ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কেন্দ্রের সঙ্গে দ্বন্দ্বে ইস্তফা দিচ্ছেন ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক গবর্নর

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ১ নভেম্বর ২০১৮

কেন্দ্রের সঙ্গে দ্বন্দ্বে ইস্তফা দিচ্ছেন ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক গবর্নর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভারতের কেন্দ্র-রিজার্ভ ব্যাংক সংঘাতে শেষ পর্যন্ত কি ইস্তফাই দিতে চলেছেন গবর্নর উর্জিত প্যাটেল? কেন্দ্র বা রিজার্ভ ব্যাংক গবর্নরের তরফে কোন উচ্চবাচ্য না থাকলেও নানা মহলে গুঞ্জন অন্তত তেমনই। ঘটনা পরম্পরা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল অভ্যন্তরীণ এক পদস্থ কর্তার মন্তব্য, ‘আরবিআই গবর্নর ইস্তফা দিতে পারেন। সব বিকল্পই খোলা রয়েছে।’ অন্য একটি সূত্র দাবি করেছে, ‘কেন্দ্র ও রিজার্ভ ব্যাংকের মধ্যে অভূতপূর্ব সংঘাত তৈরি হয়েছে।’ শুক্রবার রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের চেষ্টা ভবিষ্যতের পক্ষে ভয়ঙ্কর ক্ষতিকারক হতে পারে, মন্তব্য করেন ডেপুটি গবর্নর বিরল আচার্য। ইঙ্গিত, কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ মুক্ত হওয়ার চেষ্টা আরবিআইয়ের। অভ্যন্তরীণ বিষয় জনসমক্ষে নিয়ে আসায় আরবিআইয়ের ওপর বেজায় ক্ষুব্ধ কেন্দ্র। মঙ্গলবার, রিজার্ভ ব্যাংক, সেবি, ইন্স্যুরেন্স রেগুলেটরি এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি, পেনশন ফান্ড রেগুলেটরি এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটির মতো আর্থিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কর্তাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির বৈঠক। মঙ্গলবার, আরবিআই-কে নজিরবিহীন সমালোচনা করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০০৮ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে রিজার্ভ ব্যাংকের ভ্রান্ত ঋণনীতির জেরেই বর্তমানে ব্যাংকগুলোর সঙ্গীন অবস্থা। এই সময়ে ব্যাংকগুলো যথেচ্ছ ঋণ দেয়ায় ব্যাংকগুলোর অনুৎপাদক সম্পত্তি বেড়েছে কয়েকগুণ। শুধু তাই নয়, গত কয়েক মাসে ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম তলানিতে ঠেকেছে। রিজার্ভ ব্যাংক একাধিক পদক্ষেপের পরও তা রোখা যায়নি। যা নিয়ে অর্থমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরেই বেজায় অসন্তুষ্ট। কেন্দ্র বারবার বলার পরও অনুৎপাদক সম্পত্তি বৃদ্ধিতে লাগাম পরাতে পারেনি আরবিআই। শেয়ার বাজারে ধস নামছে। আরবিআই বন্ড বিক্রি করে বাজার চাঙ্গা করার চেষ্টা করলেও তার ফল দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এ নিয়েও কেন্দ্র রিজার্ভ ব্যাংকের ওপর ক্ষুব্ধ। এর সঙ্গে স্বাধীনতার পর এই প্রথম আরবিআই আইনের ৭ নম্বর ধারা প্রয়োগের চেষ্টা করছে কেন্দ্র। এই আইনে বলা হয়েছে, জনস্বার্থ জড়িত এমন বিষয়ে প্রয়োজনে সময়ে সময়ে গবর্নরের সঙ্গে আলোচনা করে কেন্দ্র রিজার্ভ ব্যাংককে পরামর্শ দিতে পারে। আইন থাকলেও স্বাধীনতার পর থেকে কোনও সরকারই সেই আইন প্রয়োগ করেনি। কিন্তু অরুণ জেটলি আগেও ইঙ্গিত দিয়েছেন। বুধবার কার্যত স্পষ্টই জানিয়েছেন, এই আইন প্রয়োগ করতে চলেছে কেন্দ্র। কেন্দ্রের সম্ভাব্য ওই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। সব মিলিয়ে কেন্দ্র-আরবিআই বিবাদ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কার্যত দু’পক্ষের মধ্যে ঠা-া যুদ্ধের পরিস্থিতি। আর সেই যুদ্ধে আরবিআই গবর্নর উর্জিত প্যাটেল শেষ পর্যন্ত পরাজয় স্বীকার করে সরেই দাঁড়াতে পারেন বলে জল্পনা জোরদার হয়েছে রাজনৈতিক, ব্যাংকিং-সহ সংশ্লিষ্ট সব মহলে।
×