ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টেলিগ্রাফের নিবন্ধ;###;আইএসআই কানেকশন

বিএনপি সম্পর্কে সতর্ক থাকার পরামর্শ নয়াদিল্লীকে

প্রকাশিত: ০৭:৩১, ২ নভেম্বর ২০১৮

বিএনপি সম্পর্কে সতর্ক থাকার পরামর্শ নয়াদিল্লীকে

বিভাষ বাড়ৈ ॥ বাংলাদেশে সরকারবিরোধী বিএনপিকে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টি করা একটি দল হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম দি টেলিগ্রাফের নিবন্ধে। জঙ্গীবাদী ও আইএসআই’র সঙ্গে সম্পর্ক থাকা এমন একটি দলের বিষয়ে ভারত সরকারকে সতর্ক থাকার পরামর্শও দেয়া হয়েছে প্রখ্যাত সাংবাদিক সুবীর ভৌমিকের লেখা এক নিবন্ধে। যেখানে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের নারকীয় হত্যাকা-ের ঘটনা তুলে ধরে বলা হয়েছে, আইএসআই ও জামায়াত-বিএনপি জোট চেয়েছিল নেত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের হত্যা করে দলটিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। ‘২০০৪ সালে শেখ হাসিনার ওপর হামলাকারীদের বিষয়ে জানা কেন ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ’ এই শিরোনোমে লেখা নিবন্ধ বৃহস্পতিবার টেলিগ্রাফের অনলাইন সংস্করনে প্রকাশিত হয়েছে। প্রখ্যাত সাংবাদিক সুবীর ভৌমিকের লেখা নিবন্ধে বলা হয়েছে, নয়াদিল্লীর বিষয়টি নিয়ে আগ্রহী হওয়া উচিত, কেননা ‘গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার’ দাবি নিয়ে বর্তমানে ভারতের সঙ্গে কথা বলতে চায় বিএনপি। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে জঙ্গীবাদের সংশ্লিষ্টতা সম্প্রতি ঢাকার বিশেষ আদালতের এক রায়ে কিছু ব্যক্তিকে শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে আরও স্পষ্ট হয়েছে। মামলাটি ছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে হওয়া গ্রেনেড হামলার। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর হত্যাযজ্ঞের এক নির্মম দৃষ্টান্ত হয়ে আছে এ ঘটনা। এদিন আওয়ামী লীগে শীর্ষ ও মধ্যম সারির ২৪ নেতা ও কর্মী গ্রেনেড হামলায় নিহত হন। এছাড়া ও আহত হন আরও ৫০০ জন। এই আহতদের মধ্যে একজন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আদালত এই হামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে ৩৮ জনকে ফাঁসিসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেছে। সেই সঙ্গে এই ঘটনাকে ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে পূর্ণ পরিকল্পিত’ একটি হামলা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে আদালত। জঙ্গীবাদের সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ততা তুলে ধরে ২১ আগস্টের বর্ণনা দেয়া হয়েছে নিবন্ধে। বলা হয়েছে, এই ঘটনায় শাস্তি প্রাপ্তদের মধ্যে অন্যতম বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে। ২০০৪ সালে এই হামলা হওয়ার সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন বেগম জিয়া। বর্তমানে তারেক রহমান বাংলাদেশের আদালতের কাছে পলাতক আসামি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পাশাপাশি আরও বেশ কিছু দুর্নীতির মামলায় শাস্তি প্রাপ্ত পলাতক আসামি তিনি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলারও মূল পরিকল্পনাকারী তিনি। তার পরিকল্পনায় বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান মারা গেছেন। এই পরিকল্পনা সফল হলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও এই দিন হত্যা করা হত। আরও বলা হয়, গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেককে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। বিশেষ আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, সরকার আমাকে এই সাজানো মামলায় অপরাধী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, সামনে উচ্চ আদালতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে তারেক রহমানের ফাঁসি চেয়ে আবেদন করা হবে। এই মামলায় রায়ে ১৯ জনকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয় যার