ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভোটে দাঁড়াব তবে অর্থমন্ত্রী আর নয় ॥ মুহিত

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১ নভেম্বর ২০১৮

ভোটে দাঁড়াব তবে অর্থমন্ত্রী আর নয় ॥ মুহিত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভিআইপি সংসদীয় আসন হিসেবে খ্যাত সিলেট-১ থেকে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে অর্থমন্ত্রী হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাওয়াকে তিনি দেখছেন বড় সৌভাগ্য হিসেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে আগামীতেও তাকে সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত থাকবেন তিনি। বুধবার সচিবালয়ের অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিজ অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। ওই সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর আগে নির্বাচন থেকে সরে আসার ঘোষণা দিলেও পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীকে সহযোগিতা করতে সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে সাংসদদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি আপনাদের কাছে দোয়া চাই। আমার জীবনে যা করতে সক্ষম হয়েছি, তার প্রধান কারণ হলো মানুষের দোয়া। মানুষের দোয়াই আমাকে উৎসাহিত করেছে। আমি অবসরে যাচ্ছি, এটা ঠিক তবে চলে যাচ্ছি না। সংশ্লিষ্ট থাকব। তবে অর্থমন্ত্রীর যে গুরু দায়িত্ব, তা আর পালন করছি না। দুটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতে আনীত প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থমন্ত্রী ওই সময় আরও বলেন, পৃথিবীতে শেখ হাসিনার মানের তিন থেকে চারজন প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন। তার সব ধ্যান-ধারণা জনকল্যাণে নিয়োজিত। এ রকম একজন নেতার অধীনে কাজ করে তাকে সহযোগিতা করাটা আমার জন্য সৌভাগ্যের বিষয়। যদিও তিনি চলতি বছরের শুরুতে নিজের জন্মদিনের এক অনুষ্ঠানে আভাস দিয়ে বলেছিলেন, সিলেটের এই আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসন। তাই রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেও পরিস্থিতির কারণে তিনি নির্বাচনে ফিরে আসতে পারেন। প্রসঙ্গত, ৩৬০ আউলিয়ার স্মৃতি বিজড়িত পুণ্যভূমি সিলেট। বরাবরই জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে একটি মিথ প্রচলিত আছে, ‘সিলেট-১ আসন যার, সরকার তার’। এ কারণে রাজনৈতিকদলগুলোও ভিআইপি আসন হিসেবে খ্যাত এই সংসদীয় আসনে ভিআইপিদের সব সময় মনোনয়ন দিয়ে থাকে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই আসন থেকে যে দলের সাংসদ নির্বাচিত হয়েছে তারাই শেষ পর্যন্ত সরকার গঠন করেছে। ফলে সিলেট-১ আসন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এই মুহূর্তে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বিকল্প কোন প্রার্থীর কথা ভাবছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। অর্থমন্ত্রীকে পুনরায় মনোনয়ন দিয়ে এই আসনে জয় পেতে চায় আওয়ামী লীগ। হযরত শাহ জালাল রহঃ এর মাজার এ আসনে অবস্থিত। এটি সিলেট জেলায় অবস্থিত জাতীয় সংসদের ২২৯নং আসন। যা মূলত সিলেট শহর নিয়ে গঠিত। এদিকে, অর্থমন্ত্রী হিসেবে সবচেয়ে বেশি সময় দায়িত্বপালন করা আবুল মাল আবদুল মুহিত দেশের সর্বাধিক বাজেট ঘোষণা ও তা বাস্তবায়নেও ইতোমধ্যে পারদর্শিতার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন। তার সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ হয়েছে। এই জিডিপি তিনি দুই অঙ্কের ঘরে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। বাজেটের আকার সাতগুণ বাড়িয়েছেন। এছাড়া দেশ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। তিনি এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন দারিদ্র্যবিমোচনে কাজ করছেন। সম্প্রতি তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করলে দেশের দারিদ্র্য দূর হয়ে যাবে। তবে অন্য কোন দল বা কেউ সরকার গঠনের সুযোগ পেলে উন্নয়ন কাজের গতি ধীর হয়ে পড়বে। একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে দারিদ্র্য নিরসন। তাই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে আবারও শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ দেয়া উচিত। প্রসঙ্গত, ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি) যোগদানের পর মুহিত তৎকালীন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার, পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকার এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে তিনি পরিকল্পনা সচিব এবং ১৯৭৭ সালে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগে সচিব পদে নিযুক্ত হন। ওয়াশিংটন দূতাবাসের তিনি প্রথম কূটনীতিবিদ, যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের জুন মাসে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন। মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ইতিহাস, জনপ্রশাসন এবং রাজনৈতিক সমস্যা বিষয়ক গ্রন্থসহ বিভিন্ন বিষয়ে মুহিতের ২৩টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের তিনি একজন পথিকৃৎ। তিনি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন এবং এর পূর্বসূরি ‘পরশ’-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে তাকে ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে সরকার।
×