ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

ফের ভয়াবহ বিশ্ব মন্দার পদধ্বনি!

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২ নভেম্বর ২০১৮

ফের ভয়াবহ বিশ্ব মন্দার পদধ্বনি!

আরেক অর্থনৈতিক মন্দা আসছে। কবে আসছে দিনক্ষণ ধরে বলার উপায় নেই। তবে এর আগমন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আর এবারের মন্দা গতবারের মন্দার চেয়েও কঠিন হবে এবং একে মোকাবেলা করাটা হবে আরও বেশি কঠিন। এমন আশঙ্কাই অর্থনীতিবিদদের। এক বছর আগেও বিশ্বব্যাপী এক সময়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটছিল। ২০১৭ সালে ব্রিটেন ছাড়া প্রতিটি বৃহৎ উন্নত অর্থনীতির দেশে এবং বেশিরভাগ উদীয়মান দেশে প্রবৃদ্ধি বেড়েছিল। বিশ্ববাণিজ্যে জোয়ার এসেছিল এবং আমেরিকার অর্থনীতিতে তেজীভাব দেখা দিয়েছিল। ইউরো জোনের অর্থনীতিরও প্রসার ঘটেছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের চিত্রটা অতিমাত্রায় ভিন্ন। সম্প্রতি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগের সঞ্চার হওয়ায় বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে বছরে দুইবার এমন অস্থিরতা হলো। বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন বোধ করার কারণ মন্থর প্রবৃদ্ধি এবং আমেরিকার কঠোরতর আর্থিক নীতির নেতিবাচক প্রভাব। এসব আশঙ্কা অমূলক তো নয়ই বরং এর সুদূর ভিত্তি আছে। আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কর হ্রাসের পদক্ষেপের ফলে বার্ষিক প্রান্তিক প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের উপরে উঠেছে। বেকারত্ব ও ১৯৬৯ সালের পর থেকে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে। তারপরও আইএমএফ মনে করে যে, সমস্ত উন্নত দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এ বছর মন্থর হবে এবং উদীয়মান দেশগুলোও সমস্যাকবলিত হবে। আমেরিকার অবস্থার সঙ্গে বাকি উন্নত দেশগুলোর অবস্থা ভিন্ন রকম হওয়ার কারণ আর্থিক নীতির ক্ষেত্রে পার্থক্য। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ২০১৫ সালের পর থেকে সুদের হার ৮বার বাড়িয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার প্রথম দফা বাড়ানোর পর থেকে বহুদিন হয়ে গেল দ্বিতীয়বার আর বাড়ায়নি। জাপানে সুদের হার নেতিবাচক ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের প্রধান টার্গেট চীন অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে সম্প্রতি মুদ্রানীতি শিথিল করেছে। আমেরিকায় যখন সুদের হার বাড়ে অথচ অন্য কোথাও বাড়ে না তখন ডলার শক্তিশালী হয়। তখন উদীয়মান দেশগুলোর পক্ষে তাদের ডলারের ঋণ পরিশোধ করা কঠিনতর হয়। আর্জেন্টিনা ও তুরস্ক ইতোমধ্যে এই সমস্যায় পড়েছে। পাকিস্তান তার আর্থিক সঙ্কট থেকে উদ্ধার পেতে আইএমএফের ঋণ চেয়েছে। ক্রয়ক্ষমতার মানদ-ে বিচার করলে উদীয়মান দেশগুলো বৈশ্বিক উৎপাদনের ৫৯ শতাংশ করে থাকে। দুই দশক আগে এশিয়ায় আর্থিক সঙ্কট আঘাত হানার সময় এটা ছিল ৪৩ শতাংশ। আমেরিকায় সর্বশেষ আর্থিক সঙ্কটের পর এখন সুদিন চলছে, আমেরিকায় দ্বিতীয় দীর্ঘতম সম্প্রসারণ চলছে। কিন্তু সেটা কত দিনের জন্য? একদিন এই আপাত তেজীভাবের গতিপথ বদলে যাবে। নতুন অর্থনৈতিক মন্দার আগুন জ্বলে উঠবে যার জন্য বিশ্ব মোটেই প্রস্তুত নয়। কখন এই মন্দা শুরু হবে বলা কঠিন। মার্কিন ব্যবসায়ী মহলের গবেষণায় বলা হয়েছে যে বর্তমানে প্রবৃদ্ধির অধ্যায় থেকে সঙ্কোচনের অধ্যায়ে চলে যাওয়ার ব্যাপারটা তেজীভাবের জীবনচক্রের প্রথম দিকেও ঘটতে পারে কিংবা পরের দিকেও ঘটতে পারে। অর্থনীতির সম্প্রসারণের অধ্যায় এক দশকের বেশি স্থায়ী