ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তবুও নাম তার সুখী বেগম!

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৩ নভেম্বর ২০১৮

 তবুও নাম তার সুখী বেগম!

স্রোতে ভাসা দলছুট কচুরিপানার মতো ভাসতে ভাসতে সুখী বেগমের এখন ঠাঁই হয়েছে মহল্লাপাড়ায়। ছিলেন রাবনাবাদ পাড়ের ভাঙ্গা বাঁধের স্লোপে চৌধুরীপাড়ায়। এখন চৌধুরীরা আর নেই। নেই গ্রামটির অর্ধেক জনপদ। সব গিলে খেয়েছে। এখন রাবনাবাদপাড় ঘিরে সরকারের যতসব উন্নয়ন। হচ্ছে পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ। কিন্তু সুখী বেগম কোন কূল-কিনার পায়নি। পারেনি কোমর সোজা করে দাঁড়াতে। অতি সম্প্রতি এক বিকেলে হঠাৎ খুঁজে পাওয়া। নয়টি বছর পরে। রাবনাবাদ পাড়ে বাঁধের স্লোপের একটি ঝুপড়িতে আইলা বিধ্বস্ত দশায় থাকাকালে জনকণ্ঠের প্যানেল রিপোর্টে সুখীর জীবনচিত্র উঠে আসে। চরের হাইছা শাক রান্না করছিলেন। অন্যের দেয়া চালের জোগানে চলছিল দুপুরের খাবারের প্রস্তুতি। নয় বছর পরে ফের হঠাৎ দেখা মেলে সুখীর সঙ্গে। পাল্টেছে লালুয়ার গোটা জনপদ। পথঘাট, সড়ক অনেকটাই পাকা। বিদ্যুতের আলো পৌঁছেছে। পায়রা পোর্টের উন্নয়ন চলছে দ্রুতালয়ে। কিন্তু তিন দফা বাড়িঘর পাল্টে সুখী বেগমের পাঁচ জনের সংসারে আরও এক কন্যা মিথিলা এসেছে। উন্নতি যা এইটুকু। আর শিশু রিমিয়া নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। সংসারের মানুষ বেড়েছে। বাড়েনি স্বামী দুলাল গাজীর আয়। রাবনাবাদ পাড় থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে মহল্লাপাড়ায় এক চিলতে জমিতে একটি বাড়ি করেছেন। সুখী বেগমের জীবন-সংসারের শ্রী বাড়েনি। তেমনি মেলেনি আর্থিক নিরাপত্তা। কিন্তু দৈন্য বেড়েছে। সংসারের হাল বইয়ে চলা এই গৃহিণীর নাম সুখী বেগম। কিন্তু জীবনের সুখ কী বোঝেননি। প্রায় ২৬ বছরের সংসার জীবনের কোন হিসাব মেলাতে পারছেন না। এখন সুখী বেগম অচল। বয়সের ভারে নয়, অসুখে। চিকিৎসার যোগানও চলছে না। ’৭৯ সালে জন্ম নেয়া গ্রামীণ এই নারী ৪০টি বছরেই চলনশক্তি নেই। জীবনশক্তিও হারাতে চলেছে। স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে পড়ে আছেন ঘরে। স্বামীর ধরা হাতের সহায়তায় উঠে বসলেন। অনেক কথা। তা যেন সুখীর দুঃখের সাতকাহন। স্বামী দুলাল গাজী জানান, ভাগে ট্রলারের কাজে ছিলেন। লোকসানে এখন অচল। স্ত্রীর অসুখে নেই ৫১ হাজার টাকা। ধার-দেনায় কাহিল। বাবার জমিজিরাত আরও এক যুগ আগে রাবনাবাদ গিলে খেয়েছে। যদিও বড় মেয়ে লিজাকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে শহীদ গাজীকে নিয়ে সংসারের চাকা ঠেলছেন। কিন্তু গতি নেই। নবম শ্রেণী পড়ুয়া রিমিয়ার লেখাপড়াসহ সব জোগান নিয়ে সুখী বেগমের রাতের ঘুম হারাম। ২০০৯ সালের দেখা সুখী বেগমকে যেন এখন মনে হয় অচেনা। প্রকৃতির রোষানলে পিষ্ট হয়ে চিড়েচ্যাপ্টা অবস্থার হাল। শরীর তাকে কোন ভরসা দেয় না চলনে। একটুতেই চোখে সব ঝাপসা দেখেন। বললেন, চুবান খাইছি সিডরে। ভাসছি আইলায়। দেখছি নার্গিস, বিজলী। এহন সামনে পথের দিশা পাই না।’ এক রাশ হতাশার রাজ্যে সুখীর যেন দুঃখী মুখখানা অনেক প্রশ্নের উত্তর খোঁজে বেড়ায়। সুখের স্পর্শ পেয়েছেন এমন কোন ক্ষণের কথা জানাতে পারলেন না এই নারী। তবুও নাম তার সুখী বেগম। -মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া থেকে
×