ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদাকে জেলে রেখে নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে কট্টরপন্থীরা;###;কয়েক সিনিয়র নেতার দল ছাড়ার আশঙ্কা

বিএনপিতে বিভক্তি ॥ প্রসঙ্গ নির্বাচনে অংশগ্রহণ

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৪ নভেম্বর ২০১৮

বিএনপিতে বিভক্তি ॥ প্রসঙ্গ নির্বাচনে অংশগ্রহণ

শরীফুল ইসলাম ॥ তফসিল না পেছালে বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাবে কি যাবে না এ নিয়ে দলের নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এক পক্ষ বলছে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে থাকা ও দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত সভা-সমাবেশ করতে না পারায় স্বল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব নয়। আর অপর পক্ষ বলছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না গিয়ে রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে যে খেসারত দিতে হয়েছে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আর ভুল করা যাবে না। এমন দোটানার মধ্যে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলে ক’জন সিনিয়র নেতা দল ছাড়তে পারেন বলে আশঙ্কা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সংলাপের পর থেকে এর ফলাফল নিয়ে শুরু হয় বিএনপি শিবিরে নানান আলোচনা-সমালোচনা। দলীয় হাইকমান্ড থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরে এ সংলাপের লাভ-ক্ষতি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলতে থাকে। সংলাপে প্রত্যাশা অনুসারে ভাল কিছু অর্জন করতে না পারায় দলের সর্বস্তরে হতাশা নেমে আসে। তারপরও বাস্তবতার নিরিখে দলের কোমলপন্থী নেতারা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা আদায় করে মোটামুটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ পেলে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নেয়। অপরদিকে খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দী রেখে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে গিয়ে তেমন সুবিধা করা যাবে না বলে যুক্তি দিয়ে দলের কট্টরপন্থী নেতারা নির্বাচন থেকে দূরে থাকার পক্ষে অবস্থান নেয়। তবে তফসিল পিছিয়ে দিলে এবং নিয়মিত কর্মকা-ের মাধ্যমে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ পেলে তারাও নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে। তাই বিএনপির পরামর্শে ইতোমধ্যে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে সংলাপ শেষ না হওয়ার আগে তফসিল ঘোষণা না করার অনুরোধ করেছে। সূত্র মতে, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ৮ নবেম্বরের মধ্যেই তফসিল ঘোষণার কাজ শেষ করতে চায় নির্বাচন কমিশন। তার আগেই ৭ নবেম্বর সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সংলাপ শেষ করবেন বলে জানা গেছে। তাই বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের ছোট একটি টিম আগ্রহ প্রকাশ করলে ৭ নবেম্বরের মধ্যেই আবারও সংলাপের ব্যবস্থা করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী বিএনপি নেতাদের একাংশ আরও সংলাপের পক্ষে অবস্থান নিলেও অপর অংশ আর সংলাপে অংশ নিতে আগ্রহী নয়। তারা সংলাপ না পেছালে নির্বাচনের বিপরীতে রাজপথে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে যেতে চান। আর আওয়ামী লীগসহ দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই সংবিধান অনুসারে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন করতে আগ্রহী। এ পরিস্থিতিতে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে বিএনপি যদি তফসিল পেছানোর বিষয়ে কোন সমঝোতায় পৌঁছতে পারে সে ক্ষেত্রে বাস্তবতার আলোকে নির্বাচন কমিশন কিছুদিন সময় নিয়ে তফসিল ঘোষণা করতে পারে। তা না হলে ৮ নবেম্বরের মধ্যেই তফসিল ঘোষণা হয়ে যেতে পারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের জনগণের দাবি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এমন একটি নির্বাচনের জন্য যদি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল পিছিয়ে দেয়া প্রয়োজন হয় তাই করা উচিত। মূল কথা হচ্ছে, যেভাবে নির্বাচন করলে জনগণের সুবিধা হবে, তারা সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট দিতে পারবে তাই করা উচিত। জানা যায়. প্রধানমন্ত্রীসহ ১৪ দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের সংলাপের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে দ্বিধাবিভক্তি দেখা দিয়েছে। তবে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই কোন অজুহাতেই নির্বাচন থেকে দূরে থাকার পক্ষে নয়। এ পরিস্থিতিতে তফসিল না পেছানোসহ কোন কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলে বিএনপি নেতাদের মধ্যে একটি বড় অংশ দল ত্যাগ করে হলেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। উল্লেখ্য, ১ নবেম্বর গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ ১৪ দলের ২৩ নেতার সঙ্গে সাড়ে ৩ ঘণ্টাব্যাপী সংলাপ করে বিএনপির ৭ নেতাসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ২০ জন। এ সময় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার বিষয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনায় বিএনপি নেতারা ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবির ওপর বেশি জোর দেন। কিন্তু এ ৭ দফা দাবির অধিকাংশ বিষয় সংবিধান, আদালত ও নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত হওয়ায় সংলাপের আলোচনায় সমাধান সম্ভব নয় বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তবে যেগুলো সরকারের এখতিয়ারে পড়ে এমন কিছু বিষয়ে আলোচনার পর সমাধানের কথা তিনি ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের জানিয়ে দেন। সংলাপ শেষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সন্তুষ্ট হতে পারেননি বলে মন্তব্য করে সাতদফা দাবিতে রাজপথে আন্দোলন চলবে বলে সাংবাদিকদের জানান। তবে তিনি এও বলেন, একদিনের সংলাপে সবকিছু পাওয়া যায় না, প্রয়োজনে আরও সংলাপ হতে পারে। এদিকে শনিবার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ৭ নবেম্বরের পর আর কোন সংলাপ হবে না। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, লোক দেখানো সংলাপে অংশ নিয়ে ভেতরে ভেতরে অন্য প্রস্তুতি নিলে সেই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আওয়ামী লীগও প্রস্তুত রয়েছে। নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি কেউ যদি নাশকতার ছক আঁটেন, তারপর যদি সহিংসতার দিকে পা বাড়ান তার সমুচিত জবাব দেয়ার জন্য আমরা সতর্ক আছি। অপরদিকে বিএনপির মুখপাত্র ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের সংলাপে সরকারের একগুঁয়েমি মনোভাব গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বড় ধরনের অশনি সঙ্কেত। সংলাপে মানুষের মনে যে আশাবাদ জেগে উঠেছিল, সংলাপ শেষে সেই আশার মুকুল ঝরে যেতে শুরু করেছে। সংলাপে ৭ দফা দাবির প্রতি সাড়া না দেয়ায় সুষ্ঠু নির্বাচনের অগ্রগতি তিমিরাচ্ছন্ন হলো। রুহুল কবির রিজভীর এ বক্তব্যের মাধ্যমে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে বিএনপির মনোভাব কি হতে পারে তা স্পষ্টতই ফুটে উঠেছে। অবশ্য রুহুল কবির রিজভী বিএনপিতে কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত। তাই তার এমন বক্তব্যের সঙ্গে কোমলপন্থী নেতারা একমত নাও হতে পারেন বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন। সংলাপের আগে ১ নবেম্বর মহানগর নাট্যমঞ্চে বিএনপি আয়োজিত মানববন্ধনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ ক’জন সিনিয়র নেতা খালেদা জিয়াকে ছাড়া তাদের দল নির্বাচনে যাবে না বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। পরে ১৪ দলের সঙ্গে সংলাপেও তারা বিষয়টি স্মরণ করে দেন। কিন্তু সংলাপে এ বিষয়ে কোন সফলতা অর্জন করতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রীসহ ১৪ দলের নেতারা আদালতের বিষয় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে হওয়া মামলার বিষয়ে কিছু করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। মূলত এ কারণেই সংলাপ শেষে বিএনপির কট্টরপন্থী নেতারা তফসিল না পেছালে নির্বাচনে না যাওয়া এবং দ্বিতীয়বার ১৪ দলের সঙ্গে সংলাপে না যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। বিএনপিতে কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। সংলাপে সফলতা আসবে না এমন আশঙ্কা করে ২১ জনের নামের তালিকায় থাকার পরও তিনি গণভবনে যাননি বলে বিএনপি নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। তবে সংলাপের আগে গয়েশ্বর অসুস্থ ছিলেন বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। জানা যায়, সংলাপ করে দাবি আদায় করা যাবে না বলে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ বিএনপির আরও ক’জন সিনিয়র নেতা আগেই দলের হাইকমান্ডকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ক’জন সিনিয়র নেতার আগ্রহে শেষ পর্যন্ত ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে বিএনপি গণভবনের সংলাপে গিয়েছে। বিশেষ করে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে গণভবনে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানানোর পরও সে আমন্ত্রণে সাড়া না দেয়ায় বিএনপি রাজনৈতিকভাবে যে সমালোচনার মুখে পড়ে ছিল এবার যাতে সে অবস্থা না হয় সেজন্যই ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সংলাপে যায় বিএনপি। তবে সংলাপের পর তেমন কিছু অর্জন করতে না পারায় দলের একাংশের নেতাকর্মীরা এখন সংলাপের অর্জন নিয়ে বিরূপ সমালোচনা করছেন। সূত্র জানায়, সংলাপ আবার হলেও সরকার বিএনপিকে খুব বেশি ছাড় দেবে না বলে মনে করছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ পরিস্থিতিতে দলের কট্টরপন্থী নেতারা আর সংলাপের আশায় বসে না থেকে ৭ দফা দাবিতে রাজপথের কর্মসূচী জোরদারের প্রস্তুতি নেয়ার পক্ষে। ৬ নবেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐক্যফ্রন্টের জনসভা থেকে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করতে বিএনপির পক্ষ থেকে চাপ বাড়ছে। কোন কারণে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন কঠোর আন্দোলন কর্মসূচীর পক্ষে সায় না দিলে