হয়েছে এমন রেকর্ড আমেরিকার নেইÑ তবে অনেক দেশেরই রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নেদারল্যান্ডসে টানা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্মরণকালের ইতিহাসে ২০ বছরেরও বেশি স্থায়ী হয়েছে। তবে সব শুভ দিনেরও একটা শেষ আছে। বৈশ্বিক মন্দার সচরাচর লক্ষণ হলো বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি দ্রুত মন্থর হয়ে যাওয়া এবং প্রকৃত মাথাপিছু জিডিপি হ্রাস পাওয়া। মোটামুটিভাবে বলা যায় যে, ১৯৮০ সালের পর থেকে চার চারবার বৈশ্বিক মন্দার আবির্ভাব ঘটেছেÑ ১৯৮০-এর দশকের প্রথম ভাগে, ১৯৯০-এর দশকের প্রথম ভাগে, ২০০১ সালে এবং ২০০৭-০৮ সালে যেটি ছিল বেশ গুরুতর। প্রতিটি মন্দার লক্ষণ ছিল জিডিপির প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে যাওয়া বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়া এবং আর্থিক খাতে কাটছাঁট হওয়া। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ১৮০০ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে গড়ে বছরে চারটি দেশে ব্যাংকিং সঙ্কট হয়েছে। ১৯৪৫ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত ছিল। এই অধ্যায়ের বেশিরভাগ সময়টা ব্যাংকিং সঙ্কট থেকে একেবারেই মুক্ত ছিল। ১৯৭৫ সালের পর থেকে অবশ্য প্রতিবছর গড়ে ১৩টি দেশ একবার করে ব্যাংকিং সঙ্কটের কবলে পড়েছে। ১৯৭০ এর দশকের পর থেকে জাতীয় ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিনিয়ন্ত্রণ এবং বিশ্বব্যাপী পুঁজির প্রবাহের ওপর বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের পর থেকে আর্থিক খাতে তেজীভাব ও ধসের এক নতুন যুগের আবির্ভাব হয়। ২০০৯ সালের পর থেকে এই চিত্রের মৌলিক কোন পরিবর্তন ঘটেনি। তেজীভাব যে বার্ধক্যে পৌঁছে মারা যায় তা নয়। আড়ালে এর প্রচুর ঘাতক লুকিয়ে আছে। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন নীতি ধীরে ধীরে তবে নিশ্চিতভাবে তেজীভাবের সহায়ক আর থাকছে না। আমেরিকা অবশ্য কিছুদিন আগে কর সংস্কারের যে নীতি নিয়েছে তাতে ঘাটতি স্ফীত হবে এবং আমেরিকানদের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। তবে অন্য বেশির ভাগ ধনী দেশের সরকারের ঋণ গ্রহণ হ্রাস পাচ্ছে। উদীয়মান বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেও আগামী দিনগুলোতে ঘাটতি হ্রাস পাবে। চীনা সরকার ঋণ নির্ভরতার রাশ টেনে ধরার চেষ্টা করছে এবং কিছুটা সফলও হয়েছে। শ্যান উইলিয়ামস নামে এক অর্থনীতিবিদ বলেন যে, ১৯৬১ সালের পর থেকে এখন যুক্তরাষ্ট্র তার ইতিহাসের দ্বিতীয় দীর্ঘতম অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের মধ্যে আছে। এই বাস্তবতা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক নির্দেশনগুলো বলছে, সে দেশের অর্থনীতির এই তেজীভাবের শীঘ্রই অবসান ঘটার সম্ভাবনা প্রবল। আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী চলতি বছর ও আগামী বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৩.৯ শতাংশ। তবে বিট উইটম্যান নামক এক অর্থনীতিবিদের মতে, বাণিজ্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের মধ্যে উত্তেজনা ও টানাপোড়েন যেভাবে বাড়ছে এবং সেই সঙ্গে অন্য যেসব কারণ যোগ হচ্ছে তাতে শীঘ্র হোক আর বিলম্বে হোক আরেক অর্থনৈতিক মন্দা অবধারিত। ক্রিস ফারেল নামে এক বিশ্লেষক বলেন, সামগ্রিক বিচারে দুই ধরনের পূর্বাভাস আছে সেগুলোকে হিসাবের মধ্যে নেয়া উচিত। প্রথমত মার্কিন অর্থনীতি আরেক এক মন্দার গ্রাসে পরিণত হবে এবং দ্বিতীয়ত এই মন্দা কবে আঘাত হানবে। এ মুহূর্তে মার্কিন অর্থনীতির চেহারা বেশ ভাল। মন্দার