ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শীতের সবজি চাষ

শিম লাউ বেগুন টমেটো বাম্পার ফলন, ভাগ্য বদল কৃষকের

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৩১ অক্টোবর ২০১৮

শিম লাউ বেগুন টমেটো বাম্পার ফলন, ভাগ্য বদল কৃষকের

শেখ আব্দুল আওয়াল ॥ আগাম সবজি চাষের ধুম লেগেছে। ইতোমধ্যে কিছু কিছু সবজি বাজারে আসতে শুরু করেছে। শীতের আগাম সবজি বাজারে তুলতে পারলে বেশি টাকা লাভ করা সম্ভব এই চিন্তা থেকেই কোমর বেঁধে চাষে ব্যস্ত চাষীরা। ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শেষ রাত থেকেই সকাল পর্যন্ত কুয়াশা পড়ছে। দিনে গরম থাকলেও রাতে হালকা শীত অনুভূত হয়। আবহাওয়ার এমন পালা বদলে চাষাবাদের ধরনও পাল্টেছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে এমন দৃশ্যই দেখা যায়। সম্প্রতি সবজি চাষ করে লাভবান হওয়ায় কৃষকরা আগাম সবজি চাষে ঝুঁকেছে। শীতের আগেই বাজারে বিক্রি করে বেশি টাকা আয়ের উদ্দেশে জমিতে শীতকালীন শাক, সবজি পরিচর্যা ও উত্তোলন করে যাচ্ছে। শীতকালীন সবজি লাউ, বেগুন, মূলা, লাল শাক, সিম ও কপিসহ অন্যন্য সবজি চাষে বদলে দিয়েছে ১৫ ইউনিয়নের সাড়ে ৯ হাজার কৃষকের ভাগ্য। সবজি চাষ করে ১০ লাখ টাকার লাউ, বেগুন, সিম, কপি, লাল শাক বিক্রি করে নিজেদের ভাগ্য বদলে অনেক কৃষক হয়েছে লাখপতি। আর কৃষকের ভাগ্যে এ সফলতা এনে দিয়েছে সরকারের নানামুখী উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের কারণে। গফরগাঁও উপজেলার চরআলগী, দত্তের বাজার, টাঙ্গাব ও পাঁচবাগ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে শীতে লাউ, গোল ও লম্বা বেগুন, কপি, মূলা, সিম, লাল শাক চাষ করে বদলে যাচ্ছে হাজারো কৃষকের ভাগ্যের চাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার লাউ, বেগুন কপির বাম্পার ফলন হবে বলে আসা করছে কৃষকরা। উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের উৎপাদিত লাউ, বেগুন, কপি, মূলা, সিম, লাল শাক স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রফতানি হচ্ছে। সারা বাংলায় গফরগাঁওয়ের বেগুনের চাহিদা ও সুনাম দুটোই রয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার ১১০০ হেক্টর জমিতে শাক-সবজি চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এর মধ্যে লাউ ৪০০ হেক্টর জমিতে, বেগুন চাষ হয়েছে ২৬০ হেক্টর জমিতে, কপি ১৭০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। ২৭০ হেক্টর জমিতে অন্যান্য সবজি চায় হয়। উর্বর দোআঁশ মাটির প্রাচুর্যের কারণে উপজেলার চরআলগী, দত্তের বাজার, টাঙ্গাব, রসুলপুর, সালটিয়া, গফরগাঁও ও পাঁচবাগ এই সাত ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ধানের চেয়ে রবিশস্য ও সবজি আবাদ বেশি হয়। বর্তমানে উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের নয়াপাড়া, চরমছলন্দ জিরাতি পাড়া, কাচারীপাড়া, নিধিয়ারচর ভাটিপাড়া, চরকামারিয়া, চরমছলন্দ উত্তর নয়াপাড়া ও চরআলগী গ্রামে, টাঙ্গাব ইউনিয়নের ব্রাহ্মণখালী, বাশিয়া ও টাঙ্গাব গ্রামে, পাঁচবাগ ইউনিয়নের চরশাঁখচূড়া, খুরশিদ মহল, গাভীশিমুল গ্রামে, গফরগাঁও ইউনিয়নের দুগাছিয়া, পাঁচপাই, তেঁতুলিয়া, উথুরী গ্রামে এবং দত্তের বাজার ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাপকভাবে লাউ, বেগুন, কপি, মূলা, লাল শাক উৎপাদিত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের উপজেলার লাউ, বেগুন, কপি, মূলা, লাল শাক ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে এ অঞ্চলের রবি শস্যের অন্যতম গোল ও লম্বা বেগুন, লাউ, কপি, মূলা ও সিম। কৃষক শহীদুল্লাহ, আব্দুর রশিদ, মাহাবুল ও ফজলুল হক বলেন, গফরগাঁও উপজেলার চরআলগী এই এলাকার সবজি ভা-ার হলেও এখানে কোন হিমাগার নেই। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই উপজেলায় একটি হিমাগার নির্মাণ করে দেয়ার দাবি জানান। কৃষকরা জানান, প্রতি একর জমিতে বেগুন চাষ করতে খরচ পড়ে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এই ফলন বাজার দর অনুযায়ী প্রতি একর জমির বেগুন সাড়ে ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেন কৃষকরা। প্রতি একর জমিতে ২০ হাজার টাকা খরচ করে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। বুড়াখালী গ্রামের লাউ চাষী আব্দুর রশিদ জানান, এবার তিনি এক একর জমিতে লাউ চাষ করেছেন। এতে তার সর্বসাকুল্যে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত তিনি ক্ষেত থেকে লাউ তুলে পাইকারের কাছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। একই গ্রামের মাহবুল হোসেন এবার দুই একর জমিতে লাউ চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি ক্ষেতের লাউ তুলে বাজারে এনে খুচরা ও পাইকারদের কাছে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছেন। আরও অন্তত ১ থেকে দেড় লাখ টাকার লাউ বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি জানান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার পাল জানান, চরআলগী, টাঙ্গাব, গফরগাঁও, রসুলপুর, পাঁচবাগ ও দত্তের বাজারসহ কয়েকটি ইউনিয়নে এবার লাউ, বেগুন, কপির বাম্পার ফলন হয়েছে। ১১০০ হেক্টর জমিতে শাক-সবজির আবাদ করে লাভবান হয়েছেন প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কৃষক। আশা করছি চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার সবজি বিক্রি করবে কৃষকরা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডাঃ শামীম রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, যেহেতু গফরগাঁও উপজেলা চরআলগী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন সবজি ভা-ার খ্যাত। কৃষকের হিমাগার তৈরির যে দাবি সেই দাবির বিষয়ে স্থানীয় এমপি মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করে হিমাগার তৈরির বিষয়টি সরকারে সংশ্লিষ্ট মহলে অবহিত করা হবে।
×