ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভূমিকম্প-সুনামিতে নিশ্চিহ্ন ইন্দোনেশীয় দ্বীপ এলাকা

প্রকাশিত: ০৭:২২, ৩১ অক্টোবর ২০১৮

ভূমিকম্প-সুনামিতে নিশ্চিহ্ন ইন্দোনেশীয় দ্বীপ এলাকা

সম্প্রতি দুটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের হিংস্র ছোবলে ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় দুই হাজার লোক নিহত ও ৭০ হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত ২৮ সেপ্টেম্বর ধুলাবেশি দ্বীপে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এরপর এক সুনামি ৮শ’ কিলোমিটার বেগে সেখানে আছড়ে পড়ে। জলরাশির উচ্চতা ছিল ৬ মিটার। ধ্বংসযজ্ঞে আড়াই হাজারেরও বেশি লোক গুরুতর আহত হয় এবং ৭৫ হাজার আশ্রয়হীন হয়। ঐ দ্বীপের পালু শহরের দুটি এলাকা বালারোয়া ও পেট্রোনো মূলত মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গণসমাধিতে পরিণত হয়। ভূমিকম্পের প্রচ-তায় পেটোনোর নরম মাটি তরল হয়ে এলাকাটি নিশ্চিহ্ন হয়। একই অবস্থা হয় বালানোয়ার এক বড় অংশের। এই দুই এ। রাকায় শত শত মানুষ মাটিচাপা পড়ে মারা গেছে। পালু শহরের পার্কগুলো সেইসব মানুষের আশ্রয় শিবিরে পরিণত হয়েছে যাদের বাড়িঘর নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। অনেকে উন্মুক্ত জায়গায় রাতযাপন করছে। জাতিসংঘের হিসেবে সুনামির তা-বে ১০ হাজার বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস ও ৬৫ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ভূমিকম্পে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৫ হাজার বাড়ি। প্রকৃতির এই ধ্বংসলীলার এক সপ্তাহ পর পালুতে নিহতদের স্মরণে এক গবেষণায় জানা যায় শত শত নারীপুরুষ অংশ শেষ এক দুর্যোগ ত্রাণকর্মী বলেন, পালুর বালানোয়া ও টেটোনোম ভূমিকম্পে মাটি এমন তরল আকার ধারণ করে যে হাজার খানেক লোককে তিন মিটার গভীর কাদা গ্রাস করে নিয়েছে। ঐ দুই স্থানের একটিতে ২৬ জন ও অন্যটিতে ৪৮ জন বেঁচে ছিল। পালুর একটি চারতারকা হোটেল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। মারকিউর নামে এই হোটেলের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে প্রাণের কোন চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি। সুনামি এত প্রচ- শক্তি পেল কোথা থেকে তার ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছেন বিশেষজ্ঞরা। একটি ব্যাখ্যা হলো সমুদ্র তলদেশে দুটো স্থলভাগের সংঘর্ষের কারণে এমন প্রচ- বেগে সুনামি হয়েছে। সুনামির আগে যে ভূমিকম্প হয়েছিল তার তীব্রতা থেকে অধিকতর শক্তিশালী ছিল এই সুনামির। আরেক ব্যাখ্যা হলো পালু যেখানে অবস্থিত সেটি একটি ত্রিকোনাকার উপসাগরের মতে যে কারণে জলরাশি সহজেই নগরীর দিকে ধাবিত হয়। ইন্দোনেশিয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ অতি সচরাচর হয়ে থাকে। গত বছরের শুরু থেকে সারা বিশ্ব ৬ বা ততোধিক মাত্রার যে ২০০টি ভূমিকম্প হয়েছে তার মধ্যে ১৯টি হয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়। ২০০৪ সালে সুমাত্রার উত্তরাঞ্চলের এক বিরাট অংশের সবকিছু প্রচ- সুনামিতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। নিহত হয় ২ লাখ ২০ হাজার নরনারী শিশু। গত আগস্ট মাসে লম্বকে ভূমিকম্পে নিহত হয়েছিল ৫শ’ জন। এবার সুনামির আঘাত হানার মাত্র কদিন আগে পালুর প্রায় ৬শ’ কিমি. উত্তর-পূর্বে এক আগ্নেয়গিরির অনুদগীরণ ঘটে। তবে এবারের ভূমিকম্প ও সুনামিতে মৃতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে হবার কারণ মধ্য সুলাবেশি প্রদেশটি অপেক্ষাকৃত দরিদ্র। দেশের বেশির ভাগ অংশের তুলনায় এখানে গত কয়েক বছরে গরিবের সংখ্যা কমেনি। এখানকার মজুরি জাতীয় গড় মজুরির নিচে। অবকাঠামোও অনুন্নত। ভূমিকম্প ও সুনামিতে পালুর সেনা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নগরীর বেশির ভাগ এলাকায় বিদ্যুত নেই, পানি নেই। হাসপাতালগুলোতে আহতদের ভিড়ে তিল ধারণের জায়গা নেই। একটি হাসপাতালের ইমার্জেন্সি রুমের ছাদ ভূকিমম্পে ধসে পড়েছে যার কারণে রোগীদের এখন হাসপাতালের বাইরে প্রচ- রোদের মধ্যে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসা উপকরণ ও সরঞ্জামের অভাব দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, সব ধরনের অত্যাবশ্যক পণ্যের সঙ্কট চলছে। পানির বোতল তিন চারগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। গ্যাসোলিনের জন্য শত শত মিটারের লম্বা লাইন লেগে আছে। ক্ষুধার্ত মানুষ মরিয়া হয়ে দোকানপাট বাসাবাড়িতে খাদ্যের জন্য হামলা করছে। ভূমিকম্পে স্থানীয় কারাগারগুলোর দেয়াল ভেঙ্গে পড়ায় ১২শ’র মতো আসামি বেরিয়ে পড়েছে। ভূমিকম্প পরবর্তী মৃদু মৃদু কম্পনগুলোর কারণে বাসিন্দারা ঘন ঘন বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসছে। রানওয়ে, সড়ক ও সেতু যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও বিধ্বস্ত হয়েছে তাতে ত্রাণকাজ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে ভূমিকম্প ও সুনামি কবলিত মানুষদের বহুদিন সময় লাগবে। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×