ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জিয়াউল হকসহ ৮ জনকে অভিযুক্ত করে দীপন হত্যার চার্জশীট

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৩১ অক্টোবর ২০১৮

জিয়াউল হকসহ ৮ জনকে অভিযুক্ত করে দীপন হত্যার চার্জশীট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তিন বছর পর প্রকাশক ফয়সাল আরেফীন দীপন হত্যা মামলায় নিষিদ্ধ আনসারুলাহ বাংলা টিমের সামরিক শাখার প্রধান ও সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকসহ ৮ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হয়েছে। অভিযুক্তরা নিষিদ্ধ আনসার আল ইসলামের সদস্য। এই জঙ্গী গোষ্ঠীর সামরিক কমান্ডারের দায়িত্বে থাকা জিয়ার পরিকল্পনা ও নির্দেশেই এই হত্যার ঘটনা ঘটানো হয়। এমনকি এই হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত মইনুল হাসান শামীমের জবানীতেও জিয়ার নাম উঠে এসেছিল। মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়ার সেন্টারে সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর ঘটে যাওয়া এই হত্যাকাণ্ডে আনসার আল ইসলামের ৯ জঙ্গী জড়িত ছিল। এদের মধ্যে ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা হচ্ছে, সুনামগঞ্জের মইনুল হাসান শামীম (২৪), কুমিল্লার মোঃ আব্দুস সবুর (২৩), চট্টগ্রামের খায়রুল ইসলাম (২৪), মোঃ শেখ আব্দুল্লাহ (২৭), লালমনিরহাটের মোঃ আবু সিদ্দিক সোহেল (৩৪) ও ময়মনসিংহের মোঃ মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন (২৫)। এই ছয় জন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে। দীপন হত্যাকাণ্ডে কার কী ভূমিকা তা বলেছে। মনিরুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, সাংগঠনিক সিদ্ধান্তেই দীপনকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত সৈয়দ জিয়াউল হক ও ঢাকার আকরাম হোসেন হাসিব পলাতক। এই হত্যাকাণ্ডে ৯জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলেও আটজনকে অভিযুক্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া গেলে তা আদালতে জমা দেয়া হবে। পলাতক নবম জঙ্গীর নাম-ঠিকানা পাওয়া গেলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হবে। সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান জানান, অনুমোদনের জন্য অভিযোগপত্রটি সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। দীপন হত্যা মামলাটি তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলা চলার সময় টিএসসিতে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মুক্তমনা লেখক-ব্লগার অভিজিত রায়কে। এরপর কয়েক মাসের ব্যবধানে আরও কয়েকজন ব্লগার-লেখককে হত্যা করা হয়। নৃশংস ওই খুনের ধারাবাহিকতায় ওই বছরের ৩১ অক্টোবর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ফয়সল আরেফিন দীপনকে। ওই দিনই লালমাটিয়ায় আরেক প্রকাশনা সংস্থা শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে ঢুকে এর কর্ণধার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলসহ তিনজনকে একই কায়দায় কোপানো হয়। ওই দুই প্রকাশনা থেকেই বিজ্ঞান লেখক অভিজিত রায়ের বই প্রকাশিত হয়। একই দিনে দুই প্রকাশকের ওপর হামলার পেছনে নিষিদ্ধ আনসারুল্লাহ বাংলাটিমকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছিল পুলিশ। এর আগে অভিজিত রায়সহ ব্লগার হত্যার তদন্তেও ওই জঙ্গী সংগঠনটির নাম উঠে আসে। পুলিশের ধারণা, আনসারুলাহ বাংলাটিমই নাম বদলে আনসার আল ইসলাম নামে সক্রিয়। দীপন হত্যার ঘটনায় শাহবাগ থানায় তার স্ত্রী ডাঃ রাজিয়া রহমান অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেছিলেন। মামলার তদন্ত শুরুর পর দফায় দফায় প্রতিবেদন জমার তারিখ পেছানোয় হতাশা প্রকাশ করেছিল দীপনের পরিবার। এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল জানান, অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করায় এবং কোন সূত্র না থাকায় (ক্লুলেস) তদন্তে লম্বা সময় লেগেছে।
×