ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ময়মনসিংহে বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী , বিএনপি পুড়িয়ে মানুষ মারে, আওয়ামী লীগ উন্নয়ন করে, ১৯৫ উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন

নৌকায় ভোট চাই

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৩ নভেম্বর ২০১৮

নৌকায় ভোট চাই

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারে আর আওয়ামী লীগ করে দেশের উন্নয়ন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মানুষকে অত্যাচার-নির্যাতন করে না, মানুষের উন্নয়নে কাজ করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের গতিতে সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনে দরকার আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা। এ জন্য তিনি আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহ্বান জানান। তিনি শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় সার্কিট হাউস ময়দানে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় বক্তৃতাকালে এসবকথা বলেন। জনসভায় বক্তৃতা করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহ বিভাগের ১৯৫টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ফলক উন্মোচন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়। সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি করে। স্কুল-কলেজ রাস্তা-ঘাট উন্নয়ন করে। বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যায়। কিন্তু গত ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারলাম না। ষড়যন্ত্র করে আমাদের হারানো হলো। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল কী অবস্থা ছিল বাংলাদেশের? ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রতিটি জেলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থকদের ওপর অনেক অত্যাচার হয়েছে। ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, দুর্গাপুরের এমপি জালাল উদ্দিন তালুকদারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এভাবে অগুনতি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার, অত্যচার, নির্যাতন করা হয়েছে। আমাদের আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল হক, গিয়াস উদ্দিন, আব্দুল বারেক, আব্দুস সোবহান, কামাল, আলমগীর, মফিজ উদ্দিন, আজাদ, ওয়াসিকুল, আবুল হাশেমকে হত্যা করেছে বিএনপি-জাময়াত জোট। স্বেচ্ছাসেবক লীগের রফিকুল ইসলাম, যুবলীগের লিয়াকতসহ অনেকে নিহত হয়েছে। ২০০২ সালের ডিসেম্বরে ময়মনসিংহের চারটি সিনেমা হলে বোমা হামলা হয়। সে সময় ১৮ জন নিহত ও ২০০ জন আহত হন। এই ঘটনায় ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, জালাল উদ্দিন তালুকদারকে গ্রেফতার করে অকথ্য অত্যাচার ও নির্যাতন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কাউকে অত্যাচার-নির্যাতন করে না। আওয়ামী লীগ করে উন্নয়ন, মানুষের কল্যাণ আর বিএনপির কাজ হলো আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা। বিএনপি নির্বাচন ঠেকানোর নামে ৩ হাজার ৯০০ জনকে পুড়িয়েছে, ৫০০ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। রেললাইন ও গাড়ি পুড়িয়েছে। সাধারণ মানুষের চলাফেরার কোন অধিকার ছিল না। যুবলীগ নেতা কামরুজ্জামানের হাতের ১০টি আঙ্গুল কেটে দেয়া হয়েছিল। গফরগাঁওয়ে বসতবাড়ি দখল করে পুকুর বানানো হয়েছিল। খুন, হত্যা, দখল, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, বাংলা ভাই সৃষ্টি, মানি লন্ডারিংÑ এই ছিল বিএনপির কাজ। সরকার ছিল হাওয়া ভবন। হাওয়া ভবনের খাওয়া মেটাতে গিয়ে দেশের কোন উন্নয়ন হয়নি, সব অর্থ পাচার করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দেয়। ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল এই ১০ বছরে আওয়ামী লীগ দেশের অনেক উন্নয়ন করেছে। তিনি বলেন, ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ এই বিভাগের জন্য উপহার হিসেবে ১৯৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে। এ সময় তিনি এসব উন্নয়ন প্রকল্পের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে যেখানে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ, এখন সেখানে ২১ শতাংশে নেমে এসেছে। আগামীতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই দারিদ্র্যের হার আরও ৫-৬ ভাগ কমিয়ে আনতে চাই। তিনি বলেন, তরুণ ও যুবসমাজ হচ্ছে আমাদের শক্তি। তাদের লেখাপড়ার জন্য প্রাইমারী থেকে উচচশিক্ষা পর্যন্ত ২ কোটি ৪ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি ও উপবৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি। যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখতে পারে। মায়ের হাসি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ কোটি ৪০ লাখ মাকে সরাসরি তাদের মোবাইল ফোনে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে উপবৃত্তির