ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

একনেকে ২৪ হাজার ৭৪০ কোটি টাকার ২৪ প্রকল্প অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৩১ অক্টোবর ২০১৮

একনেকে ২৪ হাজার ৭৪০ কোটি টাকার ২৪ প্রকল্প অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মিয়ানমারের নির্যাতনের মুখে সীমান্ত পার হয়ে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। তবে উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শিবিরে সুপেয় পানি, স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক সেবাসহ অন্যান্য সেবা অপ্রতুল। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গারা নানা ঝুঁকির মধ্যেও রয়েছে। ইতোমধ্যেই সরকারসহ বিভিন্ন মানবিক সংস্থা সহায়তা করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। তাই দাতাসংস্থার সহায়তার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জন্য মাল্টি সেক্টর সহায়তা প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। পরবর্তীতে রোহিঙ্গারা ফেরত গেলেও স্থানীয়রা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রাহিঙ্গাদের জন্য মাল্টি সেক্টর সহায়তা প্রকল্পসহ মোট ২৪ প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম এবং শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস। মন্ত্রী বলেন, এই ২৪ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৭৪০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে দেয়া হবে ১৯ হাজার ৩৬১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এছাড়া বাস্তবায়নকারী সংস্থা দেবে ৩০৬ কোটি চার লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে পাঁচ হাজার ৭২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা খরচ করা হবে। জরুরী ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় মাল্টি সেক্টর প্রকল্পটির প্রাক্কলিত খরচ ধরা হয়েছে এক হাজার ৫৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে এক হাজার ৪৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এতে সাহায্য করেছে বিশ্বব্যাংক। এটি স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর বাস্তবায়ন করবে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্প এলাকা হচ্ছে, চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলা। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা যতদিন কক্সবাজারে থাকবেন ততদিন তাদের ভাল-মন্দ দেখার দায়িত্ব আমাদের। আমরা তাদের ভাল থাকার ব্যবস্থা করছি। যখন তারা মিয়ানমারে ফেরত যাবেন তখন সেখানকার স্থানীয় বাংলাদেশীরা এসব অবকাঠামোর সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। কেননা রোহিঙ্গাদের কারণে তারা অনেক কষ্ট ভোগ করছেন। বিশ্বব্যাংক ও এডিবিসহ অনেক সংস্থা ও দেশ অনুদান দিচ্ছে। আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য সুপেয় পানি, স্বাস্থ্য ও পয়ঃনিষ্কাশন, আশ্রয় শিবিরের ভেতরে সড়ক, ফুটপাথ, বাতি, হাটবাজার উন্নয়ন, যোগাযোগকারী সড়ক, সেতু, সাইক্লোন সেল্টার, মাল্টিপারপাস কমিউনিটি কেন্দ্র, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ইত্যাদি কাজ অতি জরুরী ভিত্তিতে নির্মাণ করা প্রয়োজন। আশ্রয় শিবিরগুলোতে মানবিক সহায়তা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সহায়তা দিলেও তা সৃষ্ট সঙ্কট মোকাবেলায় অপর্যাপ্ত। মুস্তফা কামাল জানান, একনেকে ডাকঘরগুলোতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ই-কর্মাসসহ বিভিন্ন নতুন কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণের পাশাপাশি যেখানে গণহত্যা হয়েছে, সেখানকার গণকবরে যারা শায়িত আছেন তাদের নাম খুঁজে বের করে তালিকা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যাদের নাম পাওয়া যাবে না, সেখানে লিখতে হবে অজানা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সব পুলিশের জন্য পর্যায়ক্রমে আবাসন ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য প্রত্যেক জেলায় একটি করে ১০ তলা ভবন তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। একেনেকে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলো হচ্ছে, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত নতুন ডুয়েলগেজ রেল লাইন নির্মাণ, এটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৫৭৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এছাড়া, ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধিত), এই প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৩৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এক থেকে পাঁচ নম্বর জোনের অভ্যন্তরীণ রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাথ নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাথ নির্মাণ ও উন্নয়নসহ সড়কের নিরাপত্তা প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৬৯৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ডিজিএফআইয়ের টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি অবকাঠামো, মানবসম্পদ এবং কারিগরি সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৭২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ডিজিএফআই এনালগ পদ্ধতিতে চলছে উল্লেখ করে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, তাদের ডিজিটাল করতেই ডিজিএফআই শক্তিশালীকরণ প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ফেসবুকে অনেক খারাপ এ্যাপসও আছে। কিভাবে আগামী প্রজন্ম এসব হজম করবে জানি না। ফেসবুকে অনেক গুজব ছড়ানো হয়। এজন্য আইন করা হয়েছে। সেই আইন বাস্তবায়নে ডিজিএফআইকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। এতে সাইবার অপরাধ ও জঙ্গীবাদসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম কমে আসবে বলে আশা করছি। এছাড়াও মাদানী এভিনিউ থেকে বালু নদী পর্যন্ত মেজর রোড প্রশস্তকরণ এবং বালু নদী থেকে শীতলক্ষ্যা নদী পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ (প্রথম পর্ব) প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৫৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
×