বাহ্যত কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবে সিরিয়াসধর্মী পাঠকরা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, দি ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, দি নিউইয়র্ক টাইমস ও ব্লুমবার্গের এই সংক্রান্ত নিবন্ধাবলী নিয়মিত পাঠ করে মন্দার ঝুঁকি পরিমাপ করার চেষ্টা করছেন। নিবন্ধনগুলোর বেশিরভাগের উপসংহার উদ্বেগজনক। সেটা হলো আরেক মন্দা আসছে এবং সম্ভবত তা ২০২০ সালের দিকে আঘাত হানবে। এই নিবন্ধকারদের অভিন্ন ধারণা হলো কর্পোরেট কর হ্রাসের ফলে অর্থনীতিতে যে তেজীভাব এসেছে তা আগামীতে ম্লান হয়ে যাবে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়লেও ব্যবসায় ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জোয়ার আসবে বলে প্রশাসন যেমনটা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা হয়নি। বিনিয়োগে জোয়ার এলে প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বেই শুধু নয়, টেকসইও হতো। ফলে অর্থনীতি এখন যে অবস্থায় আছে তা যে কোন ধরনের হোঁচট বা অপ্রত্যাশিত আঘাতের মুখে ধসে পড়ার আশঙ্কা আছে। সরকার, ব্যবসায়ী মহল ও ভোক্তারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে ঋণ করে চলেছে। ফেডারেল ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংক স্বল্পমেয়াদী সুদের হার বাড়িয়ে চলছে। এটা এক চাতুর্যপূর্ণ কৌশল যা হিতে বিপরীত হতে পারে। চীনের অর্থনীতিতেও চাপের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে এবং বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশে প্রবৃদ্ধি হোঁচট খাচ্ছে। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ নুরিয়েল রুবিনির মতে ইউরোজোন, ব্রিটেন, জাপান ও বেশকিছু উদীয়মান অর্থনীতির দেশে প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অর্থনীতির এখনও প্রসার ঘটে চললেও মার্কিন অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি আর্থিক প্রণোদনা দ্বারা চালিত হচ্ছে যা টেকসই নয়। রুবিনি ও আরও অন্যান্য অর্থনীতিবিদ সর্পিল বাণিজ্য যুদ্ধের সম্ভাবনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ট্রাম্প প্রশাসন চীনা পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক আরোপ করেছে। এ পর্যন্ত এসব শুল্কের অর্থনৈতিক প্রভাব নির্দিষ্ট কিছু শিল্পের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। কিন্তু বাণিজ্য যুদ্ধ যদি ব্যাপক আকার ধারণ করে এবং শুল্ক প্রাচীর সুউচ্চ হয়ে ওঠে তা হলে মার্কিন অর্থনীতিসহ বিশ্ব অর্থনীতি দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রক্ষণশীল বিলিয়নিয়ার শিল্পপতি চার্লস কোচ বলেছেন ট্রাম্পের শুল্ক নীতি অর্থনীতিকে মন্দার ঝুঁকিতে ঢেলে দিয়েছে। একটা প্রশ্ন অতি সঙ্গতভাবেই উঠতে পারে যে মার্কিন অর্থনীতির অবস্থা যদি নির্মেঘ আকাশ ও রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিনের মতো তা হলে দিগন্তে ঝড়ের অশনি সঙ্কেত কেন কিছু কিছু অর্থনীতিবিদ দেখতে পাচ্ছেন? এর উত্তর হচ্ছে অর্থনীতি বাহ্যত এত ভাল অবস্থায় আছে বলেই এমন আশঙ্কা করার কারণ ঘটছে। অর্থনীতির সম্প্রসারণ বা প্রবৃদ্ধির শেষের পর্যায়টা একটা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে মন্দায় চলে যাওয়ার আশঙ্কাটা সবচেয়ে বেশি। বেকারত্ব হ্রাস পাওয়া, মুদ্রাস্ফীতির উত্তাপ সঞ্চার করা, অর্থনীতিকে নিরুত্তাপ করার জন্য ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার হ্রাস করাÑ এগুলো অনেক সময় এত বেশি মাত্রায় হয় যে বিনিয়োগকারী ও ভোক্তারা নানা শঙ্কার কারণে পিছু হটে। তবে