ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনার বিচার করবেন?

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৩১ অক্টোবর ২০১৮

শেখ হাসিনার বিচার করবেন?

হাতী-ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল? সিলেটে ছিল তর্জন, চট্টগ্রামে গর্জন। আগে তারা বলেছিলেন, সরকার দাবি না মানলে তারা আন্দোলনের কর্মসূচী দেবেন। চট্টগ্রামে তারা হুঙ্কার দিয়ে বলেছেন, তাদের ৭ দফা না মানা হলে এই সরকারের তারা বিচার করবেন। ড. কামাল হোসেন আইনের মানুষ। তার মুখে এখন বেআইনী কথা শোনা যাচ্ছে। চট্টগ্রামের সভায় তিনি বলেছেন, “সময় থাকতে ৭ দফা দাবি মেনে নিন। অন্যথায় এটা অমান্য করার জন্য বিচার হবে। জনগণের সিদ্ধান্তকে অমান্য করলে, উপেক্ষা করলে যে শাস্তি আপনারা পাবেন, সেটা কল্পনাও করতে পারবেন না।” এত বড় হুঙ্কার আমরা বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠেও শুনিনি। তিনি ৬ দফার আন্দোলনে নেমে কখনও বলেননি, আইয়ুব সরকার তার ৬ দফা দাবি মেনে না নিলে তাদের বিচার করবেন এবং কঠোর শাস্তি দেবেন। বলেছেন, আন্দোলন করে দাবি আদায় করবেন। তা তিনি করেছিলেন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর অনুসারী বলে নিজেকে দাবি করে ড. কামাল হোসেন চট্টগ্রামের জনসভায় হুঙ্কার দিয়েছেন, “বঙ্গবন্ধুর কন্যার তিনি বিচার করবেন। কঠোর শাস্তি দেবেন।” এই হুঙ্কারে তাল মিলিয়েছেন আর সকলেই। আ.স.ম রবের কণ্ঠে শোনা গেল বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, “আমরা বলতে এসেছি, তোমাদের অধীনে নির্বাচন হবে না”- সরকারকে উদ্দেশ করে এ কথাগুলো বলা হয়েছে। ব্যারিস্টার মওদুদ হুঙ্কার দিয়েছেন, দাবি না মানলে দেশে তারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করবেন। তার দল অতীতে শুধু নৈরাজ্য নয়, দেশজুড়ে হত্যা ও সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু করেছিল। তার পরিণতি কী হয়েছে সে কথা চাঁটগার সভায় বলেননি। এক সময় এ ভাষায় কথা বলতেন বেগম জিয়া, তারেক রহমানসহ বিএনপির নেতারা। ‘৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হাসিনাকে দেশ ছাড়া করব‘, ‘হাসিনাকে পিতার পথে পাঠিয়ে দেব,’ ‘পঁচাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’ ইত্যাদি সেøাগান বিএনপির মঞ্চ থেকেই শোনা গেছে। এখন ঐক্যফ্রন্টের মঞ্চ থেকে আবার শোনা যাচ্ছে। এই মঞ্চটি যে আসলে বিএনপি-জামায়াতের মঞ্চ এবং মঞ্চের সেøাগানগুলোও যে তাদেরই এ কথা প্রমাণ করার জন্য আর সাক্ষী সাবুদের দরকার নেই। তবে শেখ হাসিনার বিচার করার কথা বলার ‘ধৃষ্টতা এখন পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের কোন নেতা দেখাননি। তারা শেখ হাসিনাকে দেশছাড়া করার হুমকি দিয়েছেন। আর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যিনি রাজনীতিতে এসেছেন, তার কন্যার হাত ধরে এই সেদিনও রাজনীতি করেছেন, তিনি এখন বিএনপির নেতা সেজে শেখ হাসিনা ও বর্তমান সরকারের বিচার এবং শাস্তি দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। ভাগ্যের পরিহাস কাকে বলে? ডন কুইকজোট একটা