ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের বড় বাজার হবে রাশিয়া

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৩১ অক্টোবর ২০১৮

বাংলাদেশের বড় বাজার হবে রাশিয়া

এম শাহজাহান ॥ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধার আওতায় বাংলাদেশী পণ্যের বড় বাজার হতে যাচ্ছে রাশিয়া। সরাসরি ঋণপত্রের (এলসি) মাধ্যমে পণ্য রফতানির লক্ষ্যে রুশ ফেডারেশনের ব্যাংকসমূহের সঙ্গে লেনদেনের সুযোগ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এছাড়া বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে যৌথ বাণিজ্য কমিশন গঠন করা হবে। এসব উদ্যোগের ফলে কমনওয়েলথভুক্ত স্বাধীন ১২টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, বাংলাদেশ ও রুশ ফেডারেশনের ব্যাংকসমূহের মধ্যে সরাসরি লেনদেনের কোন সুযোগ নেই। এ কারণে যে কোন পণ্যসামগ্রী ইউরোপীয় ইউনিয়ন তথা তৃতীয় কোন দেশের মাধ্যমে রফতানি করতে হয়। এর ফলে দীর্ঘসূত্রতা ও রফতানিতে আর্থিক ঝুঁকিসহ নানাবিধ সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিনের এই সঙ্কট উত্তরণে এবার বাংলাদেশ ও রুশ ফেডারেশনের মধ্যে বেশকিছু চুক্তি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় রাশিয়ার বাজার উন্মুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়-দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি সহায়তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে মস্কোতে অবস্থান করছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রফতানি) তপন কান্তি ঘোষ এ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে রয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তপন কান্তি ঘোষ ঢাকা ছাড়ার আগে জনকণ্ঠকে বলেন, ব্যাংকিং সমস্যা সমাধানে গত সেপ্টেম্বর মাসে মস্কোয় রাশিয়ান ফেডারেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। ওই সময় ব্যাংকিং সমস্যা সমাধানে তারা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। রুশ শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ থেকে পণ্য তালিকা পেলে ওই সকল পণ্যের রাশিয়ার বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া যায় কিনা-তা পরীক্ষা করে দেখবে বলে জানিয়েছে। এছাড়া সরাসরি লেনদেনে ব্যাংকের সমস্যা সমাধানে এবারের সভায় বেশ কিছু অগ্রগতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর রাশিয়ার বড় অঙ্কের বিনিয়োগ আসতে শুরু করেছে বাংলাদেশে। পারমাণবিক বিদ্যুতসহ জ্বালানি খাত উন্নয়ন ও গ্যাস অনুসন্ধানে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে রাশিয়া। এছাড়া দেশটিতে পণ্য রফতানিও বেড়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়া বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি করতে আগ্রহী রাশিয়া। এছাড়া কমিশন গঠনের সপক্ষে অনুরোধ জানিয়ে কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেনডেন্ট স্টেটস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (সিআইএস-বিসিসিআই) ইতোপূর্বে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয়। একইভাবে রাশিয়ার পক্ষ থেকেও এ ধরনের একটি কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। জানা গেছে, ইতোমধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রসহ আরও কয়েকটি বড় প্রকল্পে রাশিয়া বিনিয়োগ করেছে। বিনিয়োগ ও বাণিজ্য আছে এ রকম ২০টি দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কমিশন গঠন করেছে রাশিয়া। দেশগুলো হলো-ভারত, চীন, ইতালি, বুলগেরিয়া, ফ্রান্স, স্পেন, উজবেকিস্তান, কিরঘিজস্তান, কাজাকিস্তান, কিউবা, অস্ট্রিয়া, ইরান, লিথুয়ানিয়া, সুইজারল্যান্ড, সাইপ্রাস, লুক্সেমবার্গ, চেক প্রজাতন্ত্র, সেøাভাকিয়া, এঙ্গোলা ও ইকুয়েডর। সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশ ও রাশিয়া তথা সিআইএসভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ বাণিজ্য কমিশন গঠন করা অপরিহার্য হয়ে পড়ছে। রাশিয়া বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতামূলক যৌথ কমিশন গঠনের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক কার্যক্রম পারচালনা করে থাকে। এরই আলোকে রাশিয়া সরকারের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের উদ্দেশে যৌথ কমিশন গঠনের প্রস্তাব বাংলাদেশ সরকারের বরাবরে বিগত কয়েক বছর আগে প্রেরণ করা হয়। জানা গেছে, রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য তেমন বড় নয়। দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ১০০ কোটি ডলারেরও কম। তবে বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি ব্যবসায়িক সম্পর্কও জোরদার হচ্ছে। ২০১২ সালে বাংলাদেশের ১০টি গ্যাসক্ষেত্রে কূপ খননের দায়িত্ব পেয়েছে রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রম। ইতির্পূর্বে ২০১৩ সালে প্রথম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মস্কো সফর করেন। ওই সময় ১০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের পাশাপাশি রূপপুর পরমাণু বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তিও করা হয়। রাশিয়ার মস্কোতে অনুষ্ঠিতব্য সভায় প্রস্তাব উপস্থাপনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো, বিএফটিআই, এফবিসিসিআই, ডিসিসিআই, এমসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেন্টেন্ড স্ট্যাটিস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে গত বছরের জুনে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ রাশিয়ার পিটার্সবার্গে রাশিয়ান ফেডারেশনের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী ডেনিস ভেলেনটিনোভিস মানটুরোভের সঙ্গে অনুষ্ঠিত একান্ত বৈঠকে তোফায়েল আহমেদ রাশিয়ার কাছে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) চেয়ে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, রাশিয়া জিএসপি দিলে উভয় দেশই লাভবান হবে। পোশাকসহ কৃষিপণ্যের বড় বাজার হতে পারে রাশিয়া ॥ তৈরি পোশাকসহ কৃষিপণ্যের বড় বাজার হতে পারে রাশিয়া। রফতানি আয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প। তৈরি পোশাক খাত থেকে আয় হয় প্রায় ৮৪ শতাংশ। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ইউরোপ। তবে দেশের তৈরি পোশাকের সম্ভাবনাময় একটি বিশাল বাজার হতে পারে রাশিয়া। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পোশাক আমদানিকারক দেশ রাশিয়া। এখানকার পোশাক বাজারের বর্তমানে একটা বিরাট অংশ দখল করে আছে চীন। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে তুরস্ক। হাঙ্গেরিভিত্তিক ওয়াই কনসালটিং এ্যানালিস্ট নামের প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক এক জরিপে বলা হয়, রাশিয়ায় পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম যৌথভাবে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে।
×