ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংলাপের পর দূরত্ব বেড়েছে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৩ নভেম্বর ২০১৮

  সংলাপের পর দূরত্ব বেড়েছে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের

হাসান নাসির ॥ হঠাৎ সংলাপে সম্মত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এতেই বিএনপির ধারণা হলো, সরকার সম্ভবত চাপে পড়ে বাধ্য হয়েছে। অথচ, তেমন চাপ তারা সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন কিনা সেই মূল্যায়ন নিজেরাই সঠিকভাবে করতে পারলেন না। বৃহস্পতিবার সেই সংলাপ হয়েও গেল। কিন্তু গণভবন থেকে নেতারা বেরিয়ে এলেন মলিনমুখে। কারও মুখে কথা নেই। সংবাদকর্মীদের বারংবার প্রশ্নেও লা-জবাব। তবে কি বিএনপি নেতারা এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করেছিলেন? তারা কি আন্দোলনের মাধ্যমে এমন কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন, যার মাধ্যমে বাড়তি কিছু অর্জন সম্ভব। সংলাপের জন্য বিগত কয়েক বছর ধরে জানিয়ে আসা বিএনপির দাবি নাকচ হয়ে আসছিল। আচমকা কেনই বা রাজি হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা? এ নিয়ে নানামুখী আলোচনা ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং কিছু অস্বীকৃত নিউজ পোর্টালে, যদিও এমন কোন চাপ দৃশ্যমান ছিল না সরকারের ওপর। বিএনপির ধারণা ছিল, সংলাপে ডাকার অর্থ হলো, তারা বিজয়ের কাছাকাছি। কিন্তু এ সংলাপ যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়েছে, তার প্রকাশ না ঘটলেও বডি ল্যাঙ্গুয়েজে পরিষ্কার। কেননা, প্রথমে অনেকেই ড. কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসায় সংবাদ সম্মেলনে যেতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। বিএনপি একটি বড় দল। কিন্তু সরকার সংলাপে আহ্বান জানিয়েছে গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেনে নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে। খালেদা জিয়া নেতৃত্বে থাকলে যে, এ সংলাপটুকুও হতো না তা পরিষ্কার কথা। কেননা, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে শেখ হাসিনা সংলাপে সম্মত হলেও তা হয়নি বিএনপি চেয়ারপার্সনের একগুয়েমির কারণে। রাজনীতিতে বিএনপি যে প্রজ্ঞাহীনতার পরিচয় দিয়েছে তার মাসুল দলটিকে এখনও গুনতে হচ্ছে। খালেদা জিয়া আনুষ্ঠানিক সংলাপে আসেননি বটে, তবে দুই নেত্রীর টেলিসংলাপ পুরো জাতি শুনেছে। এতে করে আওয়ামী লীগ সংলাপে অনিচ্ছুক ছিল, এমন অভিযোগ বিদেশীদের কাছেও গ্রহণযোগ্য করাতে পারেনি বিএনপি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপে সম্মত হয়েছিলেন অত্যন্ত মার্জিত ভাষায় লেখা ড. কামাল হোসেনের একটি চিঠির কারণে। চিঠিতে অত্যন্ত খোলামেলাভাবে দেশে গণতন্ত্র ও জনগণের শাসন সমুন্নত রাখতে আলোচনার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। এমন একটি অনুরোধে সাড়া না দেয়াটা হতো রাজনৈতিক শিষ্টাচারবিরোধী। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী এমনই যে, তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয় পড়ুয়া একজন শিশুর চিঠিরও জবাব দিয়ে থাকেন। সেখানে ড. কামাল হোসেনের চিঠিতে সাড়া দেবেন না, তা কী করে হয়। সংলাপ শেষ করে গণভবন থেকে বেরিয়ে সকলেই চুপ। মুখ বন্ধ ব্যারিস্টার মওমুদ আহমদের। সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুধু একবাক্যে বললেন, ‘আমি সন্তুষ্ট নই।’ নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বললেন, ‘আমি কিছুই বলব না।’ ধরেই নেয়া যায় আলোচনায় তারা মোটেও সুবিধা করতে পারেননি। শুধু তাই নয়, যুক্তিতেও ঐক্যফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ এতটাই ধরাশায়ী হয়েছেন যে, তারা ক্ষোভও প্রকাশ করতে পারলেন না। সে ভাষা তাদের ছিল না। ড. কামাল হোসেন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির প্রধান। বাহাত্তরের সংবিধানের ড্রাফট তিনিই করেছেন। সে সংবিধানে কি তত্ত্বাবধায়ক বা নির্বাচনকালীন সরকারের কথা বলা আছে? বৈঠক সূত্র জানাচ্ছে, ড. কামাল হোসেনের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা তো আপনার নেতৃত্বে করা সেই বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে গেছি। এখন আপনি কী বলবেন? আর এতেই অনেকটা জবাবহীন হয়ে যান ঐক্যফ্রন্টের এই শীর্ষ নেতা। হতাশ হয়ে পড়েন অন্য নেতারা। আলোচনায় ১৪ দলের নেতারা বলেন, খালেদা জিয়ার মামলা সংলাপের বিষয় নয়। এটা আদালতের ব্যাপার। এই মামলাকে রাজনৈতিক দাবি করলেও তা যুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। কেননা, মামলাটি দায়ের করেছিল অরাজনৈতিক সরকার। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান দুটি দাবি যে চূড়ান্তভাবে অগ্রাহ্য হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এমনই তো হওয়ার কথা ছিল। তারপরও বিশেষ করে বিএনপি নেতারা কেন যে বেশি আশা করেছিলেন, তা অনেকের কাছে প্রশ্ন।
×