মধ্যে দুইজন বিএনপি সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। এদের মধ্যে লুৎফুজ্জামান বাবর ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং তার কাছের সহযোগী ছিলেন আব্দুস সালাম পিন্টু। আরও আছেন দুইজন সাবেক গোয়েন্দা প্রধান রাজেকুল হায়দার চৌধুরী এবং আব্দুর রহিম। এ ছাড়াও হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নামের জঙ্গী সংগঠনের বেশ কয়েকজন। এদের প্রত্যেকের তৎকালীন সরকারে থাকা বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। মজার বিষয় হলো এই মামলায় মৃত্যুদ- পাওয়া তিনজন আরও একটি মামলার মৃত্যুদ- প্রাপ্ত আসামি। এরা হলেন- স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং সাবেক দুই গোয়েন্দা প্রধান রাজেকুল হায়দার চৌধুরী এবং আব্দুর রহিম। চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় তারা এই মৃত্যুদ- দেয়া হয়। এটিও ২০০৪ সালের ঘটনা, যখন চট্টগ্রাম বন্দরে ১০ ট্রাক অটোমেটিক রাইফেলের একটি চালান ধরা পড়ে। এই মামলায় জামায়াতে ইসলামীর দুই নেতাকে শাস্তি প্রদান করা হয়। মতিউর রহমান নিজামী এবং আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ এই অস্ত্র মামলায় শাস্তি পায়, কিন্তু ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধের মামলায় তারা দোষী সাব্যস্ত হলে এই মামলায় শাস্তি পাওয়ার আগেই তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এই মামলায় আরও সংশ্লিষ্ট ছিল ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব অসমের (উলফা) নেতা পরেশ বড়ুয়া। তাকেও এই মামলায় মৃত্যুদ- প্রদান করে বাংলাদেশের আদালত। চট্টগ্রামের এই চাঞ্চল্যকর ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনার মাত্র ৪ মাস পরেই বাংলাদেশের উগ্রপন্থী হুজি আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালায়। তৎকালীন ক্ষমতায় থাকা বিএনপির সহায়তায় এটি চলে। এই হুজি এবং উলফার মধ্যে এক অদ্ভুত রকমের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল যা বিএনপির কল্যাণে অটুট ছিল দীর্ঘদিন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের সময় এই উগ্রবাদী সংগঠনগুলো ছিল অত্যন্ত সক্রিয় এবং শক্তিশালী। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার বিগত ১০ বছরে উগ্রবাদী এই সংগঠনগুলোকে দমন করেছে। যেই জঙ্গীবাদ বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছিল তার কল্যাণে বাংলাদেশকে তুলনা করা হচ্ছিল পাকিস্তানের প্রতিবিম্ব হিসেবে। আর তারপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর কঠোর হস্তে দেশের অভ্যন্তরীণ ইসলামী মৌলবাদী এই সংগঠনগুলোকে দমন এবং সীমান্তে ভারতের উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোকে দমনের মাধ্যমে বাংলাদেশে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে। এর ফলেই এ বছর নির্বাচন উপযোগী একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সুবীর ভৌমিক লিখেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় অভিযুক্তরা জানায়, এখানে ব্যবহৃত গ্রেনেড বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাইজউদ্দিন পাকিস্তান থেকে আসেন। কাশ্মীরের হিযবুল মুজাহিদিনের নেতা ইউসুফ ভাটের কাছ থেকে তিনি এই গ্রেনেড সংগ্রহ করেন। এই ইউসুফ ভাটের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)-এর। সুতরাং এটি বেশ স্পষ্ট যে আইএসআই এবং জামায়াত-বিএনপি জোট চেয়েছিল তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের হত্যা করে দলটিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। আসন্ন সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে ২১ আগস্টের ঘটনার বিষয়ে ভারত সরকারকে পরামর্শ দিয়ে নিবন্ধে বলা হয়েছে, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার’ দাবি নিয়ে আজ যেই বিএনপি ভারতের কাছে যাচ্ছে তাদের সম্পর্কে জানা দিল্লীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
×