ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীলঙ্কায় ক্ষমতার লড়াই, মঞ্চে হাজির ‘লর্ড অব রিংস’

অচলাবস্থা নিরসন হয়নি

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২ নভেম্বর ২০১৮

অচলাবস্থা নিরসন হয়নি

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা ও পার্লামেন্টের স্পীকার কারু জয়সুরিয়া দেশটির ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিঙ্গে হঠাৎ করে বরখাস্ত করার বিষয়ে সঙ্কট সমাধানে ব্যর্থ হয়েছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এর প্রেক্ষিতে বিরোধী দলগুলো সংঘাত ও দাঙ্গা ঘটিয়ে অচলাবস্থা ভেঙ্গে দিতে পারেন। আলজাজিরা ও নিউজ এশিয়া। স্পীকারের মুখপাত্র চামিন্ডা গোমেজ বলেন, স্পীকার জয়সুরিয়া বুধবার সিরিসেনার সঙ্গে এক জরুরী বৈঠকে বসেন। বৈঠকে স্পীকার প্রেসিডেন্টকে পার্লামেন্ট অধিবেশন আহ্বানের অনুরোধ করেন। যাতে দেশের আইনী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দাবিতে দুই ব্যক্তির মধ্যে একজনকে আইনপ্রণেতারা বেছে নিতে পারেন। তবে ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় কোন রকম সমাধান ছাড়াই শেষ হয়। সিরিসেনা স্পীকারকে বলেন তার অনুরোধ তিনি বিবেচনা করবেন এবং শীঘ্রই তাকে ডেকে পাঠাবেন। বুধবার সিরিসেনা সরকারী বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, জয়সুরিয়া যখন তাকে পার্লামেন্ট আহ্বানের অনুরোধ জানান তখন প্রেসিডেন্ট শান্ত ছিলেন ও উদাসীন হয়ে ভাবছিলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে, প্রেসিডেন্ট স্পীকারের পার্লামেন্ট অধিবেশন আহ্বানের অনুরোধের জবাব দেন। যাতে নতুন করে মনোনীত প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসেকে পার্লামেন্ট মেনে নেয়। প্রেসিডেন্ট ও স্পীকারের ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে নিরপেক্ষ এ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে সিরিসেনার পদক্ষেপের বৈধতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। স্পীকারের অনুরোধের জবাবে এক চিঠিতে তার বৈধ মতামত সম্পর্কে সরকারের শীর্ষ আইনী উপদেষ্টা জয়ন্ত জয়সুরিয়া বলেন, বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করাটা অনুপযুক্ত। ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার মাত্র তিন বছর পর আবারও ক্ষমতায় ফিরে এলেন রাজাপাকসে। তিন বছর আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যার কাছে হেরেছিলেন সেই প্রেসিডেন্টই তাকে ক্ষমতার কেন্দ্রে ফিরিয়ে নিলেন। তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিলেন যার কাছে পরাজিত হয়েছেন সেই সিরিসেনা। রাজাপাকসে তার গোঁফের জন্য পরিচিত। তিনি সাদা শার্ট, ঝুলওয়ালা পোশাক ও মেরুন রঙের উত্তরীয় পরেন। শ্রীলঙ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর কাছে তিনি একজন নায়ক। তিনি সৌভাগ্যের কবচ হিসেবে কয়েকটি আংটি পরেন। তাকে লর্ড অব রিংস বলা হয়। রাজাপাকসের বিরুদ্ধে কূটনীতিকরা চরম মানবাধিকার লঙ্গনের অভিযোগ করেছেন সংখ্যালঘিষ্ঠ তামিলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময়। তিনি যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন সেই সময় ২০০৯ সালে এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলা সংঘাতের অবসান করেছিলেন। ২৬ বছরের গৃহযুদ্ধে এক লাখেরও বেশি লোক নিহত হয়। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর রাজাপাকসে এক বিবৃতিতে দুই কোটি ১০ লাখ জনঅধ্যুষিত দেশে ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক বিভক্তি অবসানের অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন, আমরা ঘৃণার রাজনীতি পরিহার করব এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করব। যা সকল নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষা করবে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করবে ও দেশের আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করবে। দক্ষিণাঞ্চলীয় উইরাকেটিয়ায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেন রাজাপাকসে। তারা ছিলেন নয় ভাইবোন। চার দশক ধরে তিনি ও তার অনেক আত্মীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আইনজীবী হিসেবে প্রশিক্ষণ নেয়া রাজাপাকসে তার বাবাকে সবসময় অনুসরণ করতেন। ১৯৭০ সালে তিনি সে সময় সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে পার্লামেন্ট সদস্য হন। তার কয়েক ভাই ও তাদের ছেলেরা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন। তার ছেলে নামাল লন্ডনে পড়ুয়া একজন আইনজীবী। তিনিও ২০১০সালে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে পার্লামেন্ট সদস্য হয়ে রেকর্ড গড়েন। কর্মজীবনের শুরুতে রাজাপাকসে শক্তিশালী মানবাধিকার রক্ষাকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি অনেক বামপন্থী ও মৌলবাদী বিক্ষোভে অংশ নেন। ২০০৫ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে তার কয়েকটি মন্ত্রণালয় চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২০০২সালের মার্চ মাস পর্যন্ত তিনি বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন। ২০০৪ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। পরে তিনি গৃহযুদ্ধের দিকে মনোনিবেশ করেন। সেনাবাহিনীর সংখ্যা বাড়ান ও তামিল টাইগারদের অঞ্চলে তাদের পাঠিয়ে যুদ্ধের অবসান করেন। ২০০৯সালে তামিলরা আত্মসমর্পণ করেন। পরের বছর তিনি নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে জয় পান।
×