টাকা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল হয়েছে। প্রত্যেক এলাকায় আমরা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা চালু করেছি। জাতির পিতা বেতবুনিয়াতে যে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন ভূ-উপগ্রহের, আমরা আজ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করে মহাকাশ জয় করেছি। বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে আমাদের ছেলেমেয়েরা দেশে ও দেশের বাইরে থেকেও উপার্জন করতে পারছে। চিকিৎসা সেবা আমরা দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে আমাদের মায়েরা চিকিৎসা সেবাসহ ৩০ প্রকার ওষুধ পাচ্ছে বিনা পয়সায়। তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা দিচ্ছি। বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের আমরা ভাতা দিচ্ছি। আমরা চাই সমাজে কেউ যেন উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে না পড়ে। তিনি বলেন, কোন মানুষ যাতে গৃহহীন না থাকে সেজন্য প্রত্যেক ডিসিকে নির্দেশ দেয়া আছে। প্রতিটি মানুষের ঘর থাকবে। কোন মানুষ ঘর ছাড়া থাকবে না। প্রতিটি গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় আমরা গুচ্ছগ্রামের মাধ্যমে ভূমি ও ঘর করে দিচ্ছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে আমরা ভিক্ষক মুক্ত করব। ইতোমধ্যে খুলনা ভিক্ষুক মুক্ত হয়েছে, ময়মনসিংহও ভিক্ষুক মুক্ত হবে। কোন মানুষ ভিক্ষা করবে না, কাজ করে খাবে। কাজ ছাড়া থাকবে না কোন মানুষ। যারা অক্ষম তাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা ও বিনা পয়সায় খাদ্যের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, যেখানে বিদ্যুতের উৎপাদন ছিল মাত্র ১৬০০ মেগাওয়াট। সেখানে এখন ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের রেকর্ড গড়েছি। আজ দেশের ৯৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুত পাচ্ছে। গ্যাসের সমস্যা সমাধানের জন্য এলএনজি আমদানি করে দিচ্ছি। তিনি বলেন, স্বপ্নেরই বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৯৫টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হবে। বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে, সুবর্ণজয়ন্তী আরও ব্যাপকভাবে উদ্যাপনের জন্য, জাতির পিতার ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত জনতাকে হাত তুলে ওয়াদা করতে বলেন। এ সময় উপস্থিত জনতা হাত তুলে দেখান। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি, সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি, ধর্মমন্ত্রী আলহাজ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মীর্জা আজম এমপি, সাবেক মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি, কেন্দ্রীয় নেতা মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ, আহমদ হোসেন ও মারুফা আক্তার পপি। পরিচালনা করেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এহতেশামুল আলম। এ সময় মঞ্চে ছিলেন অধ্যাপক ডাঃ এম আমানুল্লাহ এমপি, এ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন আহমদ এমপি, এ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন আহমদ এমপি, শরীফ আহমদ এমপি, ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল এমপি, আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহীন এমপি, জুয়েল আরেং এমপি, সাবেক এমপি আব্দুস সাত্তার, আব্দুল মতিন সরকার, কেএম খালিদ বাবু ও হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী, ময়মনসিংহ চেম্বারের সভাপতি আমিনুল হক শামীম ও সিটির প্রশাসক ইকরামুল হক টিটু, ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন মন্তা, জেলা বারের সভাপতি এ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন খান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান ও এ্যাডভোকেট কবীর উদ্দিন ভুইয়াসহ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। বর্তমান সরকার মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এটিই প্রথম ময়মনসিংহের জনসভা। এর আগে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহের সার্কিট হাউস মাঠের জনসভায় বক্তৃতা করেন। ২ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ময়মনসিংহের সফর চূড়ান্ত হওয়ার আগে ২ বার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। শুক্রবারের জনসভায় সার্কিট হাউস ময়দানে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। রেকর্ডসংখ্যক জনতার ঢল নামায় সার্কিট হাউস মাঠ ছাপিয়ে আশপাশের প্রধান সড়ক পর্যন্ত জনসমুদ্রে পরিণত হয়। এর মধ্যে চোখে পড়ার মতো প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বিশাল মিছিল নিয়ে সভায় যোগ দেয় গফরগাঁওয়ের এমপি ফাহমি গোলন্দাজ বাবেলের কর্মী-সমর্থকরা। এর বাইরে ত্রিশাল, ভালুকা, নান্দাইল ও নেত্রকোনার পূর্বধলা থেকেও বিশাল মিছিল নিয়ে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা জনসভায় যোগ দেয়।
×