ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আলোচনা সভায় বক্তারা

জেলহত্যার প্রকৃত সত্য জানাতে কমিশন গঠনের আহ্বান

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২ নভেম্বর ২০১৮

জেলহত্যার প্রকৃত সত্য জানাতে কমিশন গঠনের আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশকে পিছিয়ে দেয়ার যে চক্রান্ত ছিল, সেই চক্রান্তের জাল ছিঁড়তে সময় লাগলেও দেশকে পিছিয়ে রাখা যায়নি। স্বাধীনতা পক্ষের শক্তি ফের ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন অব্যাহত থাকলেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন যেমন বাস্তবায়ন হবে তেমনি জাতীয় চার নেতার আত্মাও শান্তি পাবে বলে জানিয়েছেন বক্তারা। একই সঙ্গে জেলখানার মতো জায়গায় এ হত্যাকা-ের প্রকৃত সত্য জানাতে একটি কমিশন গঠন করা যেতে পারে বলেও বক্তারা জানান। বৃহস্পতিবার শহীদ এম মনসুর আলী স্মৃতি সংসদ আয়োজিত রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মিলনায়তনে জেলহত্যা দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা নানা বিষয় তুলে ধরেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের হত্যাকা-টা পারিবারিক হত্যাকা- বলে জানিয়েছিলেন মোস্তাক আহমেদ। এরপর দেশের শত্রুরা সরকারও গঠন করেছিল। ক্রমে ক্রমে দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে এই সরকারকেই দরকার বলেও জানান তিনি। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, সংলাপের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে ড. কামাল যে চিঠি লিখেছেন সেটা বঙ্গবন্ধুকে সম্মান প্রদর্শন করে লেখা হয়েছে। খুব ভাল করেই ড্রাফট করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ড. কামাল বিএনপিকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে রাজনীতির মাঠে নেমেছেন। উনি প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া চিঠিতে সাত দফা নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু আমরা ওই সাত দফা ছাড়াও সব বিষয়ে আলোচনা করব। স্বাধীনতার পর এই নেতাকে যথেষ্ট স্নেহ করেছেন বঙ্গবন্ধু। স্মৃতিচারণ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, শহীদ মনসুর আলীকে আমি চাচা বলে ডাকতাম উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এই মহান নেতাকে বঙ্গভবনে ডেকে প্রধানমন্ত্রী হতে বলেছিল ষড়যন্ত্রকারীরা। তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চার নেতাসহ আরও নেতাদের গুলি করে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু মারা হয়নি। সেখান থেকে গ্রেফতার করে কারাগারে খুন করা হয়েছে। এর আগে থেকে মনসুর আলীসহ আওয়ামী লীগের সব নেতাদের গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিল। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু মৃত্যুর পর নির্মমভাবে জেলাখানায় হত্যা করা হয় চার নেতাকে। আমি বলব, বঙ্গবন্ধু মৃত্যুর পরে ডাক দিলেন তোমরাও চলে এসে। চলে গেলেন চার নেতাও। কিভাবে জীবন দিয়ে বন্ধুত্বের বিশ^স্ততা, নেতার প্রতি নেতার আশ্বস্ততা তা চার নেতার দিকে তাকালেও দেখা যায়। কৃষিমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেরা সময় পাড় করছে দেশ। দানবের সঙ্গে মানবের যে লড়াই চলছে এখানে মানবেরই জয় হবে সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবে বলেও জানান মতিয়া চৌধুরী। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, বঙ্গবন্ধু ও চার নেতাকে হত্যা করার মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়নি। হত্যা করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের রাজনীতিকে। বর্তমানে বিএনপি-জামায়াত জোট নিজেদের আশ্রয় ছেড়ে দিয়ে ড. কামাল, আ স ম আবদুর রবের আশ্রয় গিয়েছে। তারা মূলত তাদের ষড়যন্ত্রকে ঢাকতে এ কাজ করেছে। রাশেদ খান মেনন আরও বলেন, সংলাপের আগে তারা প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে অনেক কটূক্তি করেছিল। প্রধানমন্ত্রী যখন সংলাপের জন্য রাজি হলেন ও নৈশভোজের দাওয়াত দিলেন তখন মির্জা ফখরুল ইসলাম বললেন, এই সংলাপ ফলপ্রসূ হবে না। তাহলে এর আগে আপনারা কেন সংলাপের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর নামে কটূক্তি করেছিলেন। আবার এখন আতিথেয়তা বয়কট করতে চাচ্ছেন। একথা বলালেন মান্নাকে দিয়ে যিনি একসময় সকাল-বিকেল দুবেলা ভাত খেতেন এই স্থানে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যা, জাতীয় চার নেতার জেলহত্যা, ১৫ আগস্টের বঙ্গবন্ধু হত্যা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে হত্যার চেষ্টা একই সুতোয় গাঁথা। জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায় বলেন, নিরাপদ জায়গা হলো জেলখানা আর সেখানে হত্যা করা হলো জাতীয় চার নেতাকে। দীর্ঘ কয়েক বছর পর শুরু হয় বিচার কার্য। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই সাংবাদিক আরও বলেন, জাতীয় চার নেতাকে কেন হত্যা করা হলো সেই সত্য ঘটনা জানার জন্য একটি কমিশন গঠন করা দরকার। কমিশনের মাধ্যমে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে দেশের মানুষ সত্য জানতে পারবে। এছাড়াও মুজিবনগর সরকার যখন গঠন করা হয়েছিল সেসময় ভারতের এই চার নেতাকেই বিশ^াস করেছিল। আর তখন থেকেই ষড়যন্ত্রকারীরা পেছনে লেগেই ছিল। ১৫ আগস্টের ঘটনাও সেই ষড়যন্ত্রকারীদেরই অংশ। সভাপতির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বাবাকে (শহীদ এম মনসুর আলী) দেখেছি বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে যুদ্ধ ও দেশকে সাহসের সঙ্গে নেতৃত্ব দিতে। বাবার জানাজা আমি পড়তে পারিনি। কিন্তু আমার গর্ব আমি তার সন্তান। জাতীয় চার নেতা দেশকে ভালবেসে বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেননি। শহীদ এম মনসুর আলী ন্যায়ের পক্ষে লড়াই করতে কখনও মাথানত করেননি। ড. কামালকে বঙ্গবন্ধু বানিয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ড. কামাল নেতা হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর কারণে। কিন্তু এই শেষ বয়সে এসে কিসের লোভে তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির পক্ষে কথা বলছেন? আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাবেক শিল্পমন্ত্রী দীলিপ বড়ুয়া, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, শহীদ এম মনসুর আলী স্মৃতি সংসদের সভাপতি এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি তানভীর শাকিল জয় প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বক্তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস স্মরণ করে শহীদ এম মনসুর আলীর কৃতিত্ব, অবদান ও দেশপ্রেম বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
×