ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাগর কোড়াইয়া

ব্যবহারে বংশের পরিচয়

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১ নভেম্বর ২০১৮

ব্যবহারে বংশের পরিচয়

সমাজের বাইরে কেউ নই। জীবন ধারণ ও গঠনের জন্য সমাজের সংস্পর্শ প্রয়োজন। মানুষ নিত্য নানাবিধ সামাজিকতার মধ্য দিয়ে সমাজের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার পাশাপাশি একে অপরের সান্নিধ্যে আসে। প্রতিটি সামাজেই গঠনমূলক মূল্যবোধ বিদ্যমান। এই মূল্যবোধগুলোর আলোকে সমাজে বসবাসরত মানুষ একে অপরের সঙ্গে ভাববিনিময় ও আচার আচরণ করে থাকে। ফলে সমাজ হয়ে ওঠে প্রত্যেক মানুষের জন্য নিরাপত্তা, সুখ-শান্তি, সহভাগিতা-সহযোগিতা, শৃঙ্খলা ও একাত্মতার স্থান। পরিবারে শিশু জন্মের পর বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তার মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধ শেখানোর তৎপরতা শুরু হয়। অভিভাবক ও আত্মীয়স্বজনরা প্রত্যাশা করেন যেন শিশুর মধ্যে শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ দিনে দিনে জাগ্রত হয়। আর এমন কতকগুলো বৈশিষ্ট্য বাঙালীর চরিত্রের সঙ্গে মিশে রয়েছে যা বাঙালী হিসেবে আমাদের গর্বের কারণ। বিশেষভাবে বাঙালীর মধ্যে সহজেই অপরকে আপন করে নেয়া, একে অপরের খবরা-খবর রাখা, বয়োজ্যেষ্ঠদের সামনে কনিষ্ঠদের শ্রদ্ধাবোধ, কনিষ্ঠদের স্নেহ-ভালবাসা প্রদান ও সমাজের প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেকের আচার-আচরণে ভদ্রতা ও ন¤্রতা সামাজিক বন্ধনকে আরও জোরালো-অটুট ও শান্তিময় করে গড়ে তুলে। দুঃখের বিষয় ধীরে ধীরে বহু ক্ষেত্রে সামাজিক মূল্যবোধগুলো যেন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বহুল প্রচলিত একটি কথা ‘ব্যবহারে বংশের পরিচয়’ ব্যক্তির ব্যক্তিগত ও বংশের যাবতীয় ভাল-মন্দ চিত্রগুলোকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসে। সমাজের কাছে উন্মোচিত হয়ে পড়ে ব্যক্তি ও বংশের যাবতীয় তথ্যাবলী। ব্যক্তির মুখোশের আড়ালে যে আরেকটি মুখ রয়েছে তারই কুৎসিত রূপগুলো তখন আপনি দিনের আলো থেকে বের হয়ে রাতের অন্ধকারে তারার মতো জ¦লজ¦ল করে জ¦লতে থাকে। বর্তমান এ অত্যাধুনিক যুগে এসে একটি প্রশ্ন সবচেয়ে বড় হয়ে প্রকাশিত হচ্ছে- আমাদের সমাজ থেকে কি ন¤্রতা, ভদ্রতা ও বিনয় হারিয়ে যাচ্ছে? উত্তর কোন কোন ক্ষেত্রে ইতিবাচক আবার অনেক ক্ষেত্রে নেতিবাচক। শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধের মতো যে প্রধান মূল্যবোধ দুটি মানুষ হিসেবে সবার মধ্যে থাকা আবশ্যকীয় তা যেন কিছু কিছু পর্যায়ে খুঁজে পাওয়া দুরূহ ব্যাপার। পরিবার, সমাজ, প্রতিষ্ঠান, দল-গোষ্ঠী, দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সামগ্রিক উন্নয়ন সাধনের জন্য নির্দিষ্ট বয়সের লোকের একাকী প্রচেষ্টা কখনই সাফল্য আসে না। বরং সমাজের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যেতে পারে। আর যখন সবাই একত্রিত হবে তখন সেখানে ভিন্ন মত থাকতেই পারে। তাই বলে ভিন্ন পথ সৃষ্টি করে শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ বহির্ভূত কোন কথা বা আচরণ কখনই গ্রহণীয় নয়। এ ধরনের আচরণ সমাজ, পরিবেশ ও বৃহৎ গোষ্ঠীর জন্য দৃষ্টান্তমূলক কোন উদাহরণ না হয়ে বরং ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি ও কুদৃষ্টান্তই সৃষ্টি করে। শুধু পরিবার নয় ন¤্রতা, ভদ্রতা ও বিনয়ের ফলে কর্মস্থল, সামাজিক কর্মকা- ও সম্মিলনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভিন্ন চিত্রের অবতারণা হয়। বর্তমানে নানাবিধ ঘটনা ও পরিস্থিতি তাই প্রকাশ করছে। বয়োজ্যেষ্ঠরাই সমাজের অভিভাবক। পরিবার, সমাজ ও দেশের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা বেশি। কারণ আজ তারা যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাবেন তাই উত্তরসূরিরা অভিজ্ঞতা করে বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা চালাবে। বনানী, ঢাকা থেকে
×