ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সা রে গা মার মঞ্চ মাতানো নোবেল

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ১ নভেম্বর ২০১৮

সা রে গা মার মঞ্চ মাতানো নোবেল

মাইনুল আহসান নোবেল। উদীয়মান তরুণ কণ্ঠশিল্পী। শুধু তাই নয় ওপার বাংলার সা রে গা মার প্রতিযোগী হিসেবে অংশ নিয়ে বিচারকরদের দৃষ্টিই আকর্ষণ করলেন না একই সঙ্গে অগণিত ভক্ত-শ্রোতার সীমাহীন অর্ঘ্যে অভিষিক্তও হলেন। দুই বাংলায় বিভিন্ন সময় প্রতিভাবান শিল্পীর অনুসন্ধানে বর্ণাঢ্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল বেসরকারী টিভি চ্যানেল এনটিভির ‘তোমাকে খুঁজছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে। সারা বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উদীয়মান প্রতিভাদীপ্ত কণ্ঠকে খুঁজে তাদের সবার সামনে হাজির করা হয়। সেভাবে বিউটি, রাজীব ও নোলক একেবারে সামনের সারিতে চলে আসে। এরপর থেকেই অসাধারণ সুরেলা কণ্ঠ জনসমক্ষে উপস্থিত হতে থাকে। চ্যানেল আইয়ের ‘সেরা কণ্ঠ’ নির্বাচন ও অজানা অচেনা নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের যোগ্যতার মাপকাঠিতে তাদের যথার্থ আসেন বসানো হয়। পশ্চিম বাংলা ‘জি-বাংলা’ চ্যানেলও এমন প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন সারাদেশ থেকে শিল্পী বাছাই করে অসংখ্য ভক্ত-শ্রোতাকে উপহার দেয়। বাংলাদেশের সময়ের প্রজন্মরাও এই ধরনের প্রতিযোগিতামূলক উৎসবে নিজের অংশীদারিত্বকে প্রমাণ করার চেষ্টা করে। সা রে গা মাও তেমন একটি বিনোদনমূলক সঙ্গীতের আয়োজন যেখানে সেরা পারদর্শিতা দেখাতে পারলে বিচারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সময় লাগে না। সা রে গা মার এবারের আয়োজনে অংশ নেয় বাংলাদেশের তরুণ শিল্পীরা। প্রতিযোগিতায় নেমে অসম সাহসিকতায় নিজেদের তুলে ধরতে তারা কোনভাবেই পিছিয়ে থাকেনি। শুধু তাই নয় বিচারক থেকে আরম্ভ করে দর্শক-শ্রোতা মাতিয়ে গোপালগঞ্জের যে ছেলেটি সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয় সে হলো মাইনুল হাসান নোবেল। কবে যে, নিজের সেরাটা কণ্ঠ থেকে বের হয়ে গেল নোবেল টেরও পেল না। অসাধারণ কণ্ঠের অধিকারী এই তরুণ সর্বপ্রথম বিস্ময়ে হতবাক করে দিল মঞ্চে উপবিষ্ট জ্ঞানী-গুণী, বিজ্ঞ সঙ্গীতজ্ঞদের। শ্রীকান্ত আচার্য, মোনালি ঠাকুর এবং সান্তনু মৈত্রের মতো সঙ্গীতগুরুরা দাঁড়িয়ে নোবেলকে যেভাবে অভিনন্দন আর উৎসাহ জানালেন ততক্ষণে দর্শকরাও আনন্দে উল্লসিত হয়ে ওঠে। সাড়া পড়ে যায় সামাজিক গণমাধ্যমের বিভিন্ন পর্যায়ে। পুরো দেশ সচকিত হয় এমন একজন শিল্পীর অসামান্য কৃতিত্বে। যার নাম আগে সেভাবে শোনাও যায়নি। বিচারকরা শুধু মুগ্ধই হলেন না নিজেদের চেয়ার উপহার দিলেন নোবেলকে। নোবেল বিস্ময়ের সঙ্গে আরও প্রত্যক্ষ করল দিনের সেরা হিসেবে তাকে সোনার গিটার উপহার দেয়া। তখন সবাইকে নাড়া দেয় নোবেল। সে কে কোথায় তার ঠিকানা, শৈশব-কৈশোরের ঘটনাপ্রবাহ কি শিল্পী হয়ে ওঠার পর্যায়ক্রমিক ধারা? বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন