ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

সাবেক এনএসআই ডিজি ওয়াহিদুলের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৩১ অক্টোবর ২০১৮

সাবেক এনএসআই ডিজি ওয়াহিদুলের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যাসহ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের মামলায় পাকিস্তান আর্মির সাবেক ক্যাপ্টেন ও এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি মোঃ ওয়াহিদুল হকের (৬৯) বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। মঙ্গলবার ধানম-ির তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান। এটি তদন্ত সংস্থার ৬৫তম প্রতিবেদন। মঙ্গলবারই ওই তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখায় জমা দেয়া হয়েছে। আব্দুল হান্নান জানান, ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর এ মামলার তদন্ত শুরু করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ মতিউর রহমান। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর এ মামলার তদন্ত সম্পন্ন হয়। এ মামলায় মোট ৫৪ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ রবিবার বিকেল অনুমান সাড়ে চারটায় সময় অভিযুক্ত ক্যাপ্টেন ওয়াহিদুল হক রংপুর ক্যান্টনমেন্টে অবস্থিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৯ ক্যাভেলরি রেজিমেন্টের এ্যাডজুটেন্টের দায়িত্বে থাকিয়া ৪টি সামরিক জীপে মেশিনগান লাগাইয়া গুলি বর্ষণ করিয়া রংপুর সেনানিবাস সংলগ্ম এলাকায় ৫শ’ থেকে ৬শ’ স্বাধীনতাকামী বাঙালীকে হত্যা, গণহত্যা ও অসংখ্য মানুষকে গুরুতর আহত করিয়াছে। গুলিবর্ষণ করিয়া সংলগ্ন এলাকায় বাড়ি ঘরে আগুন দিয়া পুড়াইয়াছে। হত্যা, গণহত্যার শিকার মানুষের লাশ পেট্রোল ঢালিয়া আগুনি দিয়া পুড়াইয়া দিয়া কয়েকটি গর্তে মাটি চাপা দেওয়া হইয়ছে’। চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল সকালে আসামি ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর বারিধারার বাসা থেকে ওয়াহিদুল হককে গ্রেফতার করা হয়। পরে ২৫ এপ্রিল তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে ট্রাইব্যুনাল আসামি ওয়াহিদুল হককে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা যায়, আসামি ওয়াহিদুল হকের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। ১৯৬৬ সালের ১৬ অক্টোবর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ১১ ক্যাভালরি রেজিমেন্ট কমিশন প্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে বদলি সূত্রে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্টে যোগদান করেন। এরপর সেখান থেকে পাকিস্তানের মুলতান ক্যান্টনমেন্টে চলে আসেন। পরে ১৯৭০ সালের মার্চ মাসে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্ট রংপুর সেনানিবাসে স্থানান্তরিত হন। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত এই রেজিমেন্টের এ্যাডজ্যুটেন্ট হিসেবে রংপুর সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালের এপ্রিলে বদলি হয়ে আবার তিনি পাকিস্তান (পশ্চিম পাকিস্তান ) চলে যান। সেখানে তিনি ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করেন। ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে তিনি দেশে ফিরে আসেন। সে সময় তাকে সেনাবাহিনী থেকে অবসর দেয়া হয়। এরপর ১৯৭৬ সালের ১ অক্টোবর ওয়াহিদুল হক বাংলাদেশ পুলিশের এএসপি হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭৭ সালে কুমিল্লার এএসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। পরে ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ১৯৮২ সালে নোয়াখালী জেলার পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটনে অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম রেঞ্জে তিনি ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার হিসেবে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এনএসআই’র পরিচালক ছিলেন। পরে একই সংস্থার ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পান। এরপর ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি পাসপোর্ট অফিসের ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০২ সাল তিনি পুনর্নিয়োগ পান। পরে ২০০৫ সালে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ওয়াহিদুল হক ১৯৭১ সালে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর রংপুর ক্যান্টনমেন্টে হত্যা-গণহত্যার ঘটনা ঘটান। পাকিস্তান আর্মির সদস্য হিসেবে সেই ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গিয়েছে। তার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে তদন্ত সংস্থায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আসে। সেই অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে তদন্ত শুরু করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ রংপুর ক্যান্টনমেন্টে ৫শ’ থেকে ৬শ’ নিরস্ত্র বাঙালী ও সাঁওতালকে ধরে এনে মেশিনগান দিয়ে তাদের হত্যার ঘটনায় তিনি জড়িত ছিলেন। এছাড়াও বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
×