অর্থনীতিকে মন্দায় চলে যেতে হলে বিশেষ কিছু উপাদান লাগে। যেমন, ১৯৯০-৯১ সালে তেলের দামের উর্ধগতি, ২০০১ সালে শেয়ারবাজারে বিপর্যয়, ২০০৭ সালে আবাসন ব্যবসায়ে ধস। অর্থনীতিবিদ জেসি এডগারিন বলেন, মন্দা মূলত হলো নৈরাশ্যবাদের প্রাদুর্ভাব যা ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের অর্থ ব্যয়ের ব্যাপারে রাশ টেনে ধরে। সামনের দিনগুলোতে যে মন্দার আশঙ্কা করা হচ্ছে তার সম্ভাব্য আগমন পথ হলো মুদ্রাস্ফীতি ও পরিসম্পতের মূল্য বৃদ্ধি। বেকারত্ব হ্রাস ও মজুরি বৃদ্ধি ভাল। তবে শেষ পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধির কারণে কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়। এতে মুদ্রাস্ফীতি ঘটে। মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলায় ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়িয়ে দেয়। এতে ভোক্তা ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ঋণের খরচ এমনকি মর্টগেজ রেট বেড়ে যায়। ফলে বাড়ি বিক্রি হ্রাস পায়। গৃহস্থালি সামগ্রীর পেছনে ব্যয় ও ব্যবসায়ে বিনিয়োগও ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। নিম্ন ও মধ্য আয়ের আমেরিকানরা মুদ্রাস্ফীতির যন্ত্রণা আরও তীব্রভাবে অনুভব করবে। সামগ্রিকভাবে এগুলো অর্থনীতিকে মন্দার দিকে নিয়ে যাবে। তেলের মূল্য বৃদ্ধি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী প্রতিটি মন্দায় অবদান রেখেছে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার একটা অংশ কেড়ে নিয়ে। তেলের দাম বর্তমানে বাড়তির দিকে। ২০১৪ সালের তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১১২ ডলারের সর্বোচ্চ অঙ্কে পৌঁছার পর ক্রমান্বয়ে কমতে কমতে ২০১৬ সালের প্রথমদিকে প্রায় ২৬ ডলারে নেমে আসে যা ছিল সাম্প্রতিককালের সর্বনিম্ন। তারপর থেকে তা আবার বাড়তে বাড়তে এ বছরের প্রথমদিকে ৫৯ ডলারে দাঁড়ায়। এখন তা ব্যারেল প্রতি ৬৫ ডলারে দাঁড়িয়েছে। ইরান ও সৌদি আরবের সংঘাত তীব্রতর আকার ধারণ করলে সৌদি আরবের দৈনিক ১ কোটি ব্যারেল তেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কমে আসবে। সেক্ষেত্রে তেল ও গ্যাস উভয়ের দাম আরও বাড়বে যা মন্দার পথ প্রশস্ত করে দেবে। বৈশ্বিক মন্দা সৃষ্টির ব্যাপারে ইতালি একটা টাইম বোম্ব বা মেয়াদী বোমা হিসেবে কাজ করতে পারে। সেখানে এ বছর নতুন জলতুষ্টিবাদী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। ক্ষমতায় এসেই সরকার দেশের ব্যয় সঙ্কোচমূলক ব্যবস্থাবলী বদলে দেয়ার এবং নাগরিকদের ন্যূনতম আয়ের সংস্থান করার ঘোষণা দিয়েছে। এসব পদক্ষেপের সালে দেশের ঋণ সঙ্কট নতুন করে দেখা দিতে পারে। বলাবাহুল্য, ইতালির সরকারের কাঁধে বৈদেশিক ঋণের বোঝা জিডিপির ১৩০ শতাংশ। ইতালি যদি বন্ড ছেড়ে বাইরের দেশগুলো থেকে ঋণ সংগ্রহের চেষ্টা করে তা হলে ঋণ সঙ্কট আরও বাড়বে যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারা সরকারের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। এতে ইউরোপীয় ব্যাংক ও অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের জন্য হুমকি সৃষ্টি হবে। কারণ এরাই ইতালিকে সিংহভাগ ঋণ যুগিয়েছে। এর ফলে ইউরোপীয় অর্থনীতি নতুন ঝুঁকির মুখে পড়বে, বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারে অস্থিরতা দেখা দেবে। শেয়ারের দরপতন হবে এবং মার্কিন রফতানি মার খাবে। এসব কিছু থেকে সৃষ্টি হতে পারে নতুন বৈশ্বিক মন্দা। সেই মন্দা এমন ভয়াবহ রূপ নিতে পারে যে, তা কাটিয়ে উঠতে পারা দস্তুর মতো কঠিন হবে। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×