ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিদায় দশম সংসদ

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২ নভেম্বর ২০১৮

বিদায় দশম সংসদ

দশম জাতীয় সংসদ ছিল সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য এক মাইলফলক। সরকারী ও বিরোধী দলের সহাবস্থানে সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়েছে অধিবেশন। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সংসদ সদস্যরা বহাল থাকছেন। শেষ অধিবেশনের শেষ দিনে বিদায়ের বাণী উচ্চারিত হয়েছে। বিষাদের ছায়া নেমেছিল সংসদ ভুবন জুড়েই। সংসদ সদস্যরা শেষবারের মতো করমর্দন ও কুশল বিনিময় করেছেন। স্মৃতি ধরে রাখতে অনেকে আবার অধিবেশন কক্ষেই মোবাইল সেটে ছবি তোলেন। নানামুখী সমালোচনা, বিরোধিতা উপেক্ষা করেই সংসদীয় গণতন্ত্র চর্চার ধারা অব্যাহত রেখেছে দশম সংসদ। সকল প্রতিবন্ধকতা দূরীভূত করে দেশ ও জনগণের চাহিদা পূরণে সক্রিয় অবস্থান তৈরি করে নিতে পেরেছে বিদায়ী সংসদ। রাজনৈতিক ‘অনিশ্চয়তায়’ যাত্রা শুরু করলেও সংসদ সদস্যদের সক্রিয় ও দৃঢ় ভূমিকা গ্রহণের কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রম চলেছে। বলা যায়, বিতর্কে শুরু হলেও স্বস্তিতে শেষ হয়েছে পাঁচ বছর মেয়াদী সংসদ। অধিবেশন বর্জনের যে অব্যাহত ধারা ও সংস্কৃতি ইতোপূর্বের সংসদগুলো অবলোকন করেছে, দশম সংসদ তা থেকে বেরিয়ে এসে সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারাকে উচ্চাসনে ঠাঁই দিয়েছে। ২০১৪ সালের পাঁচ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াত জোটের নির্বাচন বর্জন এবং সহিংসতা ও নাশকতার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল নির্বাচন। গঠিত হয়েছিল দশম জাতীয় সংসদ। নির্বাচনে ১৫০ জন সাংসদ নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। সাংবিধানিকভাবে এরা নির্বাচিত হলেও এ নিয়ে বর্জনকারীরা নানামুখী অপপ্রচার, বিদ্বেষ, বিষোদগার চালালে তা ধোপে টেকেনি দেশে-বিদেশে। বর্জনের কারণে দলগুলো নিজেরা যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা বিলম্বে হলেও স্বীকার করছে তারা। তদুপরি নানা ঘটনার কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকছে এই সংসদ। এই প্রথম টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করার নজির স্থাপন করেছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আওয়ামী লীগ। এই সংসদ বেশিদিন টিকবে কিনা সে নিয়ে জল্পনা-কল্পনা কম হয়নি। কিন্তু সংসদ নেতা শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই সফল পরিসমাপ্তি ঘটেছে দশম সংসদের। এই সংসদ আরও দুটি ঘটনার জন্ম দিয়েছে, যা ঐতিহাসিক। এই সংসদের দুজন সদস্য আন্তর্জাতিক দুটি সংস্থার প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। স্পীকার কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারী এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং অপর একজন সংসদ সদস্য ইন্টার পার্লামেন্টারী ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এতে আন্তর্জাতিক আদর্শে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ভারমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। তাদের নেতৃত্বে ঢাকায় দুটি পৃথক সম্মেলনও হয়েছে। বিগত নবম সংসদে বিরোধী দল বিএনপি ৪১৮ কার্যদিবসের মধ্যে ৩৪২ দিনই সংসদে অনুপস্থিত ছিল। কিন্তু দশম সংসদে ৪১০ কার্যদিবসে বিরোধী দল একদিনের জন্যও সংসদে অনুপস্থিত থাকেনি। মাত্র সাতবার ওয়াকআউট করেছেন বিরোধীদলীয় সদস্যরা। তবে তা ছিল স্বল্প সময়ের জন্য। ২০১৪ সালে প্রথম বছরে ৩৬ কার্যদিবসে ১৯টি বিল পাস হলেও সর্বশেষ ২৩তম অধিবেশনে আট কার্যদিবসে পাস হয়েছে ১৯টি বিল। ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া সংসদের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল পাস। এর জের ধরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে পরস্পরকে প্রশংসা ও সহায়তার এমন নজির সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে বিরল। পুরো মেয়াদে বিরোধী দল তাদের গঠনমূলক ভূমিকার মাধ্যমে সংসদের কার্যক্রমকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে। দশম সংসদের ৪১০ কার্যদিবসে সংসদ নেত্রী উপস্থিত ছিলেন ৩৩৮ দিবস। অথচ নবম সংসদে ৩৪২ কার্যদিবসে বিরোধীদলীয় নেতা মাত্র ১০ কার্যদিবস হাজির ছিলেন। এবার বিল পাওয়া যায় ১৯৮, পাস হয়েছে ১৯৩। প্রত্যাহার হয়েছে চারটি। একটি নিষ্পন্ন হয়নি। দশম সংসদ কার্যকর সংসদ হিসেবেই অভিহিত হবে সংসদের ইতিহাসে। জনগণের অনেক আশা-আকাক্সক্ষা ও দাবি পূরণে এই সংসদ কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে।
×