খোঁড়া ঘোড়ায় চড়ে ভাঙ্গা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কল্পিত শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেছিলেন। একুশ শতকের বাঙালী ডন কুইকজোট একটি নয়, একাধিক খোঁড়া ঘোড়া নিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেছেন। তার জন্য ডন কুইকজোটের একটি পরিণতি অপেক্ষা করছে কিনা আমরা জানি না। হাসিনা সরকারের বিচার তো দূরের কথা, এই সরকারের বিরুদ্ধে একটি আন্দোলন গড়ে তুলে তাতে নেতৃত্ব দেয়ার সাহস তিনি রাখেন কি? অতীতে দেশের কোন আন্দোলনেই তার নেতৃত্বদানের উদাহরণ আছে কি? না, অনির্দিষ্টকালের জন্য বিদেশে পালিয়েছেন? তার ‘সাহসী নেতৃত্বের’ একটা উদাহরণ দেই। স্বৈরাচারী শাসনামলের কথা। এই শাসনের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কয়েকটি দলের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চলছে। ড. কামাল হোসেন তখন দেশে। পল্টন ময়দানে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে বিশাল জনসভা হবে। ড. কামাল হোসেন সভার প্রধান বক্তা। ঢাকার মেয়র ছিলেন বিএনপি দলীয় আবুল হাসনাত। পল্টনের জনসভার আগের দিন আবুল হাসনাত এক সভায় হুঙ্কার দিয়ে বললেন, ‘ড. কামাল হোসেন যদি একদিনের মধ্যে দেশ ছেড়ে না যান এবং পল্টনের সভায় বক্তৃতা দিতে আসেন, তাহলে তার খবর আছে।’ এই হুঙ্কার শুনে কামাল হোসেন কী করলেন? তার বিবরণটা আমার প্রয়াত বন্ধু ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ভাষায় দেই। হানিফ ওই সভা পরিচালনা করছিলেন। তিনি মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন, “এখন আপনাদের সামনে ভাষণ দেবেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী, আওয়ামী লীগের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নেতা ড. কামাল হোসেন।” কিন্তু কামাল হোসেন মাইকের সামনে এলেন না। আবার ঘোষণা দিলেন। এবারও তিনি নেই। মোহাম্মদ হানিফ মঞ্চে তার চেয়ারের দিকে চেয়ে দেখেন মঞ্চ শূন্য। ড. কামাল নেই। ড. কামাল হোসেনের জন্য খোঁজ খোঁজ পড়ে গেল। পরে জানা গেল তিনি সভায় আসেননি। ঢাকাতেও নেই। ওই সন্ধ্যার ফ্লাইটেই তিনি লন্ডনে চলে গেছেন। পরবর্তী ঘটনার আমি সাক্ষী। তখন লন্ডনে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন মোশতাক আহমদ কোরেশী। ওয়েস্ট লন্ডনে শেফার্ডস বুশে তার একটি রেস্টুরেন্ট ছিল, নাম মুর্শিদাবাদ তন্দুরি রেস্টুরেন্ট। মোশতাক কোরেশী আমার বন্ধু ছিলেন। তিনি আমাকে জানালেন, স্বৈরাচারী সরকার ড. কামালকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। তিনি আমাকে জানিয়েছেন। আমার রেস্টুরেন্টে দেশের অবস্থা জানার জন্য একটি সভা ডেকেছি। ড. কামালের মুখে আমরা শুনব স্বৈরাচারী শাসনে দেশের মানুষের দুর্ভোগের কথা। আমাদের সহসংগ্রামী সকলকেই বলেছি। আপনিও আসবেন। আমি ততক্ষণে ঢাকা থেকে মোহাম্মদ হানিফের টেলিফোন পেয়ে সব কথা জেনে ফেলেছি। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, ড. কামাল লন্ডনে এসে পৌঁছেছেন কিনা! আরও জানালেন, তিনি হঠাৎ দেশ থেকে পালিয়েছেন। ঢাকার নাগরিক সভায় তার বক্তৃতা দেয়ার কথা ছিল, তিনি দেননি। মেয়র আবুল হাসনাতের হুমকির ভয়ে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। আমি তাকে জানালাম, তিনি এখন লন্ডনে। শেফার্ডস বুশে মুর্শিদাবাদ রেস্টুরেন্টে পৌঁছতে আমার দেরি হয়েছিল। গিয়ে দেখি ড. কামাল হোসেন বিজয়ী বীরের মতো বক্তৃতা দিচ্ছেন। দেশে যে আন্দোলন তারা করছেন, সেই আন্দোলনে স্বৈরাচারী সরকারের অচিরেই পতন হবে সে আশ্বাসও দিলেন। লন্ডনের বাঙালীদেরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করার ডাক তিনি দিলেন। লন্ডনের বাঙালীরা তখনও ঢাকায় তিনি কী করেছেন তা জানে না। সভা শেষে রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়ার পাট। আমি ড. কামাল হোসেনের পাশেই বসেছিলাম। তাকে বললাম, আপনার তো গতকাল পল্টনের ময়দানে বক্তৃতা দেয়ার কথা ছিল। তিনি প্রথমে একটু হকচকিত হলেন। তারপর বললেন, হ্যাঁ ছিল, আমার লন্ডনের ফ্লাইট ধরার তাড়া ছিল। তাই সভায় যেতে পারিনি। আমি বললাম, ওরা তা জানে না। আপনাকে বক্তৃতা দিতে ডাকা হয়েছিল। ডাকার পর ওরা দেখে আপনি মঞ্চে নেই। অথচ আপনিই ছিলেন সভার প্রধান বক্তা। আপনি কি হাসনাতের হুমকির জন্য লন্ডনে চলে এলেন? ড. কামাল এবার গর্জে উঠলেন, নো, নো, ঢাকার চাইতেও জরুরী কাজে আমাকে আসতে হয়েছে’। এরপর আমি আর কথা বাড়াইনি। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন যখন লন্ডনেও তুঙ্গে, তখন একাধিক সভায় আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার না আসা, অথবা এলেও সভা থেকে সহসা অন্তর্ধানের বহু কাহিনী লিখতে পারি। তাতে তিনি লজ্জা পাবেন মনে হয় না। এখন তিনি বিএনপির কাঁধে চড়ে হাসিনা এবং তার সরকারের বিচার ও শাস্তির ভয় দেখাচ্ছেন। আগে নির্বাচনে আসুন, জয়ী হোন, তারপর বর্তমান সরকারের বিচার ও শাস্তির হুমকি দিলে কি সঙ্গত হতো না? ড. কামাল করবেন আওয়ামী লীগের নেতাদের বিচার? শুনে হাসি পায়। তিনি যখন বঙ্গবন্ধু সরকারের আইনমন্ত্রী, তখন রাজাকার, আলবদরদের শাস্তি দেয়ার কথা বলে ক’জন দেশদ্রোহীর বিচার করেছিলেন? বঙ্গবন্ধু তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে বসিয়ে দিল্লীতে পাঠিয়েছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের পাওনা আদায় এবং পাকিস্তানে বসে গোলাম আযম প্রমুখ যেসব জামায়াত নেতা তখনো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিলেন তাদের ফেরত আনা সম্পর্কে আলোচনার জন্য। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তখন ছিলেন আজিজ আহমদ (২১ ফেব্রুয়ারি, ’৫২ ঢাকায় গুলিবর্ষণের হুকুমদাতা)। তার সঙ্গে আলোচনায় শুরুর সঙ্গে স্কুলছাত্রের মতো আচরণ ছিল ড. কামালের। এটা আমার কথা নয়। টাইমস অব ইন্ডিয়ার মতো কাগজে এই মন্তব্য ছাপা হয়েছিল। আজিজ আহমদের কাছ থেকে তিনি একটা কানাকড়িও আদায় করতে পারেননি। এই কামাল হোসেন এখন যাবেন জনগণের দাবি দাওয়া আদায়ে সংগ্রামে, হাসিনা সরকারের বিচারের ব্যবস্থা করতে! শুনে একটি দুধের শিশুও হাসবে। দিল্লীতে আজিজ আহমদের সঙ্গে বৈঠক করে যে গোলাম আযমদের তিনি দেশে ফিরিয়ে আনতে পারেননি, তারা পরে দেশে ফিরেছেন, এখন