বিএনপি যেন ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করে সে চেষ্টা তারা চালিয়ে যাচ্ছে। দলের এ অংশের নেতারা লন্ডন প্রবাসী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। অপরদিকে বিএনপির কোমলপন্থী নেতারা সরকারী দলের সঙ্গে আরও সংলাপ করে ন্যূনতম কিছু দাবি দাওয়া আদায় করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে। কোন কারণে বিএনপির সিদ্ধান্ত নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে হলে এ অংশের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে ক’জন দল ছাড়তে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে তাদের সঙ্গে সম্প্রতি সংস্কারপন্থী যে ১৩ নেতা দলে ফিরে এসেছেন তাদের অনেকেই আবারও দল ছেড়ে যেতে পারেন। এমনটি হলে আবারও নতুন করে রাজনৈতিক সঙ্কটের মুখে পড়বে বিএনপি। সূত্র মতে, বিএনপির থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত বুদ্ধিজীবীরা এবং দেশ-বিদেশে যারা শুভাকাক্সক্ষী রয়েছে তারা সবাই চায় বিএনপি যেন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন বর্জনের মতো এবার কিছু না করে। যে করেই হোক মোটামুটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত হলে যেন বিএনপি নির্বাচনে যায়। কারণ এবার নির্বাচন বর্জন করলে দলটি রাজনৈতিকভাবে আরও বেশি বেকায়দায় পড়বে। আর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই দলের কোমলপন্থী নেতারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়া যায় কি না সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জানা যায়, অতীত কর্মকা-ের জন্য সমালোচনাসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহলের চাপে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আপাতত দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী জামায়াতের সঙ্গেও কৌশলে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেছে বিএনপি। এ ছাড়া বাহ্যিকভাবে জামায়াতের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক জোট ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছে বিএনপি। আর এ কারণে এবারই প্রথম জামায়াতকে ছাড়া ইদানিং বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছে। প্রসঙ্গত, ১ নবেম্বর গণভবনের সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দাবির মধ্যে তিনটি দাবির আংশিক বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। এর মধ্যে রয়েছে এখন থেকে সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে, বিদেশী পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়া হবে এবং রাজনৈতিক নেতাদের নামে হয়রানিমূলক মামলায় গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মীদের তালিকা দিলে তদন্ত সাপেক্ষে বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনা করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের আস্বস্ত করেছেন। আর ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফায় থাকা অধিকাংশ বিষয়গুলোই সংবিধান, আদালত ও নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার বলে এসব বিষয়ে সমাধান দেয়ার কোন সুয়োগ নেই বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন। এ কারণে খালেদা জিয়ার মুক্তি, সংসদ ভেঙ্গে দেয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, নির্বাচনের তফসিল পেছানো এবং নির্বাচনকালে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে ১৪ দলের পক্ষ থেকে ঐক্যফ্রন্টকে আশ্বস্ত করা যায়নি। তবে ঐক্যফ্রন্টের ইভিএম-এ ভোট না করার দাবির বিষয়ে কিছুটা নমনীয় অবস্থানে ছিল ক্ষমতাসীন ১৪ দল। সংলাপ শুরুর অনেক আগে থেকেই বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলের আগে যেন সরকার সংলাপ আয়োজন করে। এক পর্যায়ে তারা ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বরাবরে চিঠি লিখে সংলাপের দাবি জানায়। তাদের এ দাবিকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর দলের পক্ষ থেকে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সংলাপে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ জানান। পরে এক এক করে অন্যান্য রাজনৈতিক জোটের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট সংলাপ করে। অবশ্য সংলাপ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বিদেশী কূটনীতিকদের দিয়েও সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ক’জন সিনিয়র নেতা ঢাকায় কর্মরত বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। এর বাইরে দলের ক’জন নেতা ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন। বিএনপি মহাসচিব জাতিসংঘ ও মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরে গিয়েও যোগাযোগ করে এসেছেন। সংলাপের পর আবারও বিদেশী কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছে বিএনপি। এর মাধ্যমে সরকারের অবস্থান কিছুটা নমনীয় করে আরও কিছু দাবি দাওয়া আদায় করতে পারলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে। তা না হলে নির্বাচনের বিষয়ে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
×