ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার জেলদণ্ড

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১ নভেম্বর ২০১৮

খালেদা জিয়ার জেলদণ্ড

বহু প্রতীক্ষিত জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষিত হয়েছে। এটি বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং দেশের তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দুর্নীতির মামলা। এর ৮ মাস ২০ দিন আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছিল একই আদালত। তবে দুদকের আপীলের ভিত্তিতে উচ্চ আদালত তা আরও পাঁচ বছর বাড়িয়েছে। পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে সাত বছর সশ্রম কারাদ- ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন। জরিমানা অনাদায়ে অতিরিক্ত ছয় মাস কারাদ-ের বিধান দিয়েছে আদালত। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এই মামলায় ৩৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। বিশেষ আদালতে পরিচালিত এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের আইনী বাধ্যবাধকতা না থাকলেও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সুযোগ দেয়। রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষ প্রথম দিকে কিছু যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করলেও পরে প্রায় আড়াই বছর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন বন্ধ রাখে আসামিপক্ষ। একপর্যায়ে খালেদা জিয়াসহ তার আইনজীবীরা আদালত বর্জন করেন। এর এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ অক্টোবর রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন। এরপর আবারও খালেদার আইনজীবীরা রায় স্থগিতে আবেদন জানিয়ে উচ্চ আদালতে যান। শেষ পর্যন্ত সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে খালেদার লিভ টু আপীল খারিজ হয়ে যাওয়ায় আদালত রায় ঘোষণা করে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার খালেদা জিয়াসহ মোট আসামি চারজন, যাদের মধ্যে একজন পলাতক। মোটকথা, এই রায় প্রদানে অহেতুক বিলম্ব, সময়ক্ষেপণ তদুপরি রায় বানচালের জন্য হেন কোন অপচেষ্টা নেই, যা খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা করেননি। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা এবং জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাÑ এ দুটোই দেশে বিলম্বিত বিচারের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকল। একই সঙ্গে এটাও প্রমাণিত হলো যে, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় তহবিল তসরুফ করে কেউই পার পান না। রায়ের পর্যবেক্ষণেও বিষয়টি উঠে এসেছে এইভাবে যে, রাষ্ট্রক্ষমতার শীর্ষে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিগত একটি ট্রাস্টের জন্য অবৈধভাবে বিএনপির তহবিল এবং আরও একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জবরদস্তি করে অবৈধভাবে অর্থ সংগ্রহের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় খালেদা জিয়া ও তিন সহযোগীর সাত বছরের এই কারাদ-ের বিধান। উল্লেখ্য, রায় ঘোষণার দিন থেকেই এই সাজা কার্যকর হতে শুরু করেছে। বিএনপি অবশ্য এই রায়কে ‘ফরমায়েশি’ আখ্যা দিয়ে কর্মসূচী দিয়েছে। আবার এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথাও বলেছে। বর্তমানে খালেদা জিয়া কারাদ-িত অবস্থায় বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন। অতঃপর যে প্রশ্নটি সামনে চলে এসেছে তা হলো জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় যথাক্রমে দশ ও সাত বছর কারাদ-ে দ-িত হওয়ার পর খালেদা জিয়া আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন কিনা, এ প্রসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশন বলছে, খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি নির্ভর করছে আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর। অতএব মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
×