ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রক্রিয়াজাত খাদ্য

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১ নভেম্বর ২০১৮

প্রক্রিয়াজাত খাদ্য

খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ করে রফতানি আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের চাহিদা ও বিক্রি বেড়ে যাবে। দেশের কৃষিজীবী মানুষের জন্য যেমনি, তেমনি ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্পায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জন্য সুসংবাদ বৈকি। দেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে আরও ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে। আর কৃষিপণ্য রফতানির সম্ভাবনা ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। এ জন্য বর্তমানের দুরবস্থা কাটিয়ে মানোন্নত ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থাকে বিজ্ঞানসম্মত করা জরুরী হয়ে পড়েছে। যদিও সরকার কৃষি অর্থনীতির বিকাশ ঘটাতে খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করে সেই পণ্য রফতানির উদ্যোগ নিয়েছে। এমনিতে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের বিরাট অংশ পচে নষ্ট হয়ে যায়। অথচ সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয় এবং আলু ও পানে সপ্তম ও পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে রয়েছে। তুলনায় সেসব পণ্যকে কার্যকর পদ্ধতিতে রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ করা গেলে রফতানির ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হবে। রফতানি বাড়লে লাভবান হবে কৃষক, বাড়বে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পরিমাণ। কৃষিভিত্তিক শিল্পায়নের ক্ষেত্র তৈরি হবে। এজন্য সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা, উদ্যোক্তা বিশেষ করে যুবকদের উৎসাহিত করা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ পর্যাপ্ত ঋণ, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুত সরবরাহ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আর তা সম্ভব হলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ মডেল হতে পারবে। কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বর্তমানে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা কার্যকর হলে বিশাল সম্ভাবনার দরজা খুলে যাবে বাংলাদেশের জন্য। সরকার ‘রেডি টু ইট’ ক্যাটাগরির আওতায় শীতকালীন সবজি থেকে শুরু করে দেশে মৌসুমি ফল আম-কাঁঠালের মতো পণ্যের প্রক্রিয়াজাত খাবার রফতানি করবে বিদেশে। খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের বিকাশে কি সমস্যা রয়েছে এবং তা উত্তরণে করণীয় নির্ধারণে একটি রোডম্যাপ তৈরি করছে সরকার। সম্পূর্ণ কৃষিভিত্তিক এই শিল্পখাতে উদ্ভিদ, মৎস্য ও প্রাণিজ খাদ্য, মধু ও মৌমাছির বিপণন, বোতলজাত পানি ও লবণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে এই ‘ক্যাটাগরির’ আওতায় ১৪০ দেশে প্রক্রিয়াজাত খাবার রফতানি হচ্ছে। দেশে প্রায় ৬৮২ লাখ টন প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য উৎপাদন হচ্ছে আর রফতানি হচ্ছে প্রায় ১৭০ লাখ টন। সরকারী হিসেবে, ‘রেডি টু ইট’ পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার প্রায় সত্তর হাজার কোটি ডলার। এর বিপরীতে এ খাতে বাংলাদেশের রফতানি অতি নগণ্য। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, চাইছে ২০২১ সাল নাগাদ ছয় শ’ কোটি ডলার এবং ২০৪১ সাল নাগাদ আড়াই হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করতে। কৃষি অর্থনীতির আকার বাড়াতে ২০৩০ সালের মধ্যে কৃষির উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বিদেশী উদ্যোক্তারা বাংলাদেশ থেকে প্রক্রিয়াজাত খাবার আমদানির পাশাপাশি এ শিল্পে যৌথ অথবা একক বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ শুধু খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের জন্য পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির লক্ষ্যে জমি দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। এই শিল্পের উদ্যোক্তা বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সহযোগিতাও দেয়া হবে। অবশ্য এটা ঠিক যে, ঋতুভেদে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের সঠিক ব্যবহার করা গেলে দ্রুত এ শিল্পের রফতানি বাড়ানো সম্ভব। এই শিল্পের বিকাশ ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য গত বছর সরকার একটি জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করেছে। টাস্কফোর্সের বৈঠকগুলোতে বলা হয়েছে, এই শিল্পের আওতায় বাংলার ঐতিহ্য কুমিল্লার রসমালাই থেকে বগুড়ার দই, টাঙ্গাইলের চমচম, এমন কি নেত্রকোনার ঐতিহ্য বালিশ মিষ্টি সবই রফতানি করা সম্ভব। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে এ শিল্পখাত একদিকে যেমন কৃষকের পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করেছে, তেমনি প্রক্রিয়াকরণের কারণে কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণ করা যাচ্ছে বছরজুড়ে। স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর এসব খাদ্য দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা মেটাতেও সহায়তা করছে। প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য খাত জিডিপিতে দুই শতাংশের বেশি অবদান রাখছে। এই খাতে গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পাঁচশ’ মিলিয়ন ডলারের বেশি রফতানি হয়েছে। বাংলাদেশে প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো জরুরী।
×