ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিরোপা পুনরুদ্ধার করতে পারবে বাংলাদেশ?

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৩ নভেম্বর ২০১৮

 শিরোপা পুনরুদ্ধার করতে পারবে বাংলাদেশ?

রুমেল খান ॥ মাত্র দুই মাসের প্রস্তুতি নিয়ে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছুনো বেশ কষ্টসাধ্য এবং চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। তারপরও সেই কষ্টকর কাজটি সম্পন্ন করার একবারের শেষ ধাপে চলে এসেছে বাংলাদেশ। আজ সাফ অনুর্ধ-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলবে তারা। বাংলাদেশ সময় দুপুর পৌনে ৩টায় নেপালের ললিতপুরের আনফা কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠেয় ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। এই আসরটি শুরুতে ছিল অনুর্ধ-১৬ বছর বয়সীদের নিয়ে (২০১১ সালে)। সেটা অব্যাহত থাকে ২০১৩ এবং ২০১৫ আসরে। ২০১৭ আসর থেকে আসরটি পরিণত হয় অনুর্ধ-১৫ বছর বয়সীদের নিয়ে। ২০১১ সালে প্রথম আসরের সেমিতে এই পাকিস্তানের বাছেই ০-২ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। সে অনুযায়ী পাকিদের সঙ্গে একটি পুরনো হিসেব-নিকেশ আছে বাংলাদেশের। আজ ফাইনালে হারাতে পারলেই প্রতিশোধটা কড়ায়-গ-ন্ডায় নেয়া হয়ে যাবে। সেটা নিতে উদগ্রীব লাল-সবুজরা। পাকিস্তানের সঙ্গে তিনটি ব্যাপারে মিল আছে বাংলাদেশের। দু’দলই এ আসরেই শিরোপা জিতেছে একবার করে। পাকিস্তান ২০১১ সালে, বাংলাদেশ ২০১৫ সালে। আরেকটি সাদৃশ্য হচ্ছেÑ দু’দলই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারতকে হারিয়ে। সর্বশেষ মিল ও মজার ব্যাপার হচ্ছে এবার দু’দলই হারিয়েছে ভারতকে, পাকিস্তান জিতেছে গ্রুপপর্বে, বাংলাদেশ জিতেছে সেমিতে। এ নিয়ে দ্বিতীবারের মতো সেমির গ-ি পেরিয়ে ফাইনাল খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে নেপালের কাছে ৪-২ গোলের হারে সেমিফাইনাল উৎরে আর ফাইনালে পৌঁছা হয়নি বাংলাদেশের। সেবার ভুটানের সঙ্গে তৃতীয় স্থানের জন্য লড়াই করে তারা। ওই ম্যাচে ভুটানকে ৮-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছিল লাল-সবুজরা। এবার সেই হারানো শিরোপা পুনরুদ্ধারের মিশন বাংলাদেশ দলের। এখন শুধু ফাইনালে পাকিস্তানবধের পালা। সেই লক্ষ্যেই আজ খেলতে নামবে বাংলাদেশ দল। সেমিফাইনালে ভারতকে হারিয়ে দিয়েও জয় সেভাবে উদযাপন করেনি বাংলাদেশ দল। কারণ একটাই, দলের সবার লক্ষ্য ফাইনাল জেতা। সেই লক্ষ্যপূরণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ টিম বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে জয়ের নায়ক বলা যায় গোলরক্ষক মেহেদী হাসানকে। কারণ সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশকে জিতিয়েছে সে। মজার ব্যাপার, এই নামে দলে আছে আরেকজন খেলোয়াড়, যার পজিশন মিডফিল্ডার। দলের অধিনায়কও সে। ফাইনাল জিতে বাংলাদেশের পতাকা নেপালের মাটিতে উড়ানোর লক্ষ্য এই কিশোরের, ‘ফাইনাল ম্যাচটার দিকেই আমাদের সব মনোযোগ। এই ম্যাচটা জিততেই হবে আমাদের। ম্যাচ জিতলে বাংলাদেশের পতাকা বিদেশের মাটিতে উড়াতে পারব। পাকিস্তান শক্ত প্রতিপক্ষ। সেটি আমাদের মাথায় আছে। যে কোন কিছুর বিনিময়ে ফাইনাল জিততে চাই। এতদিন স্যাররা আমাদের যা শিখিয়েছেন, সেটি যদি মাঠে প্রয়োগ করতে পারি ইনশাল্লাহ ম্যাচটা আমরা জিতব।’ বাংলাদেশ দলের কোচ মোস্তফা আনোয়ার পারভেজ বলেন, ‘ম্যাচ বাই ম্যাচ খেলে ছেলেরা ফাইনালে এসেছে। সম্পূর্ণ কৃতিত্বই তাদের। আমরা তাদের যেভাবে বলেছি, যে কৌশল অবলম্বন করতে বলেছি তারা সেটিই করেছে। ফাইনালে শক্ত প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। ফাইনালটাকে আমরা ফাইনালের মতো করেই খেলব।’ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দল একটি ম্যাচও হারেনি। কোচ পারভেজ এই কৃতিত্বও দিয়েছেন ফুটবলারদেরই, ‘বিষয়টা খুবই আনন্দের যে আমরা এই পর্যন্ত একটি ম্যাচও হারিনি। ফুটবলাররা উজ্জীবিত আছে। ফাইনালে ফুটবলাররা তাদের শতভাগ দেয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। এখন শুধু প্রয়োজন দেশবাসীর দোয়া। টুর্নামেন্টে আমার দেখা মতে পাকিস্তান সবচেয়ে শক্তিধর দল। শারীরিক গঠনে তারা আমাদের থেকে এগিয়ে। আমাদের ফুটবলাররা সেভাবেই পাকিস্তান দলকে মোকাবেলা করবে। তাদের দুর্বলতা এবং সবলতা নিয়ে আমরা কাজ করেছি। দলে বড় কোন ইনজুরি নেই। ছেলেরা ম্যাচের জন্য প্রস্তুত আছে।’ কোচ আরও জানান, ‘হাল্কা চোট থাকলেও একদিন পর পর খেলা হওয়ায় ছেলেদের ওপর চাপ যাচ্ছে। তবে ম্যাচের আগেই ঠিক হয়ে যাবে। সেরা একাদশই খেলবে।’ মালদ্বীপকে ৯-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দেয়ার পর নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে ‘এ’ গ্রুপের সেরা হয়ে সেমিফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। সেমিতে ভারতকে টাইব্রেকারে ৪-২ (১-১) গোলে হারিয়ে নাম লেখায় ফাইনালে। পক্ষান্তরে ‘বি’ গ্রুপে ভারতকে ২-১ গোলে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করে পাকিস্তান। পরের ম্যাচেও ভুটানকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে গ্রুপসেরা হয়ে সেমিতে ওঠে। সেমিতে স্বাগতিক নেপালকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে পৌঁছে যায় ফাইনালে। বাংলাদেশ-পাকিস্তান দু’দলই এখন পর্যন্ত অপরাজিত আছে। বাংলাদেশ করেছে সবচেয়ে বেশি (১২) গোল। পাকিস্তান করেছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০ গোল। তবে পাকিস্তানের কৃতিত্ব হচ্ছে তারা এ পর্যন্ত সবচেয়ে কম গোল (১টি) হজম করেছে। এগিয়ে আছে বাংলাদেশের চেয়ে (২টি)। এখন দেখার বিষয় আজকের ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে ছয় বছর আগের হারের বদলাটা নিয়ে এবং দু’বছর পর হারানো শিরোপা আবারও পুনরুদ্ধার করতে পারে কি না।
×