ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জেলহত্যা দিবসে জঙ্গীবাদমুক্ত অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার অঙ্গীকার

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৪ নভেম্বর ২০১৮

জেলহত্যা দিবসে জঙ্গীবাদমুক্ত অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার অঙ্গীকার

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শহীদ চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে স্মরণ করল কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল থাকা, পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকর করার দাবি এবং শহীদদের কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি, আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলসহ নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শনিবার ঢাকাসহ সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে শোকাবহ জেলহত্যা দিবস। দেশের ইতিহাসে অন্যতম বর্বরোচিত এই কালো অধ্যায়টিকে স্মরণ করে দেশবাসী। দিবসটির প্রতিটি অনুষ্ঠানেই একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসরদের আগামী নির্বাচনসহ সর্বক্ষেত্রে পরাজিত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্য-সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। সকাল ৭টায় প্রধানমন্ত্রী ধানম-িতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতিকে সম্মান জানাতে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। পরে ধানম-ির ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা জানানোর সময় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর পুত্র ও দলের সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, ড. আবদুর রাজ্জাক, এ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, একেএম এনামুল হক শামীম, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল উপস্থিত ছিলেন। সকাল ৮টায় আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল বনানী কবরস্থানে জাতীয় তিন নেতা শহীদ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। বনানী কবরস্থানে পবিত্র ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় চারনেতার মধ্যে এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে রাজশাহীর কাদিরগঞ্জে তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে সেখানেও অনুরূপ কর্মসূচী পালিত হয়। সকালে নাজিম উদ্দিন রোডে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যাকা-স্থল ‘মৃত্যুঞ্জয়ী কক্ষ’ পরিদর্শন এবং জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, দেশের মানুষ কোন বিশৃঙ্খলা দেখতে চায় না। কোন অবস্থায় ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা কঠোরভাবে মোকাবেলা করবে। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। পাশাপাশি আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের দিক দিয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্ষমতা অর্জন করেছে। কাজেই নির্বাচন কেন্দ্র করে কেউ যদি বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা মোকাবেলা করবে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও জাতীয় চার নেতার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, যুবলীগ উত্তর ও দক্ষিণ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, ছাত্রলীগ উত্তর ও দক্ষিণ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, বাস্তুহারা লীগ, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন দল অসংখ্য সংগঠন। দিবসটি পালন উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়সহ দেশের সর্বত্র সংগঠনের শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো পতাকা উত্তোলন এবং কালোব্যাজ ধারণ করা হয়। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বনানীতে জাতীয় তিন নেতার মাজার এবং ১৫ আগস্টের শহীদদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বাসভবন মনসুর ভবনে মিলাদ-মাহফিল ॥ এদিকে শহীদ এম মনসুর আলীসহ জাতীয় চার নেতার রুহের মাগফেরাত কামনায় শনিবার বাদ মাগরিব স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের ধানম-ির বাসভবনে (বাড়ি নং-৪০/এ, পুরাতন-৩৩১/বি. রোড-১১ (পুরাতন-৩৩) ধানম-ি) মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মিলাদ মাহফিলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ছাড়াও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের সভাপতি ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, বনানী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর মোশাররফ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মিলাদ মাহফিলের শুরুতে নেতৃবৃন্দ জাতীয় চার নেতার স্মৃতিচারণ করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
×