এই তরুণ শিল্পী। আরও বিস্ময়ের সঙ্গে সবাই শুনল তার মুখে নিজের কথা। গোপালগঞ্জে জন্ম এই নোবেলের অতি শৈশব থেকে বাবার কণ্ঠে মান্না দে, জাগ্মময় মিত্রের গান শুনে সঙ্গীতের প্রতি ভালবাসা জন্মায়। বাবার বুকের ওপর কান পেতে গানের সুর ও বাণীকে ছোঁয়ার চেষ্টা করত। সে অবধি গান নিয়ে জীবন গড়ার কোন স্বপ্ন মাথায় আসেনি। গানের প্রতি আগ্রহ দেখে বাবা ভর্তি করিয়ে দিলেন সঙ্গীতালয়ে, কিন্তু আসাধারণত্ব যার প্রতিভাদীপ্ত কণ্ঠে সেকি কোন ধরাবাধা নিয়মে সঙ্গীতকে আয়ত্তে আনতে পারে? নোবেলও পারেনিÑ অতএব সঙ্গীত শিক্ষার পর্ব অনেকটাই সমাপ্ত। কিন্তু সুর তো তাকে সর্বক্ষণিক আবিষ্ট করে রাখে। সুরের সাগরে অবগাহন করার মনোবৃত্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার আগেই বাবা তাকে পাঠিয়ে দেন কলকাতায় লেখাপড়ার লক্ষ্য নিয়ে। সেখান থেকে ‘ও’ এবং ‘এ’ নোবেলের পাঠ সমাপ্ত করে বাংলাদেশে ফিরে আসে। আবারও নবোদ্যমে গানের জগতে সম্পৃক্ত হওয়া। একেবারে নিজের মতো করে। এখানে গুরু মানলেন জেমস এবং আইয়ুব বাচ্চুকে। তাঁদের গান গেয়ে নিজের সঙ্গীত জগত পূর্ণ করলেন। সা রে গা মা বাছাই পর্বেও জেমসের বাবা কতদিন দেখিনি তোমায় এবং ভিকি-ভিকি পরিবেশন করে নিজের দরাজ কণ্ঠে সবাইকে অভিভূত করলেন। বাংলাদেশের আর এক বিখ্যাত রকস্টার জেমসকে অতিক্রম করা নয়-নিজের কণ্ঠে সে আসাধারণ গানটিকে উপহার দিয়ে কৃতিত্ব প্রদর্শন করা সেও এক অভাবনীয় সঙ্গীত সাধনা। নোবেল শুধু দিন সেরাই নয় ‘সপ্তাহ সেরা’ বিবেচনায় নিজের যোগ্যতম আসনটি জয় করে নিল। এর পরের পর্বগুলো নোবেলকে কোন্ শীর্ষে নিয়ে যাবে তা এখন দেখার বিষয়। নোবেলের গানে বিচারকরা শুধু মুগ্ধতার জায়গায় গেলেন তা কিন্তু নয় মোনালি ঠাকুরের মতো ভারতে সঙ্গীতের জাতীয় পুরস্কার পাওয়া এই অনবদ্য শিল্পী বাংলাদেশের এই নতুন তারকার সঙ্গে দ্বৈত সঙ্গীত পরিবেশন করার ইচ্ছাও প্রকাশ করলেন। আর তার সর্ববিধ দায়িত্ব নিলেন আর এক সঙ্গীত গুরু ও পরিচালক সান্তনু মৈত্র। মোনালি ঠাকুরের মতো দুই বাংলাও অপেক্ষা করে আছে। সেই অসাধারণ দ্বৈত সঙ্গীতের পরিবেশনা শুনতে। প্রথম পর্বের আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান এভাবেই শেষ হলো। দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রত্যাশায় ভক্ত-শ্রোতা আর শুভানুধ্যায়ীরা। নবাগত এই তরুণ কণ্ঠ যথার্থ পরিচর্যায় তার গানের ভুবনকে আরও ভরিয়ে তুলবে এই কামনায় সারাদেশের মানুষ। প্রতিভা এমন এক অসাধারণ ক্ষমতা যে তার আপন শক্তিতে একদিন জ্বলে উঠবেই। নোবেল নতুন করে আবারও সেই প্রমাণই দিল। কণ্ঠে শুধু সুর নয় এক অনবদ্য শৈল্পিক শক্তি তাকে ভেতর থেকে অনুরণিত করতে থাকে যার অব্যাহত তাড়নায় নিজেকে গানের জগতে নিমগ্ন করে বিভোর হয়ে যায়। এই স্বাপ্নিক আবিষ্টতায় তাকে বহুদূর যেন নিয়ে যায়। বাংলাদেশের আর এক শিল্পী অবন্তী ও দর্শক এবং বিচারকদের মুগ্ধ করে দেয়। তাকে বলা হচ্ছে ‘শিসকন্যা’। সুরের অনুষঙ্গ এমন সুরেলা শিসের অনবদ্যতায় অবন্তী সবার নজর কেড়ে নিয়ে আপন বৈশিষ্ট্যে পারদর্শিতা দেখায়।
×