, আমরা কোন তালিকা দেব না, একটি জোট সংলাপে গিয়ে তালিকা দিয়েছে। সংবিধান সংশোধন হয়েছে তাদের এসব দাবি মানা সম্ভব না। যে কারণে সংলাপ ব্যর্থ হয়েছে। এরশাদ আরও বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা সংবিধান সম্মত নয়। অযৌক্তিক। এটা আমি হলেও মানতাম না। তিনি বলেন, আমাকে বিনা বিচারে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল। উনি (খালেদা জিয়া) এখন কোথায়, উনি এখন জেলে। উনি আর বের হতে পারবেন না। তার ছেলেও দেশে আসতে পারবে না। এবার সুযোগ এসেছে মাঠে আর কেউ নেই। এখন শুধু জাতীয় পার্টি আর আওয়ামী লীগ। আমার বিশ্বাস জাতীয় পার্টি ভাল করবে। আপনারা সঙ্গে থাকলে জাতীয় পার্টি ভাল করবে। জানতে চাইলে জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলার বলেন, আশাকরি সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপ হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন ঘিরে নানা জল্পনা কল্পনা দাবি দাওয়ার সমাধান হবে এই সংলাপের মধ্য দিয়ে। তিনি বলেন, আমরা দেশবাসীর পক্ষ থেকে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানাব। কারণ সুষ্ঠু নির্বাচন করার দায় সরকারের একার নয়। বিরোধী দল হিসেবে সে দায় আমরাও এড়িয়ে যেতে পারি না। সবার হয়ে আমরা সংলাপে দাবি দাওয়ার কথা বলব। আশাকরি আমাদের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে দেশবাসী নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক বার্তা পাবে। সংলাপে জাপার আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে জাপা প্রেসিডিয়ামের সদস্য অধ্যাপক দেলওয়ার হোসেন খান বলেন, আসন ভাগাভাগির বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এছাড়াও বিএনপি নির্বাচনে এলে জাপা আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবে। চলমান রাজনীতি, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় আসতে পারে বলে জানান তিনি।
×