ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ই-জিপি বাস্তবায়নে অনীহা

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ৩ নভেম্বর ২০১৮

ই-জিপি বাস্তবায়নে অনীহা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ‘ইলেকট্রনিক টেন্ডার, ঝুট-ঝামেলা নেই আর’ সরকারের এই ধরনের টেন্ডার প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলছে ক্রয় কর্তৃপক্ষ। সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোতে ক্রয়াদেশ বা ঠিকাকার্য প্রক্রিয়া সহজ করতে ন্যাশনাল ইলেকট্রনিক গবর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) চালু করলেও বাস্তবায়ন করতে অনীহা কর্তৃপক্ষের। কিন্তু সিপিটিইউর কোন নজরদারি না থাকায় এমন ঘটনা ঘটছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রথম দফায় ক্রয়যোগ্য পণ্যের নাম নোটিসে উল্লেখ না করেই ঠিকাদার বা সরবরাহকারীদের আড়াল করার চেষ্টা চলছে। ড্যাশ বোর্ডের টেন্ডার প্রস্তুতি বা ডকুমেন্টে ক্লিক করে দেখতে হচ্ছে বিস্তারিত। দরপত্রের প্রাক্কলিত ব্যয়কে মাপকাঠি ধরে সরবরাহকারীদের অভিজ্ঞতা মূল্যায়ন করার মতো ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত। ফলে কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট কোন সরবরাহকারী ব্যতীত অন্য কোন সরবরাহকারী ই-জিপিতে অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে না এমন শর্তারোপের কারণে। আরও অভিযোগ রয়েছে, সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে অধিকমূল্যে পণ্য সরবরাহের চুক্তি সম্পাদনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে কিনা ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। কৌশলে বিতাড়িত করা হচ্ছে সর্বাধিক সরবরাহকারীকে। সরবরাহকারীদের মতে, যেহেতু এই পণ্যের বাজার সর্বত্র রয়েছে সেহেতু কর্তৃপক্ষ বিশেষ কোন সরবরাহকারীর ইচ্ছাকৃত শর্তারোপ না করে সাধারণ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সরবরাহকারীদের সুযোগ দিলে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে ক্রয়াদেশ চুক্তি সম্পাদন সম্ভব। শর্তানুযায়ী বিভিন্ন টেন্ডারের ক্ষেত্রে টেন্ডার যোগ্যতায় দরপত্র গ্রহীতাকে অবশ্যই ৫ বছরের মধ্যে এ ধরনের দুটি ঠিকাকার্য সম্পাদিত করেছে কি না তা জুড়ে দেয়া হচ্ছে। দুই বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে। কমপক্ষে দুটি কন্ট্রাক্টের মূল্য এক বা দেড় কোটি টাকা হতে হবে। গত তিন বছরে কোন প্রতিষ্ঠানে ক্রয়াদেশ সম্পন্ন করেছে এমন ডকুমেন্ট দাখিল করতে হবে। যে কোন সিডিউল ব্যাংকের মাধ্যমে এক কোটি টাকার তরল সম্পত্তি অথবা কার্যকরী মূলধন অথবা ক্রেডিট থাকতে হবে। টেন্ডার শর্ত অনুযায়ী অভিযোগ রয়েছে, যারা প্রতিনিয়ত এ ধরনের পণ্য লিমিটেড টেন্ডার মেথড (এলটিএম) কিংবা ওটিএম-এর মাধ্যমে সরবরাহ করার সুযোগ পেয়েছেন এমন সরবরাহকারীর সংখ্যা একাধিক নয়। একাধিক সরবরাহকারী দুটি চুক্তিপত্রে এক বা দেড় কোটি টাকার সমপরিমাণ ও গত দু’বছরে একাধিক সরবরাহকারীর সঙ্গে এমন চুক্তিপত্র সম্পাদিত হয়েছে কি না তা নিয়ে সন্দিহান অভিযোগকারী সরবরাহকারীরা। এ ধরনের শর্ত জুড়ে দেয়া হলে দুই বা ততোধিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া এ ধরনের দরপত্র আহ্বানে যোগদান করতে পারবেন না। এমনকি নতুন কোন সরবরাহকারী অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ বঞ্চিত হবেন। টেন্ডার ডকুমেন্ট সিটের (টিডিএস) শর্তানুযায়ী এ ই-টেন্ডার অনলাইনে দাখিলের সময় এই পণ্যের ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অরগানাইজেশন (আইএসও) অথবা হোম স্ট্যান্ডার্ড সার্টিফিকেট থাকতে হবে পণ্যের গুণগত মান নির্ধারণে। প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন পত্রের কপি জমা দিতে হবে। ৯০-১২০ দিনের মধ্যে এই টেন্ডারের কার্যক্রম শেষ করতে হবে কর্তৃপক্ষকে। টেন্ডার সিকিউরিটি টেন্ডারের প্রাক্কলিত মূল্যের প্রায় ২ শতাংশ বা কমবেশি। টেন্ডার গ্রহীতার যোগ্যতা হিসেবে অনলাইনে সাবমিটের সময় জেনারেল এক্সপেরিয়েন্স, পূর্বে এই পণ্য বা সমজাতীয় পণ্য সরবরাহের দলিলাদি, চুক্তিপত্রের সংখ্যা, চুক্তিপত্রের মূল্য ও সময়, পণ্য সরবরাহের উৎপাদন ক্ষমতা এবং সিডিউল ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত তরল সম্পদ ও কার্যকরী মূলধনের সক্ষমতা প্রত্যয়ন করতে হবে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সিপিটিউর সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট মোশারফ হোসাইন জনকণ্ঠকে জানান, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলসের (পিপিআর) ৫৬ ও ৫৭ ধারা অনুযায়ী প্রকিউরমেন্ট এন্টিটিকে প্রথমে অভিযোগ করতে হবে। অভিযোগ আমলে না নিলে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সিপিটিউকে জানাতে হবে। অভিযোগ আমলে নিয়ে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
×