যে বিএনপি-জোটের মাথায় তিনি বসেছেন, সেই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়ার কৃপায়। তাদের তখন বিচার হয়নি। তারা দেশে ফিরে বিএনপির শরিক দল হয়ে ক্ষমতায় বসে দেশে একটি মৌলবাদী জঙ্গীগোষ্ঠীর উত্থানের পথ তৈরি করে দিয়ে গেছেন। শেখ হাসিনা জনগণকে সঙ্গে করে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী এবং ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন। ড. কামাল হোসেন এত বড় আইনজীবী। তিনি এই বিচার প্রক্রিয়াতেও ছিলেন না। দোহাই দিয়েছেন, সরকার তার সহযোগিতা চাচ্ছেন না। একজন আইনজীবী হিসেবে ঘাতক ও দেশদ্রোহীদের বিচারে দায়িত্ব পালনে কি সরকারের অনুমতি লাগে? ব্রিটিশ আমলে যখন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষে ধৃত আজাদ হিনদ্ ফৌজের সেনাপতি ধীলন, শাহনেওয়াজ প্রমুখকে যুদ্ধাপরাধী করে ব্রিটিশ সরকার বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিল, তখন জওয়াহেরলাল নেহেরুকে কেউ তাদের আইনজীবী নিয়োগ করেনি এবং তিনি আইনের প্রাকটিস করতেনও না; কিন্তু অব্যবহৃত ও ধূলিধূসরিত ব্যারিস্টারের কোট ও টাই ঝেড়ে মুছে পরিধান করে অভিযুক্তদের পক্ষে আদালতে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। ড. কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধুর ঘাতক ও ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধী কারোরই বিচার ও দ-দানে কোন ভূমিকা গ্রহণ করেননি। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার প্রাণনাশের জন্য যে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয়, তার অপরাধীরা চিহ্নিত হওয়া সত্ত্বেও তাদের বিচার ও শাস্তিদানের আন্দোলনে নেমে আসেননি। কিন্তু আজ সেই মামলার দ-িতদের মুক্তিদানের দাবি জানিয়ে তাদেরই জোটে গিয়ে নেতৃত্ব গ্রহণ করে হুমকি দিচ্ছেন, তিনি হাসিনাকে তাদের সাত দফা দাবি না মানলে বিচার করবেন এবং শাস্তি দেবেন। তার এই সাত দফায় কী আছে? দুটি প্রধান দফাই হলো গুরুতর দুর্নীতির দায়ে উচ্চ আদালত কর্তৃক দশ বছরের জন্য দ-িত (আগের ৫ বছরের সাজা বাড়িয়ে আদালত ১০ বছর করেছে এবং আরও একটি অপরাধে আরও ৭ বছর জেল দিয়েছে) বেগম খালেদা জিয়াকে এবং তার পুত্র গ্রেনেড হামলার খুনী হিসেবেও দ-িত পলাতক তারেক রহমানকে বিনা শর্তে মুক্তি দিতে হবে। এরা দু’জনেই রাজনৈতিক বন্দী নন এবং রাজনৈতিক কারণে নয়, হত্যা ও দুর্নীতির দায়ে আদালত দীর্ঘ মেয়াদের কারাদ- দিয়েছে। ড. কামাল হোসেন দাবি করেন তিনি আইনের বরপুত্র এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াইয়ে নেমেছেন। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, দুর্নীতি ও খুনের চক্রান্তের দায়ে দ-িত দুই অপরাধীর পক্ষ নিয়ে আইনের শাসনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তিনি তাদের মুক্তি দাবি করছেন। (কামাল তুনে কামাল কিয়া ভাই)! ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাফ জবাব ‘৭ দফার এক দফাও মানা হবে না।’ এই জবাবের পর ঐক্যফ্রন্টের সামনে একটাই পথ ছিলÑ কর্মসূচী ঘোষণা করে আন্দোলনে নামা। যে কর্মসূচী তারা সিলেটের জনসভা থেকেই দেবেন বলে দেশবাসীকে জানিয়েছিলেন, সেই ঘোষণা সিলেট জনসভা থেকে আসেনি! চাঁটগার জনসভা থেকেও আসেনি। তার বদলে এসেছে হাসিনাকে বিচার করার হুমকি। তারপর হুমকি দেয়ার পরই হাসিনার সঙ্গে দেখা করার সকাতর আবেদন-লিপি। লিপিটি পাঠিয়েছেন স্বয়ং বিএনপি জোটের নেতা ড. কামাল হোসেন। ইতোপূর্বেও বিএনপি সরকারের সঙ্গে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছে। সরকার বলেছে, সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবের ভিত্তিতে তারা সংলাপে রাজি। তবে বিএনপিকে জামায়াতের সংশ্রব ছেড়ে আসতে হবে। বিএনপি বলেছে, সরকারকেই এই সংলাপের উদ্যোগ নিতে হবে। সরকার রাজি হয়নি। এক্ষণে কামাল হোসেন তাদের লেজ নামিয়ে সাত দফার ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা-বৈঠকে বসতে আবেদন জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়েছেন। বলেছেন, সংবিধানের ভিত্তিতে যে কোন বিষয়ে তিনি আলোচনায় রাজি। স্পষ্টই বোঝা যায়, তিনি সংবিধানবহির্ভূত বিষয় যেমন খালেদা জিয়া ও তারেকের দ- মওকুব, নির্বাচনকালীন বিএনপির পছন্দের সরকার গঠন বা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ইত্যাদি অবাস্তব দাবি মেনে নিতে রাজি হবেন তার কোন কারণ নেই। নির্বাচনে বিচারিক ক্ষমতাসহ সামরিক বাহিনী মোতায়েন কোন গণতান্ত্রিক দেশে সাধারণত হয় না। বাংলাদেশেও মোতায়েনের কোন কারণ নেই। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী দেশ রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব পালনেই নিযুক্ত থাকবে। পাকিস্তানের মতো ‘মক্স এ্যান্ড মিলিটারি’র ওপর নির্ভরতা বাংলাদেশে বিএনপির রাজনীতিরও বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশে বিএনপি ছাড়া আর কোন গণতান্ত্রিক দলের নেই। এখন এই বৈশিষ্ট্য কামাল হোসেনরাও ধারণ করলেন। প্রধানমন্ত্রীর তাতে সম্মত হওয়ার কোন সঙ্গত কারণ থাকবে কি? দেশে বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষা, কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি, নির্বাচনে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ ইত্যাদি ব্যাপারে সরকারেরও দ্বিমত আছে বলে মনে হয় না। (বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কি সত্যই দেশে ক্ষুণœ করা হয়েছে?) সরকার নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক বন্দী মুক্তিও শুরু করেছে। সুতরাং এসব ব্যাপারে সরকার ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে কথা বলতে পারে, ব্যবস্থা গ্রহণও করতে পারে। তাতে সন্তুষ্ট হয়ে কামাল হোসেন সাহেবরা বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে নির্বাচনে অংশ নেবেন এটাই আশা করা যায়। তারা নিজেরাও জানেন, এর বাইরে আন্দোলন করার শক্তি তাদের নেই। জনসমর্থনও নেই। প্রমাণÑ খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধির প্রতিবাদে তারা দেশব্যাপী গতকাল মঙ্গলবার বিক্ষোভ দিবস পালনের ডাক দিয়েছিলেন। তাতে গাছের একটি পাতাও নড়েনি। [লন্ডন, ৩০ অক্টোবর মঙ্গলবার ২০১৮]
×