অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ স্বাধীনতার ৪৮ বছরে দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেলেও, বাড়েনি রেলের যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা। কমছে ট্রেনের বগির সংখ্যা, কিন্তু রেলপথে বাড়ছে যাত্রী চাপ। ফলে চাহিদার কম বগি দিয়ে বিপুল যাত্রী সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে রেলওয়ে। আর এতে ভোগান্তি বাড়ছে যাত্রীদের। বগি সঙ্কটকে রেলের লোকসানের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে তা বাড়ানোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।
ট্রেনে এসে দাঁড়ালেই একটু বসার জায়গা পেতে যাত্রীদের এই যুদ্ধ প্রতিদিনের। বিশেষ করে আশপাশের জেলাগুলো থেকে ঢাকায় প্রবেশ করা ট্রেনে তিল ধারনের ঠাঁই থাকে না। আসনের চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে দ্বিগুণ যাত্রী। যাত্রীরা জানান, ‘টিকেট কাটি তারপরেও সিট পায় না। দাঁড়ানোর জায়গা থাকে না। প্রতিদিন একই অবস্থা। একজন আরেক জনের শরীরের ওপর হেলে পড়ে।’
এসব ট্রেনের দরজা, জানালা, ইঞ্জিন তো বটেই, ছাদের উপরেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পড়ি দেয় আসনের প্রায় সমপরিমাণ যাত্রী। যাত্রীরা বলেন, ‘টিকেট কেটেছি। তারপরও নিরুপায় হয়ে আমি ছাদে উঠেছি। ভেতরে জায়গা নেই।’
১৯৬৯-৭০ সালে ট্রেনের বগি ছিল ১ হাজার ৬৪৩টি স্বাধীনতার ৪৮ বছরে বগির সংখ্যা বৃদ্ধি না পেয়ে সেখান থেকেই কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪১০টিতে। আর তখনকার সাত কোটি জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ছাড়ালেও, বাড়েনি বগির সংখ্যা ফলে টিকেট কেটেও এখন জায়গা হয় না বগির ভেতর।
১৯৬৯-৭০ সালে রেলওয়ে যাত্রী পরিবহন করেছিল সাত কোটি, এখনও আছে সেই সাত কোটির ঘরেই। বগি সঙ্কটের কারণে প্রতিবছর রেলের লোকসানের পাল্লা বাড়ছে বলে মনে করেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ‘আমার লোকসানের জন্য রাজস্ব যদি বাড়াতে হয় তাহলে কী করতে হবে? বগির সংখ্যা বাড়াতে হবে। এই দিকে গুরুত্ব না দিয়ে আমরা অবকোঠামোর উন্নয়নে নজর বেশি দিয়ে দিয়েছি।’ গত দশ বছরে ২৭০টি নতুন বগি কেনা হয়েছে জানিয়ে রেলপথ মন্ত্রী শোনালেন পরিকল্পনার কথা। রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, ‘১৫০টি কোচ অতি দ্রুত আমাদের বহরে যোগ হতে যাচ্ছে।’ বগি কেনার এই প্রকল্পটি ২০১৬ সালের, দুই বছরে কোন অগ্রগতি না হলেও বরাদ্দকৃত টাকার খরচ হয়ে গেছে প্রায় দশ কোটি।
