ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডিমের চড়া দাম কমছে না যে কারণে

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ৩১ অক্টোবর ২০১৮

ডিমের চড়া দাম কমছে না যে কারণে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশব্যাপী হঠাৎ করেই বেড়েছে ডিমের দাম। রাজধানীতে ৩৫-৩৬ টাকা হালির নিচে কোন ডিম নেই। প্রায় ১ মাস যাবত বেড়েছে দাম। কারণ হিসেবে উদ্যোক্তারা বলছেন, এর আগে টানা ৭-৮ মাস ডিম অস্বাভাবিক কম মূল্যে বিক্রি হওয়ায় অর্ধেকেরও বেশি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু শীতের প্রাদুর্ভাবে বেড়েছে ডিমের চাহিদা। ফলে উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে সমন্বয় না থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কম। সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৩৬ টাকা হালি। সাদা ডিম অবশ্য এক দুই টাকা কম। অন্যান্য ডিমের দামও চড়া। মিরপুরের ডিম বিক্রেতা শাহাদত হোসেন বলেন, পাইকারি বাজারে বাড়তি দামে ডিম কিনতে হচ্ছে। ফলে বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অক্টোবরের প্রথমদিকে ডিমের দাম এক লাফে ডজনে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। তখন ডিমের দাম উঠেছিল ডজন ১২০ টাকায়। গত ৯ অক্টোবর রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি ডজন লেয়ার মুরগির ডিম খুচরা দোকানে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা তার ৩ দিন আগেও ১০০ থেকে ১০৫ টাকা ছিল। কারওয়ান বাজারের ডিম বিক্রেতা মোঃ হারুন বলেন, ‘অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ সাত দফা দাবিতে ধর্মঘট করে পরিবহন শ্রমিকরা। এরপরই ডিমের দাম বাড়তে শুরু করে। এখন অবশ্য কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে।’ তবে ডিমের দাম বাড়তি থাকলেও বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কিন্তু তুলনামূলক কম। ১২০-১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। মিরপুর নতুন বাজারের মুরগি বিক্রেতা হোসেন আলী জানান, ঢাকায় না পরলেও গ্রামে শীত পরছে। আর ব্রয়লার মুরগির জন্য শীত মারাত্মক। ফলে অনেকে মুরগি ছেড়ে দিচ্ছেন। এজন্য দাম পাইকারি বাজারে কম। ঢাকার আশপাশের পাইকারি বাজারে ৯০ টাকা কেজিতে মুরগি মিলছে। ভাড়া ও অন্যান্য খরচ যোগ করে ১২৫ টাকায় বিক্রি করছি। এদিকে সহসাই মুরগির ডিমের দাম কমছে না বলে জানিয়েছেন উৎপাদকরা। তারা বলছেন, গত ৭-৮ মাস ধরে অব্যাহত লোকসানে অনেকে ডিম পাড়া মুরগি বিক্রি করে দিয়েছেন। অনেকে নতুন করে খামারে আর মুরগি তুলেননি। ফলে চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের গ্যাপটা সহসাই কমছে না। তাদের আশা দাম এই অবস্থায় থাকলে অনেকেই আবার ডিম উৎপাদনে উৎসাহিত হবেন। এতে ৫-৬ মাসের মধ্যে উৎপাদনও বাড়বে। এ বিষয়ে ডিম উৎপাদক এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাহের আহাম্মেদ সিদ্দিকী বলেন, ডিমের দাম যে খুব বেশি সেটা বলা যাবে না। মাসখানেক আগে যে দামে মানুষ ডিম খেয়েছে, সে দামে ডিম বিক্রি করলে কোন খামারি টিকে থাকতে পারবে না। এমনটা হয়েছেও। অর্ধেকের বেশি ছোট খামারি মার খেয়েছেন, মুরগি বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, স্বল্প দামে আমিষ পাওয়া যায় একমাত্র ডিমে। এখন বাজারে ৮ থেকে সাড়ে ৮ টাকায় ডিম পাওয়া যাচ্ছে। এর চেয়ে কম মূল্যে কিনে খেতে চাইলে আমাদের জন্য মুশকিল। কারণ আমরা খুব কম লাভে বাজারে ডিম ছাড়ছি। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এ্যাসোসিয়েশন (বিপিইএ) সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে পাইকারি বাজারে ডিম গড়ে ৩০-৩১ টাকা হালি দর হারে বিক্রি হচ্ছে। পরিবহন ব্যয় ও হাত বদলের কারণে খুচরা বাজারে দাম কিছুটা বেড়ে যাচ্ছে। দেশব্যাপী পোল্ট্রি পণ্যের (ডিম ও মুরগির) সোমবারের পাইকারি দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, গড় হারে ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি সাদা ডিম ৭.৩০ টাকা, লাল (বাদামি) ডিম ৭.৫৫ টাকা। গাজীপুর/মাওনায় লাল (বাদামি) ডিম সাড়ে ৭ টাকা, সাদা ডিম ৭.২৫ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ৯০ টাকা কেজি। বগুড়ায় লাল (বাদামি) ডিম ৭.৮০ টাকা প্রতিপিস, সাদা ডিম ৭.৪০ টাকায়। অপরদিকে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ৯৫ টাকা আর সোনালী মুরগি ১৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বরিশালে লাল (বাদামি) ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতিপিস ৭.২০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি ৯০ টাকায়। ময়মনসিংহে লাল (বাদামি) ডিম প্রতিপিস ৭.৪০ টাকা, সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ৭.১০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগির দাম পড়বে ৯০ টাকা কেজি। রংপুরে লাল (বাদামি) ডিম প্রতিপিস বিক্রি হচ্ছে ৭.৪০ টাকায়, ব্রয়লার মুরগির কেজি ১০২ টাকা। চট্টগ্রামে প্রতিপিস লাল (বাদামি) ডিম কিনতে খরচ হচ্ছে ৭.৭০ টাকা, সাদা ডিম ৭.৩০ টাকা, আর ব্রয়লার মুরগি ৯০ টাকা কেজি। সিলেটে লাল (বাদামি) ডিম বিক্রি হচ্ছে ৮.১০ টাকায়। আর ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ৯৫ টাকায়। রাজশাহীতে লাল (বাদামি) ডিম বিক্রি হচ্ছে ৭.২০ টাকায়, সাদা ডিম ৭ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগি ১০০ টাকা কেজি। কক্সবাজারে লাল (বাদামি) ডিমের দাম পড়ছে প্রতিপিস ৭.৮০ টাকা, সাদা ডিম ৭.৬০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১১৫ টাকা দরে।
×