ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার সম্মতির কথা জানালেন স্পীকার

পার্লামেন্ট অধিবেশন ৭ নবেম্বর

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ৩ নভেম্বর ২০১৮

পার্লামেন্ট অধিবেশন ৭ নবেম্বর

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনা ৭ নবেম্বর পার্লামেন্টের অধিবেশন আহ্বান করতে সম্মত হয়েছেন বলে স্পীকার কারু জয়সুরিয়া শুক্রবার জানিয়েছেন। তিনি বলেন, পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সব রাজনৈতিক দলের জন্য এটি একটি ফ্লোর টেস্ট। এদিকে জাতিগত তামিল পার্লামেন্ট সদস্যরা জানিয়েছেন, তারা উভয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সন্দিহান। -খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও এএফপির জয়সুরিয়া পার্লামেন্ট সদস্যদের জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট আমাকে ফোন করেছেন এবং তিনি ৭ নবেম্বর পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাজাপাকসে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা তাকে জানিয়েছেন যে ৫ নবেম্বর পার্লামেন্ট অধিবেশন বসবে। গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের সরকারকে বরখাস্ত করার পর সিরিসেনা বিরোধী দলীয় নেতা মাহিন্দা রাজাপাকসেকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করার পর দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। বিক্রমাসিংহে তার পদচ্যুতিকে অসাংবিধানিক বলে অভিহিত করেন এবং তিনি ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের দাবি জানান। তিনি প্রধামন্ত্রীর সরকারী বাসভবন ছাড়তে অস্বীকৃতিও জানিয়েছেন। উভয়েই এখন পার্লামেন্টে তাদের সমর্থন আদয়ের জন্য লড়াই করছেন। বিক্রমাসিংহের দলের পার্লামেন্টে ১০৪ জন সদস্য রয়েছে। অন্যদিকে রাজাপাকসে ও তার মিত্রদের রয়েছে ৯৯ জন। যদিও কিছু সদস্য নিজেদের পক্ষ পরিবর্তন করছে। শ্রীলঙ্কার জাতিগত তামিল সম্প্রদায় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধানমন্ত্রীর জন্য ক্ষমতার লড়াইয়ে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। বিধ্বংসী গৃহযুদ্ধের পরিসমাপ্তি নিয়ে যদিও তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা উভয় নেতাকেই অবিশ্বাস করছে। অবিশ্বাসের যথেষ্ট কারণও রয়েছে। প্রধান তামিল দলের পার্লামেন্টে ১৬টি আসন রয়েছে। যারা এখন সিদ্ধান্ত নেবেন তারা কাকে ভোট দেবেন। এক দশক আগে রাজাপাকসে তামিল টাইগার যোদ্ধা, তাদের সমর্থক ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর পূর্ণ মাত্রায় সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটান। যে জন্য তারা রাজাপাকসের ওপর ক্ষুব্ধ। অন্যদিকে বিক্রমাসিংহে যিনি সংস্কারের কথা বলে ক্ষমতায় গেলেও তিনি কিছুই করেননি। তামিল ন্যাশনাল এ্যালায়েন্স (টিএনএ) আইনপ্রণেতা ধর্মালিংগাম সিদাথন বলেন, আমাদের এখন পছন্দ করতে হবে শয়তান ও গভীর নীল সমুদ্রের একজনকে। দুজনই সংখ্যাগুরু জাতিগত সিংহলি সম্প্রদায়ের সদস্য। আমি আমার সংসদীয় আসনের অনেক লোকের কাছ থেকে ফোন পেয়েছি। তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন রাজাপাকসে ক্ষমতাসীন হলে কি হবে? আমাদের লোকজন তাদের নিরপত্তা ও ভবিষ্যত নিয়ে সন্দিহান। তামিলদের ১৬টি ভোট গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে জোরালো ভূমিকা পালন করবে। রাজাপাকসের ক্ষমতায় ফিরলে তামিলরা রক্তাক্ত অতীতের কারণে দেশের উত্তর ও পূর্বদিকে তাদের মনোনিবেশ থাকবে। বিক্রমাসিংহের প্রতিও তারা অবিশ্বস্ত কেননা তিনি যুদ্ধের পরে পুনর্গঠনের কার্যক্রমের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা খুব ধীরে করছেন। তার দল যুদ্ধের সময় তামিলদের বিরুদ্ধে করা নৃশংসতার জন্য দায়ীদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে ক্ষমতায় যাওয়ার পর তিনি কোন অপরাধীর বিচার করেননি। তিনি তামিলদের আরও ক্ষমতা দেয়ার পাশাপাশি যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের জন্য রাজনৈতিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা এখনও পূরণ করেননি। দেশটির উত্তরাঞ্চলে তামিলদের শক্তিশালী ঘাঁটি জাফনার রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ আহিলান কাদিরগামার বলেন, শ্রীলঙ্কার তামিলরা সাধারণত জাতীয় রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার বিষয়টি অনুভব করে। তবে ক্ষমতার লড়াই তাদেরকে মর্মাহত করে। মাহিন্দা রাজাপাকসের ফিরে আসায় তাদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। রাজাপাকসের সময়ে তামিলরা সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে ছিল। তামিলরা নিজেদের বাড়ি থেকে বাইরে বের হলে সেনাবাহিনীর অনুমতি নিতে হতো। এমনকি খাবার খেতেও অনুমতি নিতে হতো। অনেকে আশঙ্কা করছেন আগের সেই নিয়ন্ত্রণ আবার ফিরে আসবে রাজাপাকসে ক্ষমতাসীন হলে। জাতিসংঘের হিসেবে ৩৭ বছরের গৃহযুদ্ধে দেশটিতে এক লাখেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে। যার মধ্যে ৪০ হাজার তামিল বেসামরিক লোক রয়েছে। যারা ২০০৯ সালে রাজাপাকসের নির্দেশে চূড়ান্ত যুদ্ধের সময় নিহত হন। ২০১৫ সালে রাজাপাকসের ক্ষমতা শেষ হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার পরাজয়ের জন্য তিনি তামিলদের দায়ী করেন। যারা তার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল।
×