ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভরসার অভাবই বড়

প্রকাশিত: ০৭:১১, ২ নভেম্বর ২০১৮

ভরসার অভাবই বড়

গ্রন্থের শিরোনাম ‘নিশিদিন ভরসা রাখিস’। লেখক আতিউর রহমান। গ্রন্থটি এপ্রিল ২০১৮ সালে আলোঘর প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। গ্রন্থের শিরোনামের সঙ্গে একটি উপনাম ‘বাংলাদেশের সমাজ সংস্কৃতি ভাবনা’ যোগ করা হয়েছে। এতে করে বইটা হাতে নিয়েই একজন পাঠক ধারণা করতে পারেন বইয়ের ভেতরে কী আছে। রবীন্দ্রনাথের কথা দিয়েই লেখক বলতে চেয়েছেন ‘সমাজ সচল থাকলে দেশ এগিয়ে যাবেই। আর সমাজের গতিময়তা অনেকটাই নির্ভর করে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের ওঠানামার ওপর। এই সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত করতে পারে সাংস্কৃতিক কর্মকা-। কেননা, সাংস্কৃতিক সংযোগের মাধ্যমেই মানুষে মানুষে আত্মীয়তা বাড়ে। আর ইতিহাস-ঐতিহ্যই শেষ পর্যন্ত সাংস্কৃতিক পরিম-লের গতি-প্রকৃতির ধরন ঠিক করে দেয়। রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নেতাদের ইতিবাচক সক্রিয়তা এই গতিপ্রকৃতির ¯্রােতধারাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বাঙালীর বড়ই সৌভাগ্য রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও বঙ্গবন্ধুর মতো কালজয়ী সমাজ-সংস্কৃতিসংলগ্ন মানুষের নেতৃত্বে এদেশের সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতির বিকাশের ধারাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে দেখেছেন। তাঁদের অনুপ্রেরণায় পোক্ত হয়েছে বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, রাজনীতি ও সামগ্রিক অর্থে সংস্কৃতির পাটাতন।’ লেখকের এ চেতনা ও উপলব্ধিই আলোচ্য গ্রন্থের মূল নির্যাস। লেখক এগুলো উন্মোচিত করেছেন ৬টি অধ্যায়ে, ৩৮টি উপঅধ্যায়ে। কয়েকটি উপঅধ্যায়গুলো এ রকম : ‘সংস্কৃতি ও সংকট সম্ভাবনা’, ‘রমনা বটমূলে নববর্ষ উদ্যাপনের পঞ্চাশ বছর’, ‘মুক্তিযুদ্ধে মধ্যবিত্ত’, ‘রবীন্দ্র-নজরুল দারিদ্র্যভাবনা’, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব : বাঙালী সংস্কৃতির অনন্য এক প্রতীক’, ‘রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা : বঙ্গবন্ধুর অসামান্য এক উত্তরসূরি’ ইত্যাদি। লেখক যখন বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য, দক্ষ নেতৃত্বে-মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন এবং দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে নিরলস আকাক্সক্ষা লক্ষণীয় তা আমাদের নতুন করে যেমন আশাবাদী করেছে, তেমনি ত্রিশ লাখ শহীদের প্রতি দায়বদ্ধতাও প্রকাশিত হচ্ছে।’ (পৃ. ৬৫) এতে লেখকের যে দেশের প্রতি, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি মমতাবোধ ও শ্রদ্ধাবোধের জায়গা তৈরি হয়েছে তা সহজে অনুমেয়। আবার একই সঙ্গে লেখক যখন লেখেন, রবীন্দ্রনাথ সমাজতাত্ত্বিক ছিলেন না, তবে সমসাময়িক সমাজ সম্পর্কে তাঁর গভীর ভাবনা-চিন্তা নিঃসন্দেহে সমাজতাত্ত্বিক পর্যালোচনার দাবি রাখে। পারিপার্শি¦ক সামাজিক অবস্থা রবীন্দ্রনাথকে নিরন্তর উদ্বিগ্ন করত (পৃ. ১০৫)। লেখকের এ উক্তি-সংস্কৃতি যে সমাজের মধ্যেই বৃত্তাবদ্ধ তা পাঠান্তে পাঠক সহজে বুঝে যান। এ ছাড়াও রবীন্দ্রনাথ, বঙ্গবন্ধু, নজরুল, শেখ হাসিনা, সৈয়দ শামসুল হক, মোনাজাতউদ্দিন, প্রফেসর অনুপম সেন, মোজাফফর স্যার, হাসান আজিজুল হকসহ অনেক সৃজনশীল মানুষের ভাবনার কথা স্থান পেয়েছে বইটির নানা অধ্যায়ে। ড. আতিউর রহমান এমন একজন লেখক যিনি সর্বক্ষণ সাধারণ মানুষের চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করেন বাংলাদেশের উন্নয়ন-অভিযাত্রাকে। প্রচলিত উন্নয়ন-ভাবনাকে চ্যালেঞ্জ করে তিনি সাধারণ মানুষের চোখ দিয়ে দেখে চলেছেন দেশের অর্থনীতি, সমাজ ও রাজনীতিকে। গরিবের প্রতি তাঁর পক্ষপাতিত্বের কথা সকলেরই জানা। সব লেখাতেই সহজবোধ্য ভাষাশৈলীতে তিনি তা তুলে ধরেন তাঁর হৃদয় দিয়ে। শুধু লেখায় নয়, কর্মেও দেখিয়েছেন তিনি কতটা গরিবহিতৈষী ও মানবিক। তাঁর লেখায়, ভাষাশৈলীতে এমন এক জাদু আমরা খুঁজে পাই যা অন্য পাঁচজন লেখক থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভিন্ন তাঁর উপস্থাপনা। এসব কারণে পাঠকের একটা ভাললাগার জায়গা তৈরি হয় তাঁর লেখা পাঠের। সৈয়দ নূরুল আলম
×